কলকাতা, 31 মার্চ : বহিরাগত ৷ ভারতীয় জনতা পার্টির হিন্দিভাষী অবাঙালি নেতাদের গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় এইভাবেই আক্রমণ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের মনেও যে তার প্রভাব পড়েছিল, তা নির্বাচনের ফলেই স্পষ্ট হয়েছে ৷ সেখান থেকেই শিক্ষা নিয়ে বঙ্গ বিজেপির নেতারা চাইছেন দলের পর্যবেক্ষক হিসেবে এমন কাউকে দায়িত্ব দিক কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, যিনি বাংলা ভাষা বোঝেন এবং বাংলায় কথা বলতেও স্বচ্ছন্দ ৷ এই ক্ষেত্রে মুরলিধর সেন লেনের নেতাদের প্রথম পছন্দ সুনীল দেওধর (Bengal BJP wants Sunil Deodhar as central observer) ৷
এতদিন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে বাংলায় কাজ করেছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় ৷ কিন্তু ভোটের আগে থেকেই মধ্যপ্রদেশের এই নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমতে শুরু করে বিজেপির অন্দরে ৷ ভোটে খারাপ ফল করার পর সেই ক্ষোভের মাত্রা বাড়তে থাকে ৷ বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় তো সরাসরি টুইটারে বিজয়বর্গীয়কে একাধিকবার আক্রমণ করেছেন ৷ তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারও দেওয়া হয়েছে ৷ ফলে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তিনি আর কলকাতা মুখো হননি ৷
এই অবস্থায় বাংলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল অমিত মালব্যর হাতে ৷ জাতীয়স্তরে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গুডবুকেই আছেন ৷ কিন্তু তাঁকে নিয়ে দলের অন্দরে মতান্তর তৈরি হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর ৷ ওই সূত্র জানিয়েছে, সেই মতান্তর নিয়ে অভিযোগও জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ৷ তাই পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক বদল করা হতে পারে বলে আঁচ করছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা ৷ আর যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তিনি সম্ভবত 2026 পর্যন্ত এই রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের সমস্ত কাজকর্মের তদারকি করবেন বলে খবর ৷
বিজেপির ওই সূত্রের দাবি, সেই কারণেই এখন থেকে সুনীল দেওধরের জন্য দরবার শুরু করেছে সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder), শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari), দিলীপ ঘোষেরা (Dilip Ghosh) ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে যে, কেন সুনীল দেওধরকেই চাওয়া হচ্ছে ? এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উঠে আসছে মারাঠি এই বিজেপি নেতার অতীতের পারফরম্যান্স ৷
তিনি আদতে ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (RSS) প্রচারক ৷ 2005 সালে তিনি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হন ৷ তার পর থেকে বিজেপিতে তিনি বিভিন্ন দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ৷ 2014 সালে বারাণসী লোকসভা আসনের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) ক্যাম্পেন ম্যানেজার ছিলেন তিনি ৷
তবে তিনি প্রচারের আলোয় আসেন আরও বছর চারেক পর, 2018 সালে ৷ ওই বছর ত্রিপুরায় সরকার গড়ে বিজেপি ৷ তার পরই সংবাদমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে হইচই শুরু হয় ৷ ত্রিপুরায় বিজেপির জয়ের কান্ডারি ছিলেন তিনি ৷ সেখানে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে তিনি কাজ করেছিলেন ৷ গেরুয়া শিবিরের দাবি, ত্রিপুরায় টানা বেশ কয়েকমাস ছিলেন সুনীল দেওধর ৷ বাংলা শিখেছিলেন, যাতে বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলতে সুবিধা হয় ৷ সেখানকার মানুষের কথা তিনি বুঝতে পারেন আর কী চাইছেন সেটাও বোঝাতে পারেন ৷ এমনকী তিনি ত্রিপুরার স্থানীয় কোকবরক ভাষাও শেখেন ৷
গেরুয়া শিবিরের মতে, যেহেতু তিনি বাংলা ভালভাবে জানেন, তাই পশ্চিমবঙ্গে কাজ করতে তাঁর কোনও সমস্যা হবে না ৷ দলের সংগঠনের একেবারে নিচুস্তর পর্যন্ত তিনি সহজেই মিশে যেতে পারবেন ৷ তার ফল 2024-এর লোকসভা নির্বাচন ও 2026-এর বিধানসভা নির্বাচনে মিলবে বলে আশাবাদী বিজেপি ৷ এই নিয়ে মেদিনীপুরের সাংসদ তথা বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘সুনীল দেওধর বাংলা ভাষাটা ভাল বলতে পারেন । তাই তিনি বাংলায় দায়িত্ব পেলে এখানে কাজ চালাতে সুবিধা হবে ৷’’
কিন্তু দাবি করলেই যে তা মিলবে, এমন নিশ্চয়তা নেই ৷ সবটাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের উপর ৷ সেই কথাও শুনিয়েছেন দিলীপ ৷ তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপিতে এই সব কিছু হয় না যে, আমরা কাউকে চাইলেই তিনি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হয়ে যাবেন । এটা সম্পূর্ণ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে থাকে ।’’
এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত এক্তিয়ার রয়েছে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) এর হাতে ৷ যে পদে এখন রয়েছে বি এল সন্তোষ ৷ তাই তিনি যদি রাজি হন, তা হলে বঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক হতে সুনীল দেওধরের কোনও বাধা থাকবে না ৷ বিজেপি সূত্রে খবর, খুব শিগগিরই বিজেপিতে জাতীয়স্তরে সাংগঠনিক নির্বাচন হবে ৷ সেখানেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে ৷
যদিও তার পরও প্রশ্ন থাকছে যে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট একটা রাজ্য ৷ সেখানকার সঙ্গে আয়তনগত ভাবে পশ্চিমবঙ্গের আকাশপাতাল তফাত ৷ ছোট রাজ্যে সংগঠন গোছানো যতটা সোজা, বঙ্গের মতো রাজ্যে সেই কাজ অনেক কঠিন ৷ ফলে সুনীল দেওধর কি বঙ্গ-বিজেপির সবপক্ষকে একছাতার তলায় এনে নবান্ন দখলের স্বপ্ন সফল করতে পারবেন ?