কলকাতা, 21 এপ্রিল : রামনবমীর পরের দিনে বঙ্গ-ভোটের ষষ্ঠী ৷ বৃহস্পতিবার রাজ্যের চার জেলার 43টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে ৷ এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের একটি জেলা রয়েছে ৷ আর বাকি তিনটি জেলা দক্ষিণবঙ্গের ৷
রাজ্যের অন্যান্য অংশের মতো এই জেলাগুলিতেও 2016 সাল থেকে 2019 সাল, এই তিন বছরে শক্তি বেড়েছে বিজেপির ৷ কিছুটা শক্তি কমেছে তৃণমূলের ৷ আর কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বাম-কংগ্রেস ৷ তাই এই তিন জেলায় নির্বাচনী লড়াইয়ে জমজমাট হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ৷
কারণ, একদিকে 2019 এর উত্থান ধরে রেখে বিধানসভায় আসন বাড়ানোর চেষ্টা করবে বিজেপি ৷ অন্যদিকে আসন ধরে রাখার লড়াইয়ে থাকার চেষ্টা করবে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ আর বাম-কংগ্রেস আবার লড়াইয়ে ফিরতে মরিয়া চেষ্টা করবে ৷
যদি আসন সংখ্যার নিরিখে হিসেব কষা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে 2016 সালে এই 43টি আসনের মধ্যে 32টিতে তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছিল ৷ বামেরা পেয়েছিল 4টি ও কংগ্রেসের দখলে ছিল 7টি আসন ৷ আর শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল বিজেপিকে ৷
তিন বছর পর 2019 সালে ছবিটা একেবারে বদলে যায় ৷ লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে এই 43টি আসনের মধ্যে তৃণমূল 25টি ও বিজেপি 18টি আসনে এগিয়ে ছিল ৷ আর বাম ও কংগ্রেসকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল ৷
ভোট শতাংশের হিসেবেও বাম ও কংগ্রেসের ব্যাপক ক্ষতি হয় 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে ৷ 2016 সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস 7.54 শতাংশ ভোট পেয়েছিল ৷ 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের ভোট শতাংশ নেমে যায় 3.79 এ ৷ অন্যদিকে বামেরা 2016 সালে এই আসনগুলিতে 31.79 শতাংশ ভোটারকে নিজেদের দিকে রাখতে সফল হয়েছিল ৷ কিন্তু 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে তারা পায় 9.68 শতাংশ ভোট ৷
আর রাজ্যের অনান্য অংশের ভোট-চিত্রের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই আসনগুলিতেও বাম ও কংগ্রেসের ভোট চলে যায় গেরুয়া শিবিরে ৷ 2016 সালে 10.22 শতাংশ ভোট পাওয়া বিজেপি 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনগুলি থেকে 40.85 শতাংশ ভোট পেয়েছিল ৷
অন্যদিকে তৃণমূলের ভোট কমেছিল মাত্র 2 শতাংশের মতো ৷ 2016 সালের বিধানসভা ভোটে এই 43টি আসনের 45.17 শতাংশ ভোটার জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দিয়েছিল ৷ আর 2019 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল 43.46 শতাংশ ভোট পেয়েছিল ৷
স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে এই আসনগুলিতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেই লড়াই বেশি হবে ৷ কারণ, এই তিন বছরে বিজেপিও নিজেদের জমি এই রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে অনেকটাই শক্ত করেছে ৷ ফলে তারা 2019 সালের চেয়ে আরও ভালো ফল করতে চাইবে ৷ আর তৃণমূলও চাইবে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ঠেকিয়ে নিজেদের শক্তি ধরে রাখা ৷ আর এই দুইয়ের মাঝে বাম ও কংগ্রেসের লড়াই তাদের হারানো ভোট ব্যাঙ্ক ফিরিয়ে আনা ৷ এবং 2016 সালের ফল ধরে রাখা ৷
আরও পড়ুন : ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের আগেই জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার পদে রদবদল
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই লড়াইয়ের জেরে ষষ্ঠ দফার ভোটে গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে ৷ বিশেষ করে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল, উত্তর 24 পরগনার কিছু অংশ, পূর্ব বর্ধমানের কিছু অংশে গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে বলে অনেকের মত৷ শেষ পর্যন্ত আগের পাঁচ দফার মতো বিক্ষিপ্তি অশান্তির উপর দিয়ে ভোট-ষষ্ঠী শেষ হয় কি না, আপাতত সেটাই দেখার ৷