কলকাতা, 11 মে : নিরলস সাহিত্যচর্চা এবং কবিতার জন্য তাঁর অবদানের জন্য সোমবার রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করেছে বাংলা আকাদেমি ৷ যার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই আকাদেমি'র দেওয়া 'অন্নদাশঙ্কর রায় স্মারক সম্মান' ফিরিয়েছেন গবেষক ও সাহিত্যিক রত্না রশীদ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া পুরস্কারের সিদ্ধান্তকে তিনি 'ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত' ও বাংলা সাহিত্যের সত্যিকারের নিরলস চর্চায় রত সমস্ত মানুষকে অপমান বলে ব্যাখ্যা করেছেন (Debangshu Bhattacharya slams Ratna Rashid Bandopadhyay for her protest) ৷
তারপরেই রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্যর কটাক্ষের মুখে পড়লেন ঘোষিত বামপন্থী এই লেখিকা, গবেষক ৷ রত্না রশীদ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা একটি খোলা চিঠি নিজের সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন দেবাংশু ৷ টিম সত্যালাপের পক্ষ থেকে লেখা ওই চিঠির প্রতিটি ছত্রে কটাক্ষে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে লেখিকাকে ৷ চিঠিতে লেখা হয়েছে, "মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের প্রত্যেকটি বই'ই বেস্টসেলার ৷ আপনার বন্ধুবৃত্তের নব্বই ভাগ লোকই আপনার একটা বইয়ের নামও মনে করতে পারবেন না ।" চকবন্দীর চরাচরের লেখিকাকে বলা হয়েছে, ‘অন্তত ছাপ ফেলা বা মনে রাখার মতো কিছু লিখুন যাতে পুরস্কার ফেরাবার বিতর্কের বাইরেও বাংলার মানুষ জানতে পারে, চিনতে পারে ।’
বাংলা আকাদেমির 'অন্নদাশঙ্কর রায় স্মারক সম্মান' ছাড়াও রঞ্জিত সিংহ স্মারক পুরস্কার, আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ সম্মান, কবি কঙ্কন পুরস্কার পেয়েছেন রত্না রশীদ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে মেরী বিশ্বাস ৷ একাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ, মুসলমান বিয়ের গান, গল্প, কবিতা লিখেছেন তিনি ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবিতা বিতান’-এর কবিতাগুলিকে যে শিশুসাহিত্যের আঙিনায় ফেলে খোদ অন্নদাশঙ্কর রায়ের সঙ্গে তুলনা টেনেছেন দেবাংশু, সেই শিশুসাহিত্যেও একাধিক লেখা রয়েছে রত্না রশীদের ৷ ‘মেঘ পাখি সমুদ্র বন্ধুরা’ কিংবা ‘জন্মদিন’-এর 7টি খণ্ড, প্রত্যেকটিই গুণিজনদের কাছে সমাদৃত ৷
আরও পড়ুন : মমতাকে বাংলা আকাদেমি'র সম্মান প্রদান 'ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত', পুরস্কার ফেরালেন রত্না রশীদ
এহেন লেখিকা 2021 বিধানসভা ভোটের আগে যোগ দিয়েছিলেন ‘নো ভোট টু বিজেপি’ ক্যাম্পেনে ৷ সেকথায় তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছেন দেবাংশু ৷ তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় না থাকলে 2021-এ বিজেপিই আসত ৷ আপনি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে 3 দিনের ফুটেজ খাওয়ার সময় পেতেন না, ওরা কেড়ে নিত ।’’ একইসঙ্গে শাসকদলের তরুণ নেতা লেখিকাকে প্রশ্ন করেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আমলেই বাংলা সাহিত্য আকাদেমি আপনাকে একটা আস্ত পুরস্কার দিল । সিপিএম আমলে সিপিএম না করে পুরস্কার, ভাবতে পারতেন রত্নাদেবী ?’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই নিজেকে এই পুরস্কার দিলেন বলে কটাক্ষ করছে বিরোধী শিবির ৷ ঠিক কোন মাপকাঠিতে, সাহিত্য জগতে তাঁর ঠিক কোন অবদানের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেছে নিল বাংলা আকাদেমি'র মতো একটি মঞ্চ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ আকাডেমি'র এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ক্রমে জোরালো হচ্ছে ৷ প্রতিবাদের সুর এবার উঠতে শুরু করেছে বাংলার সাহিত্য জগতের মধ্যে থেকেও ৷ প্রতিবাদে সাহিত্য আকাদেমি'র বাংলা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লেখক অনাদিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Anadiranjan Biswas Resigns from Sahitya Akademi Post) ৷