বর্ধমান, সিউড়ি ও বাঁকুড়া, 14 এপ্রিল : চলছে লকডাউন । মিলছে না পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক ও অন্যান্য চাষের সামগ্রী । যেটুকু যা পাওয়া যাচ্ছে তাতেও আবার কালোবাজারির ছায়া । ফসল যা ফলেছে, মিলছে না তার সঠিক দামও । এমনই ছবি রাজ্যের ধান-বলয় বর্ধমানে । শুধুমাত্র বর্ধমান নয়, বীরভূম, বাঁকুড়াসহ বেশ কিছু জেলাতেই ছবিটা একইরকম ।
টমেটো, গাজর, পিঁয়াজ কোনওকিছুরই সঠিক দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা । তিন টাকা থেকে চার টাকা । বাঁকুড়ায় এই দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে চাষের ফসল । কিন্তু বাজারে যখন সেই ফসল উঠছে, কম করে 20 টাকা থেকে 25 টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে । লকডাউনের সমস্যার মধ্যেই আরও বেশি করে চাপ বাড়াচ্ছে আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা ।
সমস্যা শুধু দামেই নয় । বছরের এই সময়টা বাংলায় বোরো ধান চাষের সময় । লকডাউনের আগেই ধান বসানো হয়ে গেছিল । কিন্তু যে পরিচর্যার প্রয়োজন হয়, তা সম্ভব হয়ে উঠছে না । যাঁরা চাষের জমিতে কাজ করতেন, লকডাউনের কারণে তাঁদেরও দেখা নেই । ফলে টান পড়েছে চাষের কাজেও । ফলে ধানের ফলন এবার অনেকটাই কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন বাঁকুড়ার চাষিরা । এখন ভয়, মাঠের ফসল মাঠেই না নষ্ট হয় ।
বর্ধমানে এখন গ্রীষ্মের পটল, পুঁইশাক, লাউ, কুমড়ো-সহ অন্যান্য ফসলের চাষ শুরু হয়ে গেছে । বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ । এইসময় জমিতে নিয়মিতভাবে জল দেওয়ার প্রয়োজন হয় । কিন্তু লকডাউনের ফলে মিলছে না জমিতে কাজের পর্যাপ্ত লোক । লকডাউনের শুরুর দিনগুলিতে কীটনাশক ও সারের দোকান বন্ধ থাকলেও এখন সরকারি নির্দেশে দিনে দু'ঘণ্টার জন্য খোলা থাকছে দোকানগুলি ।
দোকান খোলা থাকছে ঠিকই । কিন্তু এই প্রতিকূল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কীটনাশক ও সারের ক্ষেত্রে কালোবাজারি শুরু করেছে দোকানিদের একাংশ । এমনই অভিযোগ করছেন বর্ধমানের কৃষকরা । আগামী দিনে কীটনাশক ও সারের দামের ক্ষেত্রে যদি নিয়ন্ত্রণ না আনা হয়, তাহলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে কৃষকদের ।
একই ছবি বীরভূমেও । চরমভাবে ক্ষতির মুখে চাষ । এখন বোরো ধান চাষের মরশুম । রাজ্যের মধ্যে ধান চাষে বরাবরই দ্বিতীয় স্থানে থাকে বীরভূম জেলা । কিন্তু, লকডাউনের জেরে পৌঁছাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে সার ও কীটনাশক । এছাড়া এবছর এমনিতেই বৃষ্টি কম হয়েছে । ফলে সার ও কীটনাশকের পাশাপাশি রয়েছে জলের সমস্যাও । জেলায় 167 টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে প্রায় তিন হাজার গ্রাম রয়েছে । সব গ্রামে পর্যাপ্ত জল মিলছে না চাষের জন্য । ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন বহু চাষি । পর্যাপ্ত ইউরিয়া না দেওয়ার জন্য ধানের শিস বেরোয়নি এখনও । এছাড়া, কোরোনা ভাইরাসের আতঙ্কে মাঠে কাজ করার জন্য মিলছে না শ্রমিকও ।
রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "জল এবার সত্যিই অনেক কম । ধান চাষে আমরা ভালো ফলন করে থাকি । এবার জলের জন্য ধান চাষ কম হচ্ছে । তবে সার পর্যাপ্ত পরিমাণে দেওয়ার চেষ্টা আমরা করছি ।"