বারাসত, 10 মার্চ : বারাসতের উত্তর কালিকাপুরের বাড়িতে এখনও বড় বড় দুটো তালা ঝুলছে । পাড়া প্রতিবেশীদের অনেকেই জানেন না, মিশুকে স্বভাবের ঝরনা সাহার মৃত্যু হয়েছে সিকিমের পাহাড়ি খাদে গাড়ি দুর্ঘটনায় । সন্ধ্যায় জানার পর বিশ্বাসই করতে পারছেন না তিনি আর নেই । বৃহস্পতিবার বারাসতের বাড়ি থেকেই ছেলে রাজা ও দোকানের কর্মচারী সুব্রতকে নিয়ে পূর্ব সিকিমে বেড়াতে গিয়েছিলেন ঝরনা । স্বামীকে হারিয়েছেন মাত্র 2 বছর হল । এরপর, একমাত্র ছেলেকে নিয়েই তাঁর যাবতীয় সংসার ছিল ।
সিকিমে ধসে পর্যটকদের একটি গাড়ির উপর পাথর পড়ে । ঘটনায় মৃত্যু হয় গাড়ি চালক সহ তিনজনের । মৃতদের নাম ঝরনা সাহা (48), ঋষিপ্রিয়া ঘোষ(13) ও সুরজ ছেত্রী । আহত 7 ।
ঝরনা সাহা বারাসতের বাসিন্দা এবং ঋষিপ্রিয়া ঘোষ কলকাতার বাসিন্দা । আহত সকলেই বারাসতের বাসিন্দা । খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে সিকিম পুলিশ পৌঁছায় । খাদ থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে । জখম 7 জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে । মৃতদেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে ।
মৃতা ঝরনা সাহার ছেলে রাজা সাহার বারাসতের কালিকাপুরে রাজার একটি জামাকাপড়ের দোকান রয়েছে । সেই দোকানে বছর দু'য়েক ধরে কাজ করে সুব্রত ।
দুর্ঘটনায় বারাসতের মহিলা পর্যটকের মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ রাতে উত্তর কালিকাপুরের ঝরনা সাহার বাড়িতে সমবেদনা জানাতে আসেন বারাসত পৌরসভার পৌর প্রধান সুনীল মুখোপাধ্যায় । যদিও, বাড়িতে তালা ঝোলানো থাকায় প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলেন তিনি । সেখান থেকে দুর্ঘটনায় আহত সুব্রত দাসের রামকৃষ্ণপুরের বাড়িতেও যান পৌর প্রধান । কথা বলেন তাঁর মা বাসন্তী দাসের সঙ্গে । পরে সংবাদমাধ্যমকে সুনীলবাবু বলেন, "রাজা সাহার সাথে কথা হয়েছে । বাইরে আনন্দ করতে গিয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেল, যে মনটা খুব খারাপ । জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আমাকে ফোন করেছিলেন । তাঁকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি । পাশাপাশি, তাঁকে অনুরোধ করেছি তিনি যেন মৃত ঝরনা সাহার দেহ সিকিম থেকে আনতে সবরকমের সহযোগিতা করেন । মন্ত্রী সে বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন । আহতদের বারাসতে ফেরার ব্যবস্থাও করা হবে ।"
রাজার বাড়ির প্রতিবেশীরাও দূরদর্শনের পরদায় তাদের দুর্ঘটনার কথা জানতে পারেন । সন্ধ্যায় সেই দুঃসংবাদ পাওয়ার পরেই অনেকেই ভিড় জমিয়েছেন উত্তর কালিকাপুরের রাজার বাড়ির সামনে । রাজার বাড়ির লাগোয়া প্রতিবেশী সুশান্ত পাল বলেন, "কোথায় তাঁরা গিয়েছিলেন সেটা জানতাম না । গত 4 দিন ধরে বাড়িতে তালা লাগানো দেখছি । এদিনই দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে খুব খারাপ লাগছে ।"
রাজার এক বন্ধু তরুময় কুন্ডু বলেন, "আমিই রাজাকে ফোন করেছিলাম । তখনই জানতে পারি, রাজার মায়ের মৃত্যু হয়েছে ও নিজেও জখম হয়েছে । সঙ্গে তার এক আত্মীয়াও মারা গেছেন । দুঃসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই খারাপ লাগছে ।"
বছর 3 আগে রাজার বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন চায়না পাল । তিনি বলেন, "ঝরনা বউদি আমাকে বলেছিল এক সপ্তাহ তাঁরা থাকবেন না । কিন্তু কোথায় বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে যাননি ।" এছাড়া ঝরনা দেবীর প্রতিবেশী ছায়া রায় বলেন,"ঝরনা বউদি ও আমি একসাথে বিকেলে হাঁটতে বেরোতাম । উনি খুব মিশুকে স্বভাবের ছিলেন । সবাই ঘুরতে যায় আনন্দ করার জন্য । কিন্তু দুর্ঘটনার কথা শুনে খারাপ লাগছে ।"
এদিকে বারাসতের রামকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা সুব্রতর মা বাসন্তী দাস সন্ধ্যাতেই ছেলের দুর্ঘটনার কথা প্রথম জানতে পারেন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে । সুব্রতর বাবা প্রভাস দাস রঙের মিস্ত্রি । মা বাসন্তী দেবী আয়ার কাজ করেন । প্রভাসবাবু সকালেই কাজে বেরিয়ে গেছেন । তিনি তখনও জানেন না দুর্ঘটনায় ছেলে আহত হয়েছেন । রাতে বাড়িতে ফিরে তা জানতে পারেন পরিবারের কাছ থেকে । বেড়াতে যাওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ছেলের সাথে কথা হয়েছিল বাসন্তী দেবীর । তিনি বলেন, "গতকাল দুপুরে রাজার মোবাইলে ছেলের সাথে শেষ কথা হয়েছিল । আজ সকাল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না । দুর্ঘটনায় রাজাও আহত হয়েছে ও ঝরনা বউদির মারা যাওয়ার খবরে মনটা খারাপ হয়ে গেছে ।"