কলকাতা, 7 জুলাই : নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল পুনর্গণনা সংক্রান্ত মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ ৷ মামলাকারী তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন করেছিলেন যে, বিচারপতি কৌশিক চন্দ যেন এই মামলাটি থেকে সরে দাঁড়ান ৷ সেই আবেদন মেনে নিয়ে আজ নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল পুনর্গণনা সংক্রান্ত মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি ৷ পাশাপাশি, একজন বিচারপতির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 5 লাখ টাকা জরিমানা করেছেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ ৷
প্রসঙ্গত, আইনজীবী থাকাকালীন বিজেপির হয়ে একাধিক মামলা লড়েছিলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ ৷ সেই কৌশিক চন্দের বেঞ্চেই নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের মামলা শুনানির জন্য যায় ৷ যা নিয়ে তৃণমূলের তরফে প্রবল আপত্তি জানানো হয় ৷ বলা হয় বিচারপতি চন্দ এই মামলার শুনানি করলে, সেখানে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে ৷ কারণ মামলাকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপক্ষে যিনি রয়েছেন, সেই শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি নেতা ৷ এমনকি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ ৷
যার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আইনজীবী সঞ্জয় বসুর মাধ্যমে বিচারপতি কৌশিক চন্দকে এই মামলা থেকে সরে যেতে আবেদন করেছিলেন ৷ সেই আবেদন মেনে নিয়ে এদিন নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল পুনর্গণনা সংক্রান্ত মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন তিনি ৷ এদিন নিজেকে মামলার শুনানি থেকে সরিয়ে নেওয়ার আগে কৌশিক চন্দ মামলাকারীর সমালোচনা করেন ৷ তিনি জানান, বেঞ্চ নিয়ে আপত্তি থাকলে প্রথম যেদিন মামলা শুনানির জন্য উঠেছিল তাঁর বেঞ্চে, সেদিন কেন আপত্তি জানাননি মামলাকারীর আইনজীবী ? পাশাপাশি একজন আইনজীবী হিসেবে প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধরনের মামলা লড়েন ৷ সেখানে রাজনৈতিক দলের মামলাও থাকে ৷ কিন্তু, একজন আইনজীবী থেকে বিচারপতি হয়ে গেলে তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে এভাবে প্রশ্ন তোলা যায় না ৷ কারণ বিচারপতি হওয়ার আগে তাঁকে অনেকগুলি সাংবিধানিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে । তাই এখন তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সেটা আসলে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সমান বলে এদিন জানান তিনি । তাই তিনি নন্দীগ্রাম বিধানসভা ভোটের ফলাফল পুনর্গণনার মামলা আর শুনতে চান না বলে জানিয়ে দেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ ৷
আরও পড়ুন : ময়নার নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে মামলা গ্রহণ করল কলকাতা হাইকোর্ট
কিন্তু, মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেও, একজন বিচারপতির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 5 লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ৷ জরিমানার ওই টাকা রাজ্য বার কাউন্সিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ৷ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, জরিমানার ওই টাকা দুস্থ মানুষের কাজে ব্যবহার করবে বার কাউন্সিল ৷ বিচারপতি কৌশিক চন্দ সরে দাঁড়ানোয় নন্দীগ্রাম মামলাটি ফের প্রধান বিচারপতির তত্ত্বাবধানে চলে গিয়েছে ৷ নতুন করে এই মামলাটি কোন বিচারপতির বেঞ্চে যাবে, তা নির্ভর করছে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের উপর ৷
আরও পড়ুন : Nandigram Election Petition : নন্দীগ্রাম মামলা কৌশিক চন্দের বেঞ্চে নয়, আবেদন মমতার আইনজীবীর
অন্যদিকে, বিচারপতি কৌশিক চন্দ এখনও কলকাতা হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হননি ৷ কারণ, কাউকে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি করতে গেলে, রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রীর মতামত সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ৷ কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই মতামতে বিচারপতি কৌশিক চন্দকে স্থায়ী করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন ৷ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী ৷ সেখানে এই বিষয়টিকে তুলে ধরে নন্দীগ্রাম বিধানসভার শুনানিতে কৌশিক চন্দের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী ৷ কিন্তু, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল সেই চিঠির কোনও জবাব দেননি ৷ যার পরে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় আইনজীবী মারফত বিচারপতি কৌশিক চন্দের কাছেই মামলা থেকে সরে যেতে অনুরোধ জানান ৷ যে চিঠি নিয়ে গত 24 জুন শুনানির সময় ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন কৌশিক চন্দ ৷ পাশাপাশি বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের এই মতামত প্রকাশের বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয় বিষয় ৷ আর সেই বিষয়টিকে এভাবে প্রকাশ্যে নিয়ে আসাটা ভালভাবে নেননি বিচারপতি কৌশিক চন্দ ৷ 24 জুনের শুনানির দিন তিনি এ নিয়ে বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী একজন সাংবিধানিক প্রধান ৷ তাই তাঁর কাছ থেকে এই বিষয়টি আরও একটু দায়বদ্ধতা আশা করেছিলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ ৷ আর আজকে কার্যত সেই ক্ষোভের কারণে, নিজে থেকেই নন্দীগ্রাম বিধানসভার ফলাফল পুনর্গণনা সংক্রান্ত মামলা থেকে সরে গেলেন তিনি ৷