কলকাতা, 1 নভেম্বর: জোটের প্রশ্নে ফের কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । বিজেপিকে হটাতে যে চটজলদি সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, কংগ্রেসের তা নেই বলে মন্তব্য করলেন তিনি । শুধু তাই নয়, নাম না করে রাহুল গান্ধিকেও বিঁধলেন মমতা । গোয়ায় শুধু তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হল, দলের ব্যানারে কালি লাগানো হল, অথচ রাহুলকে কোনও রকম বিরোধিতায় পড়তে হল না কেন, প্রশ্ন তুললেন তিনি । মুখে বিরোধিতা করলেও, তলে তলে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে আঁতাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করলেন তৃণমূল নেত্রী ।
সোমবার জানবাজারে কালীপুজোর উদ্বোধন করেন মমতা । সেখান থেকেই কংগ্রেসকে একহাত নেন তিনি ৷ বলন, ‘‘কংগ্রেস যতই ফোঁস-ফাঁস করুক. বাংলায় আমাদের বিরুদ্ধে সব আসনে লড়বে, আর আমরা অন্য জায়গায় ওদের সমর্থন করে চলব ! কী করে আশা করে ? সব জায়গায় একই নীতি খাটবে, আলাদা নয় ৷ এক সময় কংগ্রেস করতাম ৷ কেন ছেড়ে চলে এসেছিলাম জানেন ৷ কারণ ওরা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ৷ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ! অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি ৷ মানুষ আমাদের সাহায্য করেছেন ৷ মানুষের সাহায্যে পরপর তিনবার সরকার গড়তে পেরেছি ৷’’
2024-এর লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী জোট নিয়েই এই মুহূর্তে কংগ্রেসের উপর চটে রয়েছে তৃণমূল ৷ তাদের দাবি, হাতে সময় থাকতে জোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বারবার কংগ্রেস নেতৃত্বকে আর্জি জানানো হয়েছে ৷ কিন্তু ঢিলেমি করেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছে কংগ্রেস ৷ তাই তাদের উপর ভরসা না করে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন মমতা ৷ ত্রিপুরা এবং গোয়ায় দলের তরফে তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ এমন পরিস্থিতিতে মমতার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷ মূল শত্রু কে, বিজেপি না কংগ্রেস, তা নিয়ে অহরহ তৃণমূলকে বিঁধে চলেছেন তাঁরা ৷ অতীতে কেন্দ্রে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর কথাও তৃণমূলকে বার বার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: বিজেপির ভিতরেই বিশ্বাসঘাতক, দলে ভাঙন নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ
এদিন তা নিয়েও মুখ খোলেন মমতা ৷ তাঁর কথায়, ‘‘এখানে কংগ্রেসকে সাহায্যই করেছিলাম আমরা ৷ সরকার গড়ার পর একসঙ্গে কাজ করতেও ডেকেছিলাম ৷ কিন্তু মাঝপথে ওরাই হাত ছেড়ে চলে যায় ৷ রোজ রোজ গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছিল বলেই ইউপিএ ছেড়েছিলাম ৷ কাউকে না কাউকে, কখনও তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে ! আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাই পদত্যাগ করে চলে আসি ৷ ওরা পারে না ৷ তাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু সিপিএমের হাত ধরে ৷ ন্যূনতম প্রকল্পের আওতায় আমরা এনডিএয়ের সঙ্গে সরকার গড়েছিলাম ৷ কিন্তু বলে রেখেছিলাম, অন্য ধর্মকে আঘাত করা যাবে না ৷’’
সিদ্ধান্তহীনতার পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা ৷ সম্প্রতি তিনি গোয়ায় থাকাকালীনই সেখানে দলের হয়ে প্রচারে যান রাহুল ৷ সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেস কোনও লড়াই করেছে ? শুধু নির্বাচন এলে বড় বড় কথা ৷ সব জায়গায় যেতে বাধ্য হচ্ছি আমরা ৷ কারণ কংগ্রেসের উপর নির্ভর করা যাবে না ৷ ওরা আপস করে, আমরা করি না ৷ মরে গেলেও বিজেপিকে শক্তি বাড়াতে দেব না আমরা ৷ আসলে সমাজে দু’ধরনের মানুষ হয়, না খেতে পেলেও মাথা নীচু করে না এক দল ৷ বরাভয়, নির্ভয় ৷ এদের সাহসী বলে ৷ আর এক ধরনের মানুষ থাকে, যারা ইহা-উহা দু’দিকেই আছে ৷ উপর উপর বিরোধিতা ৷ ভিতরে ভিতরে বোঝাপড়া ৷ তাই বছরের পর বছর বিজেপিকে ছেড়ে গিয়েছে কংগ্রেস ৷ তাই আমাদের ছুটতে হচ্ছে ৷’’
গোয়া সফরের প্রসঙ্গ টেনে নাম না করে রাহুলকে বিঁধে মমতা বলেন, ‘‘যারা পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসের দাম বাড়ায়, ত্রিপুরায় গেলে মাথা ফাটায়, অসম-উত্তরপ্রদেশে ঢুকতে দেয় না, তাদের বিদায় দিতে হবে ৷ গোয়ায় আমাকে কালো পতাকা দেখাচ্ছিল ৷ আমাদের ব্যানার ছিড়ে দিয়েছিল, কালি মাখিয়েছিল ৷ আমাকে দেখে গো ব্যাক স্লোগানও দিচ্ছিল কয়েক জন ৷ আমি কিন্তু নমস্কার জানিয়েছি ৷ আর মনে মনে বলেছি, আমি যাব না, তোমাদের বিদায় দেব ৷ একটি বাজারের কাছে কয়েক জন মূর্তিমান দাঁড়িয়েছিল ৷ আমাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাবে বলে পুলিশ গাড়ি ঘোরাতে চাইছিল ৷ কিন্তু আমি ঘোরাতে দিইনি ৷ অথচ অন্য এক নেতা বিরাট কনভয় নিয়ে ওই সময়ই গোয়া গেলেন ৷ তাঁকে ঘিরে কোনও বিক্ষোভ হল না ৷ কোনও কালো পতাকা দেখানো হল না তাঁকে ৷’’
আরও পড়ুন: NJP Clash : ট্রাক সিন্ডিকেটের দখল নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, উত্তপ্ত এনজেপি
কালীপুজোর মঞ্চ থেকে এদিন শান্তি এবং সম্প্রীতির বার্তাও দেন মমতা ৷ মমতার কথায়, ‘‘উৎসবের দিনে সমস্ত মিথ্যার অবসান ঘটুক ৷ যারা কুৎসা রটায়, অপপ্রচার করে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক ৷ রক্ত নিয়ে দোল খেলা বন্ধ হোক ৷ শান্তি, সম্প্রীতি এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ের নীতি নিয়ে যেন চলতে পারি আমরা ৷ আর সেই পথেই এগোব ৷’’