কলকাতা, 15 মার্চ: নিউ কয়লাঘাট ভবনের বিধ্বংসী আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন অস্থায়ী দমকলকর্মী অনিরুদ্ধ জানা । প্রাক্তনীর স্মরণে এবং সম্মানে তাঁর নামে সাহসিকতা পুরস্কার চালু করছে গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ় টাকি হাউজ়ের প্রাক্তনীদের সংগঠন ‘টিব্যাক’ (TBAAK)। পাশাপাশি, অনিরুদ্ধ জানার মৃত্যু থেকে বর্তমান পড়ুয়াদের শিক্ষা দিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনাও করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ় টাকি হাউজ়ের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ সম্পূর্ণ করেছিলেন অনিরুদ্ধ জানা । 2009 সালে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন ওই স্কুল থেকেই । প্রাক্তনীর এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর 9 মার্চ স্কুলে শোক পালন ও স্মরণসভা করা হয় কর্তৃপক্ষের তরফে । তখন থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল কীভাবে অনিরুদ্ধকে শ্রদ্ধা জানানো যায় ! এরপর টাকি হাউজের প্রাক্তনীদের সংগঠন ‘টিব্যাক’-র তরফে স্কুলের কাছে প্রস্তাব আসে, অনিরুদ্ধের নামে একটি সাহসিকতা পুরস্কার চালু করা হোক । প্রাক্তনীদের সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
‘টিব্যাক’-এর সাধারণ সম্পাদক পার্থসারথি সাহা বলেন, ‘‘আমরা স্কুলের সঙ্গে কথা বলেছি । একটা কমিটি তৈরি করা হচ্ছে । যেখানে স্কুলের প্রতিনিধিরা থাকবেন এবং আমরা প্রাক্তনীরাও থাকব। প্রতি বছর একজনের নাম এই কমিটি সুপারিশ করবে আমাদের কাছে । তাঁকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে । বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহসী মনোভাব দেখানোর জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হবে ৷ একজন ছাত্রের মাথা ফেটে গেল, তাঁর মাথায় রুমাল বেঁধে দিল আরেক ছাত্র । নিচু ক্লাসের এক পড়ুয়ার কাছে সেটাও এক ধরণের সাহসিকতা ৷ সেটা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে ৷ এই পুরস্কারের জন্য বর্তমান বা প্রাক্তনীদের মধ্যে কারোর নাম সুপারিশ করা হবে । কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রতি বছর আমরা অনিরুদ্ধের নামে একটা করে পুরস্কার দেব।’’
মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ় টাকি হাউজ়ের প্রধান শিক্ষিকা এবং ‘টিব্যাক’-এর সভাপতি স্বাগতা বসাক বলেন, ‘‘অনিরুদ্ধ তো খুবই এগিয়ে যাওয়া ছেলে । ও সব কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ত । ওর মতো ছেলেকে এত কম বয়সে খোয়ালাম, এটা খুবই বড় ক্ষতি। ওর স্মৃতিতে আমাদের কিছু করা উচিত। তাই আমরা সাহসিকতা পুরস্কারের কথা ভেবেছি। এখনও পর্যন্ত আমাদের স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যেই একজন করে বেছে নেওয়া হবে বলে ভাবা হয়েছে। তবে, আমরা ভাবছি অন্য স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যেও যদি কেউ সাহসিকতার পরিচয় দেয়, তাহলে তাঁকে সাহসিকতার পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে। এনিয়ে আলোচনা চলছে।’’
আরও পড়ুন : কেন লিফট ব্যবহার করল অনিরুদ্ধ ? উত্তর খুঁজছেন শোকসন্তপ্ত শিক্ষকরা
তবে, শুধু সাহসিকতার জন্য পুরস্কার নয়। অনিরুদ্ধর মৃত্যু থেকে শিক্ষা নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করতে ইচ্ছুক প্রাক্তনী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ । পার্থসারথি সাহা বলেন, ‘‘আমাদের আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো এখনও আলোচনার স্তরে আছে। যেমন, অনিরুদ্ধের নামে আমরা বিভিন্ন ক্যুইজ় প্রতিযোগিতা করতে পারি অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে। আবার স্কুলের বাচ্চারা অনেকেই আগুন লাগলে কী কী করতে হয় ? সে সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নয়। যেমন, আগুন লাগলে কী করবে? জল কীভাবে দেবে? বা লিফট ব্যবহার করতে নেই, এই ধরণের সচেতনতামূলক ওয়ার্কশপ করা যেতে পারে স্কুলে । আমরা মনে করি, স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবারই এই বিষয়ে জানা উচিত। আমরা এগুলো স্কুলকে প্রস্তাব দিয়েছি।’’ স্বাগতা বসাকও স্কুলে এ নিয়ে প্রশিক্ষণ চালু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ।
তবে, একটা প্রশ্ন তাঁদের সকলের মনে এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে । কেন লিফট ব্যবহার করলেন অনিরুদ্ধ এবং তাঁর সঙ্গীরা ? স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমরা পরের দিন সকালে জানতে পারি । আমরা একটা স্মরণসভা করেছিলাম । 1 মিনিটের জন্য শোক পালন করি । শিক্ষক-শিক্ষিকারা যারা ওঁকে চিনতেন, তাঁরা ওর সম্পর্কে বলেছিলেন। কিন্তু, সবকিছুকে ছাপিয়ে সবারই একই প্রশ্ন, লিফটো কেন চড়ল? ওর তো ভাবা উচিত ছিল যে লিফটে চড়ব না এখন ! এটা নিয়ে সবারই আফশোস রয়েছে। সেটা কিন্তু আমরা বাচ্চাদের মধ্যে সচেতনতার পাঠ হিসেবে দিয়েছি । ওদের বলেছি, এই স্মরণসভা থেকে তোমাদের কিছু শিক্ষা নিয়েও যেতে হবে ৷ আগুন লাগলে আটকে পড়াদের বাঁচাতে হবে। কিন্তু, নিজেকে নিরাপদে রেখে এবং বেসিক নিয়মগুলো মানতে হবে। লিফট ওই সময়ে চলার কথা নয়। চললেও তা ব্যবহার করবে কিনা সেই মুহূর্তে ভেবে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সচেতনতাটা থাকতেই হবে। সেই কারণেই আমরা একটা ট্রেনিং প্রোগ্রাম করাতে চাইছি ৷’’