কলকাতা, 10সেপ্টেম্বর : চূড়ান্ত সেমেস্টারের পড়ুয়াদের মূল্যায়ণ প্রক্রিয়ায় হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নপত্র পাঠানো বা উত্তরপত্র জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । সেই সিদ্ধান্তেই আপত্তি জানালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজগুলির অধ্যক্ষরা ।
গতকাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ 150টি কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন । পরীক্ষা পদ্ধতির খুঁটিনাটি নিয়েই আলোচনা হয় বৈঠকে । সহ-উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায়ও বৈঠকে ছিলেন ।
1 থেকে 18 অক্টোবরের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা হবে । 31অক্টোবরের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । কোরোনা আবহে এই বছর বাড়ি বসেই পরীক্ষা দেবেন চূড়ান্ত সেমেস্টারের পড়ুয়ারা । ডিজিটাল মাধ্যমে তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে প্রশ্নপত্র । পরীক্ষার্থীরা সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ই-মেলে বা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিতে পারবেন । যাঁরা এই মাধ্যমে পাঠাতে পারবেন না তাঁরা সংশ্লিষ্ট কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উত্তরপত্র জমা করে দিয়ে যেতে পারবেন ।
প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর থেকে অনলাইন ও অফলাইন, দু’টি মাধ্যমেই উত্তরপত্র জমা দেওয়ার জন্য 24ঘন্টা সময় দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল । সেই ঘোষণা নিয়েই আপত্তি জানিয়েছিলেন বিভিন্ন অধীনস্থ কলেজের অধ্যক্ষরা । প্রশ্নপত্র পাঠানো বা উত্তরপত্র জমা নেওয়া দু’টি ক্ষেত্রেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে আপত্তি জানান তাঁরা ।
বাসন্তী দেবী কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রিলা গুহ বলেন, "অধ্যক্ষদের তরফে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে আপত্তি জানানো হয়েছে । আমাদের প্রধান আপত্তি হোয়াটসঅ্যাপ নিয়েই ছিল । প্রশ্নপত্র পাঠানো এবং উত্তরপত্র জমা দেওয়া দুই ক্ষেত্রেই । উপাচার্য সব শুনেছেন । তিনি এবার বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে আমাদের জানাবেন ।"
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজ পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে প্রধানত আলোচনা হয়েছে । প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হবে এই কথা কখনও বলিনি । আমরা বলেছি, অধ্যক্ষের ই-মেল বা তাঁর অফিশিয়াল ই-মেলে প্রশ্নপত্রগুলি পাঠাব ।পড়ুয়ারা তার উত্তর বিভিন্ন মাধ্যমে লিখে পাঠাতে পারেন । হার্ডকপিতে লিখে স্ক্যান করে ই-মেল করতে পারেন বা ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে পারেন ।
তবে, উত্তরপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার চাইছেন না অধ্যক্ষরা । তাঁদের বক্তব্য, সাধারণত কলা বিভাগের একজন পড়ুয়াকে 70পাতার মতো উত্তর লিখতে হয় । এতগুলো পাতা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো ও সেগুলো ডাউনলোড করে মূল্যায়ণ করাও কষ্টসাধ্য কাজ । দুটি পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে । প্রথমত, ই-মেলের মাধ্যমে । দ্বিতীয়ত, পরীক্ষার কিছু সময় আগে কলেজের ওয়েবসাইটে প্রশ্নপত্র আপলোড করে দেওয়া যেতে পারে । যেখান থেকে পড়ুয়ারা প্রশ্নপত্র দেখে বা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন ।
বৈঠকে বেশিরভাগ কলেজই ওয়েবসাইটে প্রশ্নপত্র আপলোড করে দেওয়া ও ই-মেলের মাধ্যমে উত্তরপত্র জমা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে বলে সূত্রের খবর ।
পরীক্ষা ও তারপরে মূল্যায়ন করে নম্বর জমা দেওয়ার জন্য চলতি বছর সময় খুব কম । সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কলেজ পুরোটা মূল্যায়ন করবে এবং 18 তারিখের মধ্যে তা জমা দেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ।
কিন্তু খুবই কম সময় পাচ্ছে কলেজগুলি । তা নিয়েও বৈঠকে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন অধ্যক্ষরা । এই বিষয়ে ইন্দ্রিলা গুহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ঠিক করা হয়েছে । এখানে আমাদের এখানে কিছু বলার নেই ।
সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, "আমাদের একটু চিন্তা আছে কারণ, উত্তরপত্র কলেজকেই মূল্যায়ণ করতে হবে । সেক্ষেত্রে কীভাবে তা সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হয় সেগুলি দেখতে হবে । আমাদের পরীক্ষাও নিতে হবে, খাতাও মূল্যায়ণ করতে হবে এবং রেজ়াল্টও আপলোড করে দিতে হবে । আমরা ভেবেছি ওই সময় কলেজ খুলে রাখব । অধ্যাপকরা চাইলে কলেজে এসে হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যবহার করে দ্রুত কাজটি করতে পারবেন ।"
বৈঠকে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যক্ষরা । ইন্দ্রনীল কর জানান, প্রশ্নপত্র মডারেট করার জন্য বলা হয়েছে । যাতে উত্তরগুলি ছোটো হয়, সেই ধরনের প্রশ্ন বেশি থাকে । আবার ই-মেল বা অন্য কোনও প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উত্তরপত্র আসার পর সেগুলি প্রিন্ট আউট করে মূল্যায়ণ করতেও অনেকটা সময় লেগে যাবে । সেক্ষেত্রে সফ্টকপিতেই মূল্যায়ণ করতে বলা হয়েছে কলেজগুলিকে । পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে বলেও আজ জানানো হয়েছে ।