কলকাতা, 02 মে : গত দুই মাস ধরে দেশের চারটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা নির্বাচনের লড়াই চলল ৷ কিন্তু এর মধ্যে বিজেপির লক্ষ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গ দখল ৷ পশ্চিমবঙ্গে সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা প্রায় প্রত্যেকদিনই প্রচার করেছেন ৷ ফলে লড়াইটা ক্রমশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মোদি-অমিত শাহ বনাম মমতা ৷
সেই পরিস্থিতিতে পর পর তিনবার জেতা এবং গতবারের চেয়ে বেশি আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের জয় থেকে প্রমাণ হয় যে বিজেপি বাংলা দখল করার জন্য যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, তা ব্যর্থ হয়েছে ৷ সাধারণত যে রণনীতিতে বিজেপি উত্তর ভারত বা অন্যত্র ভোটে লড়ে কিংবা নির্বাচনী লড়াইয়ে সফল হয়, পশ্চিমবঙ্গে সেই মেরুকরণ কাজ করেনি ৷
তাছাড়া জাতপাতের যে রাজনীতি সেটাও ব্যর্থ হয়েছে বাংলায় ৷ কারণ, মতুয়া ভোট সম্পূর্ণ ভাবে বিজেপির দিকে যায়নি ৷ তফসিলি জাতি, উপজাতিদের ভোট 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে হারিয়েছিল তৃণমূল ৷ সেটার অনেকটাই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা ফেরত পেয়েছেন ৷
একই সঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সামগ্রিক ভাবে বিধানসভার যে ফল তাতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি ৷ অসম বিজেপি পুনর্দখল করেছে বটে ৷ কিন্তু তামিলনাড়ু, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে গেরুয়া শিবির ৷ পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে পারলে গোটা ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে বিজেপির সুবিধা হত ৷ তাই বিজেপির লক্ষ্য ছিল বাংলা ৷
অন্যদিকে করোনা মোকাবিলা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের যে নেতিবাচক সমালোচনা হচ্ছে, তা অনেকটাই প্রশমিত করা যেতে পারত ৷ কিন্তু এই ভোটের কারণে সেটা করা যায়নি ৷
এই পরিস্থিতিতে তাই ভোটে জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাতীয় স্তরের নেতা হিসেবে পরিচিতি হল ৷ কারণ, যেখানে রাহুল গান্ধির মতো নেতা ব্যর্থ ৷ অসম বা কেরল, কোনওটাতে সাফল্য পায়নি কংগ্রেস ৷ বরং পুদুচেরি কংগ্রেসের রাজ্য ছিল, সেটাও হারাচ্ছে ৷ নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গান্ধি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় - এই ত্রয়ীর মধ্যে এই নির্বাচনে সাফল্য পেলেন মমতা ৷
এর আগে সমস্ত মোদি বিরোধী শক্তিকে এক হতে মমতা চিঠি দিয়েছিলেন ৷ এবার কেন্দ্রে মোদি বিরোধী লড়াইকে মমতা আরও জোরদার করবেন ৷ সেক্ষেত্রে বিরোধী নেত্রী হিসেবে তিনি স্বাভাবিক পছন্দের জায়গায় যেতে পারেন ৷ কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে মোদির বিকল্প মমতা ৷
কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস তো ভারতের অন্যত্র কোথাও নেই ৷ সেই অর্থে ভারতের অন্য রাজ্যগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও প্রভাব নেই ৷ ফলে পশ্চিমবঙ্গে 42-এর মধ্যে 40 আসন পেলেও প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে বাকি দলগুলির সমর্থন প্রয়োজন পড়বে ৷ তাই জাতীয় স্তরের বড় নেত্রী হয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু জাতীয় বিকল্প হলেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যায় না ৷
আরও পড়ুন : বিজেপি-তৃণমূলের জোড়াফলায় অধীর-গড়ে ধুয়েমুছে সাফ কংগ্রেস
এর কারণ, মমতা জাতীয় বিকল্প হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সংখ্যা ৷ কিন্তু মোদিকেও যে হারানো যায় সেটা মমতা প্রমাণ করেছেন ৷
(লেখক, প্রবীণ সাংবাদিক, ভারতীয় প্রেস ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি)