ETV Bharat / city

Durga Puja 2022: স্বপ্নাদেশ পেয়ে কৃষ্ণবর্ণা দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন কালীভক্ত জমিদার

প্রায় 300 বছরের প্রথা মেনে বেলেঘাটার ভট্টাচার্য পরিবারে (Bhattacharya Family of Beleghata) পূজিতা হন কৃষ্ণবর্ণা দেবী দুর্গা (Durga Puja 2022) ৷ 1730 সাল থেকে চলে আসছে এই রীতি ৷ এবছরও (Durga Puja 2022) তার ব্যতিক্রম হয়নি ৷

Black Idol of Durga worshipped by Bhattacharya Family of Beleghata
Durga Puja 2022: স্বপ্নাদেশ পেয়ে কৃষ্ণবর্ণা দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন কালীভক্ত জমিদার
author img

By

Published : Oct 2, 2022, 6:10 PM IST

কলকাতা, 2 অক্টোবর: অবিভক্ত বঙ্গভূমের পাবনা জেলায় ছিল স্থলবসন্তপুর ৷ সেই স্থলবসন্তপুরের প্রথম জমিদার হরিদেব ভট্টাচার্য ৷ তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ কালীসাধক এবং পণ্ডিত মানুষ ৷ তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়েই রানি ভবানী তাঁকে স্থলবসন্তপুরের জমিদারি দান করেছিলেন ৷ কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পেয়েই কৃষ্ণবর্ণা দশভূজার (Black Idol of Durga) আরাধনা শুরু করেছিলেন তিনি ৷ সেটা ছিল 1730 সাল ৷ সেই ঐতিহ্য আজও অব্যাহত ৷ তবে, এখন আর পাবনায় পুজো হয় না ৷ আসানসোল ঘুরে ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান ঠিকানা কলকাতার বেলেঘাটা ৷ কৃষ্ণবর্ণা দেবী দুর্গা এখন পূজিতা হন এখানেই (Durga Puja 2022) ৷

পরিবারের বর্তমান সদস্য কৃষ্ণা ভট্টাচার্য জানালেন, দশভূজার একটি স্বপ্ন বহুবার দেখেছিলেন হরিদেব ৷ দেবী তাঁকে দেখা দেন ঘোর কৃষ্ণবর্ণ রূপে ৷ আদেশ দেন, এই রূপেই তাঁর পুজো শুরু করার ৷ ধর্মপ্রাণ মানুষটি পড়েন আতান্তরে ৷ কৃষ্ণবর্ণা দুর্গার অস্তিত্ব তাঁর জানা ছিল না ৷ অগত্যা হরিদেব ভট্টাচার্য শরণাপন্ন হন পাবনার পুরোহিতকুলের ৷ কিন্তু, তাঁরাও কালীভক্ত জমিদারকে দিশা দেখাতে ব্যর্থ হন ৷ সেই সময় এই বঙ্গদেশের যোগাযোগ মোটেও উন্নত ছিল না ৷ তবুও মায়ের টানে হরিদেব পৌঁছে যান নৈহাটির ভাটপাড়ায় ৷ কিন্তু, সেখানকার টোলের পণ্ডিতদের ব্যাখ্যাও তাঁর মনঃপুত হয়নি ৷

আরও পড়ুন: পুজোয় গঙ্গাবক্ষে ফিরল ব্রিটিশ আমলের প্যাডেল স্টিমার

শেষমেশ হরিদেব পাড়ি দেন কাশী ধামে ৷ আশাহত হন সেখানেও ৷ তাবড় সাধু, সন্তরাও কৃষ্ণবর্ণা দেবী দুর্গার স্বপ্নের কোনও যুৎসই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ৷ এই অবস্থায় একরাশ মন খারাপ নিয়ে একদিন কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটে বসেছিলেন হরিদেব ৷ সেই সময়েই এক সাধু কিছুটা স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই আগন্তুকের চিন্তার কারণ জানতে চান ৷ পথের হদিশও দেন সেই সাধুই ! তিনি জানান, চণ্ডীপাঠেই দুর্গার কৃষ্ণবর্ণের উল্লেখ রয়েছে ৷ এরপর পাবনায় ফিরে সেই সাধুর বিধান মেনেই কৃষ্ণবর্ণ দুর্গার পুজো শুরু করেন হরিদেব ৷ তবে মহামায়া কৃষ্ণবর্ণা হলেও একচালার প্রতিমায় তাঁর চার সন্তানের গায়ের রঙে কোনও আলাদা বিশেষত্ব নেই ৷

কৃষ্ণবর্ণা দুর্গার পুজো

বেলেঘাটা জোড়া মন্দিরের কাছে 35 নম্বর বাসস্ট্যান্ডের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রামকৃষ্ণ নস্কর লেনের বাসিন্দা ভট্টাচার্য পরিবার (Bhattacharya Family of Beleghata) এখনও প্রাচীন প্রথা মেনেই কৃষ্ণবর্ণা দশভূজার পুজো করে ৷ হরিদেবের ঐতিহ্য পালন করেন তাঁর উত্তরসূরি সুবোধ ভট্টাচার্য ৷ পারিবারিক রীতি অক্ষুণ্ণ রাখতেই পূর্বপুরুষের কাছ থেকে পুজোর নিয়ম শিখেছিলেন তিনি ৷ এই পুজোর জন্য রয়েছে বিশেষ মন্ত্র ৷ সেই মন্ত্র লেখা রয়েছে বহু প্রাচীন এক তালপাতার পুঁথিতে ৷ যা আজও রক্ষিত রয়েছে ভট্টাচার্য পরিবারের কাছে ৷

কৃষ্ণা জানালেন, পাবনা থেকে ছিন্নমূল হওয়ার পর এক সময় তাঁদের ঠাঁই হয় আসানসোলের ভাড়া বাড়িতে ৷ তারও পরে বেলেঘাটার ফ্ল্য়াটে উঠে আসে ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম ৷ আপাতত এখানেই এক ফালি জায়াগায়, প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষ্ণারা ৷ মায়ের কৃপায় অগাধ বিশ্বাস রয়েছে তাঁর ৷ বললেন, ভবানীর আশীর্বাদ না থাকলে এই পুজো চালিয়ে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হত না ৷ গত প্রায় তিন শতাব্দীতে একাধিকবার পুজো স্থান বদলালেও আজ পর্যন্ত কোনও বছরই পুজো বন্ধ হয়নি ৷ প্রতিমার আকার ছোট হলেও আচারে কোনও কাটছাঁট করা হয়নি ৷ তবে, এই বাড়ির প্রতিমা উত্তর কলকাতার কুমোরটুলিতে নয়, তৈরি হয় দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের পটুয়াপাড়ায় ৷ পঞ্চমী তিথিতে উমাকে সেখান থেকে ঘরে নিয়ে আসা হয় ৷ মায়ের নিরঞ্জন হয় দশমীতে ৷

কলকাতা, 2 অক্টোবর: অবিভক্ত বঙ্গভূমের পাবনা জেলায় ছিল স্থলবসন্তপুর ৷ সেই স্থলবসন্তপুরের প্রথম জমিদার হরিদেব ভট্টাচার্য ৷ তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ কালীসাধক এবং পণ্ডিত মানুষ ৷ তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়েই রানি ভবানী তাঁকে স্থলবসন্তপুরের জমিদারি দান করেছিলেন ৷ কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পেয়েই কৃষ্ণবর্ণা দশভূজার (Black Idol of Durga) আরাধনা শুরু করেছিলেন তিনি ৷ সেটা ছিল 1730 সাল ৷ সেই ঐতিহ্য আজও অব্যাহত ৷ তবে, এখন আর পাবনায় পুজো হয় না ৷ আসানসোল ঘুরে ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান ঠিকানা কলকাতার বেলেঘাটা ৷ কৃষ্ণবর্ণা দেবী দুর্গা এখন পূজিতা হন এখানেই (Durga Puja 2022) ৷

পরিবারের বর্তমান সদস্য কৃষ্ণা ভট্টাচার্য জানালেন, দশভূজার একটি স্বপ্ন বহুবার দেখেছিলেন হরিদেব ৷ দেবী তাঁকে দেখা দেন ঘোর কৃষ্ণবর্ণ রূপে ৷ আদেশ দেন, এই রূপেই তাঁর পুজো শুরু করার ৷ ধর্মপ্রাণ মানুষটি পড়েন আতান্তরে ৷ কৃষ্ণবর্ণা দুর্গার অস্তিত্ব তাঁর জানা ছিল না ৷ অগত্যা হরিদেব ভট্টাচার্য শরণাপন্ন হন পাবনার পুরোহিতকুলের ৷ কিন্তু, তাঁরাও কালীভক্ত জমিদারকে দিশা দেখাতে ব্যর্থ হন ৷ সেই সময় এই বঙ্গদেশের যোগাযোগ মোটেও উন্নত ছিল না ৷ তবুও মায়ের টানে হরিদেব পৌঁছে যান নৈহাটির ভাটপাড়ায় ৷ কিন্তু, সেখানকার টোলের পণ্ডিতদের ব্যাখ্যাও তাঁর মনঃপুত হয়নি ৷

আরও পড়ুন: পুজোয় গঙ্গাবক্ষে ফিরল ব্রিটিশ আমলের প্যাডেল স্টিমার

শেষমেশ হরিদেব পাড়ি দেন কাশী ধামে ৷ আশাহত হন সেখানেও ৷ তাবড় সাধু, সন্তরাও কৃষ্ণবর্ণা দেবী দুর্গার স্বপ্নের কোনও যুৎসই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ৷ এই অবস্থায় একরাশ মন খারাপ নিয়ে একদিন কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটে বসেছিলেন হরিদেব ৷ সেই সময়েই এক সাধু কিছুটা স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই আগন্তুকের চিন্তার কারণ জানতে চান ৷ পথের হদিশও দেন সেই সাধুই ! তিনি জানান, চণ্ডীপাঠেই দুর্গার কৃষ্ণবর্ণের উল্লেখ রয়েছে ৷ এরপর পাবনায় ফিরে সেই সাধুর বিধান মেনেই কৃষ্ণবর্ণ দুর্গার পুজো শুরু করেন হরিদেব ৷ তবে মহামায়া কৃষ্ণবর্ণা হলেও একচালার প্রতিমায় তাঁর চার সন্তানের গায়ের রঙে কোনও আলাদা বিশেষত্ব নেই ৷

কৃষ্ণবর্ণা দুর্গার পুজো

বেলেঘাটা জোড়া মন্দিরের কাছে 35 নম্বর বাসস্ট্যান্ডের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রামকৃষ্ণ নস্কর লেনের বাসিন্দা ভট্টাচার্য পরিবার (Bhattacharya Family of Beleghata) এখনও প্রাচীন প্রথা মেনেই কৃষ্ণবর্ণা দশভূজার পুজো করে ৷ হরিদেবের ঐতিহ্য পালন করেন তাঁর উত্তরসূরি সুবোধ ভট্টাচার্য ৷ পারিবারিক রীতি অক্ষুণ্ণ রাখতেই পূর্বপুরুষের কাছ থেকে পুজোর নিয়ম শিখেছিলেন তিনি ৷ এই পুজোর জন্য রয়েছে বিশেষ মন্ত্র ৷ সেই মন্ত্র লেখা রয়েছে বহু প্রাচীন এক তালপাতার পুঁথিতে ৷ যা আজও রক্ষিত রয়েছে ভট্টাচার্য পরিবারের কাছে ৷

কৃষ্ণা জানালেন, পাবনা থেকে ছিন্নমূল হওয়ার পর এক সময় তাঁদের ঠাঁই হয় আসানসোলের ভাড়া বাড়িতে ৷ তারও পরে বেলেঘাটার ফ্ল্য়াটে উঠে আসে ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম ৷ আপাতত এখানেই এক ফালি জায়াগায়, প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষ্ণারা ৷ মায়ের কৃপায় অগাধ বিশ্বাস রয়েছে তাঁর ৷ বললেন, ভবানীর আশীর্বাদ না থাকলে এই পুজো চালিয়ে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হত না ৷ গত প্রায় তিন শতাব্দীতে একাধিকবার পুজো স্থান বদলালেও আজ পর্যন্ত কোনও বছরই পুজো বন্ধ হয়নি ৷ প্রতিমার আকার ছোট হলেও আচারে কোনও কাটছাঁট করা হয়নি ৷ তবে, এই বাড়ির প্রতিমা উত্তর কলকাতার কুমোরটুলিতে নয়, তৈরি হয় দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের পটুয়াপাড়ায় ৷ পঞ্চমী তিথিতে উমাকে সেখান থেকে ঘরে নিয়ে আসা হয় ৷ মায়ের নিরঞ্জন হয় দশমীতে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.