কলকাতা, 25 জুন : অনেকটা ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্বের মতো ৷ যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ঠিক যেভাবে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ডাইনোসররা ৷ হয়তো বা সেভাবেই গতির সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে এক সময় শহর থেকে হারিয়ে যাবে ট্রাম ৷ তার সঙ্গে শহরের ঐতিহ্যও ৷ সম্প্রতি মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কথায় এই রকম ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে ৷ শহরে ব্যস্ততম রাস্তা থেকে ট্রাম তুলে দিয়ে হেরিটেজ হিসাবে কয়েকটি জায়গায় চালানো হবে ট্রাম (Kolkata Tram Service) ৷ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না বামনেতা নেতা সুজন চক্রবর্তী ও বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷
সম্প্রতি পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, রাস্তার মাঝখান দিয়ে ট্রাম গেলে যানজটের সৃষ্টি হয় । উদাহরণস্বরূপ তিনি চিৎপুর রোডের কথা উল্লেখ করেন । ট্রামের জন্য ওই এলাকায় বাস, গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকছে অনেকক্ষণ ধরে । তাই খিদিরপুর-ধর্মতলার মতো কয়েকটি রুটে ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসাবে ট্রাম চালানো হবে । বাকি রাস্তাগুলি যেখান দিয়ে ট্রাম গেলে যানজট তৈরি হচ্ছে, সেখান থেকে বিদায় নেবে ট্রাম চলাচল ৷ স্বভাবত মন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিমের এই মন্তব্যে আহত তিলোত্তমার ট্রাম প্রেমীরা ।
ট্রাম গবেষক তথা প্রেমী অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "একটা বিষয় ভাবলে আমার খুব আশ্চর্য লাগে, পরিবহণ দফতরের মন্ত্রীর পরেও তো আরও অনেক আমলা ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা রয়েছেন । কেউই ট্রামের উপকারিতা বা উপযোগিতা সম্বন্ধে কথা বলছেন না । সারা পৃথিবীতে ট্রাম ফিরে আসছে এবং এতগুলি শহরে ট্রাম পুরোদমে গণপরিবহণের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ৷ দেশের মধ্যে কলকাতাই একমাত্র শহর, যেখানে ট্রাম চলে ৷ এখান থেকে ট্রামকে তুলে দিয়ে শুধুমাত্র হেরিটেজ হিসেবে দু-একটি রুটে চালু রাখার কথা বলছেন মন্ত্রী ।"
ট্রাম তুলে দেওয়া নিয়ে ফিরহাদ হাকিমের সমালোচনা করে প্রবীণ বামনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "সারা বিশ্বে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার চেষ্টা চলছে, আন্দোলন হচ্ছে ৷ ঠিক তখনই আমাদের শহর থেকে পরিবেশবান্ধব যান ট্রামকে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে । দেশের মধ্যে শুধু শহর কলকাতায় ট্রাম চলে এবং তা প্রায় দেড়শো বছরের একটা ঐতিহ্যও ।" তিনি তৃণমূল সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জানান, এই ঐতিহ্য বজায় রাখার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কোনও আগ্রহ নেই । ঠিক একইভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখারও উদ্যোগ বা আগ্রহ নেই । বামনেতার অভিযোগ, "ট্রামের জায়গাকে বেচে দিচ্ছে সরকার । যাতে ট্রামের জমি বিক্রি না হয়, তা নিয়ে অনেকবার প্রতিবাদ করা হয়েছে, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি । এই বিক্রির টাকা লেনদেন হবেই ।"
আরও পড়ুুন : দেড়শো বছর পূর্তির প্রাক্কালে কলকাতার ট্রাম নিয়ে আশঙ্কা মেয়রের গলায়
শুধু বামেরাই নয় বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও । তিনি বলেন, "ট্রাম শহর কলকাতা জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত । ট্রাম আমাদের রাজ্যের ঐতিহ্য । তাই স্বাভাবিকভাবে এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য কলকাতা পৌরনিগম এবং পরিবহণ দফতরকে আরও বেশি সংবেদনশীল হতে হবে । ট্রামকে আরও উজ্জীবিত এবং জনপ্রিয় করতে কী কী করা উচিত, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের ভাবা প্রয়োজন ।"