কলকাতা, 11 নভেম্বর: কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনে প্রতীকী শোভাযাত্রা বের করার অনুমতি দিল হাইকোর্ট ৷ তবে তার জন্য নিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ৷ জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনে অল্পসংখ্যক লোক নিয়ে ঐতিহ্যশালী ‘সাং’ শোভাযাত্রা করতে পারবেন কৃষ্ণনগরের পুজো উদ্যোক্তারা ৷ তবে তার আগে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে ৷ বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
প্রশাসনের কাছে অনুমতি মিললে তবেই করোনাবিধি মেনে শোভাযাত্রা করতে পারবেন পুজো উদ্যোক্তারা ৷ এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই নির্দেশ দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নতুন করে অবনতি হওয়ায় প্রশাসন পুজো করার অনুমতি দিলেও বিসর্জনে ‘সাং’ শোভাযাত্রায় অনুমতি দেয়নি ৷ কিন্তু সেই কারণে জরুরি ভিত্তিতে বুধবার প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কৃষ্ণনগরের পুজো উদ্যোক্তারা। তারই ভিত্তিতে এদিন এই নির্দেশ দেয় আদালত ৷ কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো আগামী শনিবার ৷ কৃষ্ণনগরে প্রায় 200টি-র মতো পুজো হয় ৷
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিশেষ রীতি হচ্ছে বিসর্জনের সময় ‘সাং’ শোভাযাত্রা ৷ যা ওই অঞ্চলের একটা ঐতিহ্য। 70-80 জন বেহারা-সহ হাজার হাজার দর্শনার্থী এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। সাংয়ে করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটে ৷ পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা সমস্ত রকম করোনা বিধি মেনে অর্থাৎ মাস্ক পরে ও স্যানিটাইজার নিয়েই এই শোভাযাত্রা করবে ৷ কিন্তু প্রশাসন তাতে সম্মতি দেয়নি ৷ বাধ্য হয়ে আজ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা ৷
এদিন মামলার শুনানিতে মামলাকারীর তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও কমলেশ সাহা বলেন, ‘‘বিসর্জনের শোভাযাত্রা কৃষ্ণনগরের সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্য ৷ এর সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ৷ সংক্রমণের হার রাজ্যে যথেষ্ট কম। এই পরিস্থিতিতে অল্পসংখ্যক ব্যক্তি নিয়েও যাতে এই শোভাযাত্রা করা যায় তার অনুমতি দিক প্রশাসন।’’ বিকাশবাবু আরও বলেন, "দুর্গাপুজোয় সমস্ত রকমের নিয়ম-নীতি লংঘন করা হয় আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও। আর কৃষ্ণনগরবাসীর কাছে জগদ্ধাত্রী পুজো এই শোভাযাত্রা একটা আবেগের বিষয়। একটা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। স্বল্পসংখ্যক লোকজন নিয়ে করোনা বিধি মেনে এই শোভাযাত্রা করার নির্দেশ দিক আদালত ৷"
আরও পড়ুন : জগদ্ধাত্রী নিরঞ্জনে সাং শোভাযাত্রা বন্ধের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে কৃষ্ণনগরের পুজো উদ্যোক্তারা
তবে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "করোনা পরিস্থিতিতে একবার এই শোভাযাত্রা করার অনুমতি দিলে তা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এই শোভাযাত্রার সঙ্গে সাধারণ মানুষের আবেগ জড়িত আছে ঠিকই । কিন্তু গত বছর যেমন শোভাযাত্রা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি, চলতি বছরেও করোনাবিধি মেনে পুজোটা যাতে করতে পারে সেই অনুমতি প্রশাসন দিয়েছে। শোভাযাত্রায় অনুমতি দিলে দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ৷ রাজ্যে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে ৷" দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি নির্দেশে জানান, আদালত প্রতীকী শোভাযাত্রার অনুমতি দিচ্ছে ৷ স্বল্পসংখ্যক লোক নিয়ে যাতে এই প্রথা পালন করতে পারে সাধারণ মানুষ, আদালত সেই ব্যাপারে সম্মতি দিচ্ছে ৷ তবে তার জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে পুজো উদ্যোক্তাদের।