কলকাতা, 2 জুন : চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে কোনও বাধা রইল না তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ৷ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট অভিষেকের বিদেশযাত্রায় অনুমতি দিয়েছে (Calcutta HC Allows Abhishek Banerjee to travel Abroad for Treatment) ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গরু (Cattle Smuggling Case) ও কয়লাপাচার কাণ্ডে (Coal Smuggling Case) গত কয়েকমাসে বারবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির (ED) জেরার মুখে পড়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সম্প্রতি ইডি তাঁর বিদেশযাত্রা নিয়ে আপত্তি তোলে ৷ যদিও অভিষেকের দাবি, তিনি চিকিৎসার জন্য দুবাই যেতে চান ৷
সেই কারণে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয়েছিলেন ৷ শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে যে অভিষেকের বিদেশযাত্রায় কোনও বাধা নেই ৷ আদালত ডায়মন্ড হারবারের সাংসদকে 2-10 জুন বিদেশে থাকার অনুমতি দিয়েছে ৷ একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে যে বিদেশে যাওয়া-আসার বিমানের টিকিট, বিদেশে কোন হোটেলে থাকবেন আর বিদেশে চিকিৎসার সব নথি ইডির কাছে জমা দিতে হবে অভিষেককে ৷
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে ইডির হয়ে মামলা লড়েন অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেল এমভি রাজু ৷ অন্যদিকে অভিষেকের আইনজীবী ছিলেন সপ্তর্ষি বসু ৷ শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর বেঞ্চে ৷
সেখানে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল দাবি করেন, দ্রুততার সঙ্গে এই মামলা শোনার প্রয়োজনীয়তা নেই ৷ তিনি অভিষেকের আবেদনে ত্রুটির কথাও উল্লেখ করেন ৷ তাছাড়া জানান, 48 ঘণ্টা আগে নোটিশ দেওয়া হয়নি ।
তখন অভিষেকের আইনজীবী সপ্তর্ষি বসু জানান, আগামী 3 তারিখ অভিষেকের ডাক্তার চেক আপের কথা রয়েছে । বিদেশে যাওয়ার কথা রয়েছে । 10 নভেম্বর 2020-তে অভিষেককে সমন দেওয়া হয়েছিল । তিনি (অভিষেক) আবেদন জানিয়েছিলেন কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য । তারপর দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করতে হয় ৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো ইডির সামনে হাজির হতে অভিষেকের কোনও আপত্তি নেই ৷ তার পরও বিদেশযাত্রায় আপত্তি তুলেছে ৷
এদিকে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল জানান, 14 হাজার কোটি টাকা কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ডে সাইফোনিং-এর অভিযোগ রয়েছে । দিল্লি হাইকোর্টের জুরিডিকশনে রয়েছে মামলাটি । কিন্তু অভিষেক কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন ।
তিনি আরও জানান, কী ধরনের চোখের সমস্যা, সেসব কিছু জানান হয়নি । কোন ডাক্তার জানানো হয়নি । পুরোটাই ভুয়ো ৷ বিনয় মিশ্র প্রায় 7 হাজার কোটি টাকা পাচার করার সঙ্গে যুক্ত । সে এই ভাবে দুবাই পালিয়ে গিয়েছে ।
তখন বিচারপতি জানতে চান, বিনয় মিশ্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে ? ইডির কাছে যদি তথ্য থাকে যে বিনয় মিশ্র দুবাইতে রয়েছে, তাহলে তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি ?
জবাবে রাজু দাবি করেন, 2017-2020 সাল পর্যন্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিনয় মিশ্রর সঙ্গে একাধিকবার দুবাই গিয়েছেন ৷ ইডির কাছে খবর আছে যে বিনয় এখন দুবাইতে ৷ সেখানেই অভিষেকের তার দেখা হতে পারে ৷ সেই কারণেই চোখের চিকিৎসা করতে যাওয়ার বিষয়টি সাজানো বলে মনে করছে ইডি ৷
তিনি আরও জানান, চলতি বছরের 25 ফেব্রুয়ারি দুবাই গিয়েছিলেন অভিষেক ৷ এর পর 26 মে তিনি চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পান ৷ কিন্তু তিনি যাননি ৷ তার পর 3 জুন ফের চিকিৎসকের অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে ৷ এর থেকেই ইডি মনে করছে বিষয়টি গুরুতর নয় ৷
তবে অভিষেকের তরফের আইনজীবী সপ্তর্ষি বসু জানান, তিনি সব নথি জমা দিয়েছেন ৷ কোনও নথি চেপে রাখা হয়নি ৷
সওয়াল-জবাব শেষে আদালতের তরফে জানানো হয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত নন । এর আগেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে । ইডির দিল্লি অফিসে গিয়েছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী একাধিক বার । নতুন সমন পাঠানো হয়নি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য । যদিও তাঁকে একটা চিঠি দেওয়া হয়েছিল 29 মার্চ 2022 সেই চিঠির তিনি উত্তর দিয়েছেন তিনি । ফলে তদন্তের অসুবিধা হবে বলে মনে করছে না আদালত ।
আদালত জানায়, 17 মে 2022 সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তেমন কোনও কিছু বলেনি, যেখানে অভিষেকের স্বাভাবিক চলাফেরা আটকাতে হবে ৷ এমনকী অভিষেক পালাতে পারে বলে ইডির আশঙ্কাকেও আদালত খারিজ করে দিয়েছে ৷
আদালত জানিয়েছে, জীবনের অধিকার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার । এর সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসার বিষয় । একজন ব্যাক্তিকে জোর করে আটকানো যায় না চিকিৎসার ব্যাপারে ৷ যদি তিনি বিদেশে গিয়ে ভালো চিকিৎসা পাবেন মনে করেন, রাষ্ট্র তাঁকে আটকাতে পারে না ।
আরও পড়ুন : Anubrata Mandal : ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই দফতরে হাজিরা অনুব্রতর