ETV Bharat / city

Ajanta Biswas : মমতার উত্থানে উহ্য বামেদের পতন, বাম সত্ত্বায় কি সংযমী অনিল-কন্যা ?

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্রে কলম ধরেছেন সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের মেয়ে অজন্তা বিশ্বাস ৷ উত্তর সম্পাদকীয় বিভাগে ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ লিখেছেন তিনি ৷ যাঁর তৃতীয় তথা শেষ কিস্তিতে রয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের জয়যাত্রার কাহিনি ৷ কিন্তু সেই পর্বে সিপিএম তথা বামেদের পরাজয় উহ্যই রেখেছেন অনিল-কন্যা ৷ তবে কি তাঁর অন্তরের বাম সত্ত্বাই বাধ সেধেছে মমতার হাতে বামেদের নাস্তানাবুদ হওয়ার তথ্য ও বিশ্লেষণ পেশে ? উত্তর এড়িয়েছে সিপিএম ৷ যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে তৃণমূলও !

Anil Biswas's daughter Ajanta Biswas describes Mamata Banerjee's success in Bengal politics without mentioning CPM's defeat
Ajanta Biswas : মমতার উত্থানে উহ্য বামেদের পতন, বাম ভাবাবেগেই কি দায় অনিল-কন্যার ?
author img

By

Published : Jul 31, 2021, 3:49 PM IST

কলকাতা, 31 জুলাই : ইতিহাসের অধ্যাপিকা ৷ একইসঙ্গে, সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের আত্মজা ৷ এই দুই পরিচয়ের টানাপোড়েনেই কি বাংলার রাজনীতিতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) মূল্যায়ন করতে গিয়ে খেই হারালেন অজন্তা বিশ্বাস (Ajanta Biswas) ? প্রশ্নটা উঠছেই ৷ কারণ, তৃণমূলের মুখপত্রে তাঁর লেখা ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক নিবন্ধে মমতা ও তাঁর লড়াই সম্পর্কে একের পর এক তথ্য তুলে ধরলেও মমতার প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএম তথা বামেদের নিয়ে কোনও শব্দই খরচ করেননি অজন্তা ৷ তাহলে কি মনে-প্রাণে বামপন্থী হওয়ার সুবাদেই সিপিএমের সমালোচনা এড়িয়েছেন তিনি ? তাই যদি হয়, তাতে কি তাঁর উপস্থাপনা পক্ষপাতদুষ্ট হচ্ছে না ? উত্তর নেই বামেদের মুখে ৷ ঘটনায় অন্যায্য কিছু দেখছে না তৃণমূলও !

বাংলার রাজনীতিতে নারী শক্তির অবদান প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বাম নেত্রী গীতা মুখোপাধ্যায়, অপরিজিতা গোপ্পি থেকে কংগ্রেসের আভা মাইতি, পূরবী মুখোপাধ্যায় হয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের কাছে পৌঁছেছে অজন্তার কলম ৷ লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, অন্যদের সম্পর্কে আলোচনার সময় অজন্তা তাঁদের ‘বিশিষ্ট নেত্রী’ বলে উল্লেখ করেছেন ৷ কিন্তু মমতার পরিচয় দিয়েছেন ‘জননেত্রী’ হিসাবে ৷ তবে অজন্তা নিজে কিন্তু তাঁর লেখায় মমতাকে জননেত্রীর খেতাব দেননি ৷ বরং, মানুষই যে মমতাকে জননেত্রীর স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটাই উল্লেখ করেছেন মাত্র ৷

আরও পড়ুন : BJP Documentary : মমতার ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন’’ বানচাল করতে হিংসার তথ্যচিত্র হাতিয়ার বিজেপির

কালীঘাটের টালির চাল থেকে নবান্নের 14 তলা ৷ মমতার সাফল্যের পিছনে লড়াই প্রশ্নাতীত ৷ কোনও ব্যক্তিবিশেষ মমতার গুণমুগ্ধ বা সমালোচক হতেই পারেন ৷ কিন্তু মমতার অতি বড় বিরোধীও তাঁর লড়াইকে অস্বীকার করবেন না ৷ এহেন মমতার উত্থানের শুরুটাই ছিল সিপিএম তথা বাম-বিরোধিতা দিয়ে ৷ এই বিষয়ে তাঁর নাছোড় মনোভাবই তাঁকে একটা সময় ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে ৷ কাজেই সিপিএম বা বামেদের পরাজয় এড়িয়ে মমতার সাফল্য ব্যাখ্যা করার অর্থ বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূলনেত্রীর জয়যাত্রার কাহিনীকে অসম্পূর্ণ করে রাখা ৷ অথচ, অজন্তার নিবন্ধের শিরোনাম হল ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ ৷ সেক্ষেত্রে সিপিএমকে বাদ দিয়ে মমতাকে শুধুমাত্র জননেত্রী বললে কি নেত্রী মমতার শক্তিকে খাটো করা হয় না ?

মমতার সাফল্যের পথে পিছনে হাঁটলে বেশ কয়েকটা মাইলস্টোন যে কারওরই নজর কাড়বে ৷ 1984 সালে তাঁর জীবনের প্রথম নির্বাচনে সিপিএমের হেভিওয়েট সোমনাথ চট্টোপাধ্য়ায়কে হারিয়েছিলেন তরুণী মমতা ৷ প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন ‘জায়ান্ট কিলার’ ৷ পরবর্তীতে, 1993 সালের একুশে জুলাইয়ের গুলিচালনার ঘটনা নেত্রী মমতার ভিত আরও মজবুত করেছিল ৷ এরপর সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামের আন্দোলন মমতার হাতে সিপিএমকে উপড়ে ফেলার অস্ত্র তুলে দেয় ৷ লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, অজন্তা যে সিঙ্গুর আন্দোলনের কথা বলেননি তা নয়, কিন্তু মমতার সেই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে ছিল, তার উল্লেখ তিনি করেননি ৷ সূক্ষভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন একুশে জুলাইয়ের গুলিচালনার ঘটনাও ৷

সাংবাদিকতা হোক বা ঐতিহাসিক ঘটনার উপস্থাপন, পক্ষপাতহীনতা দু’টোরই অন্য়তম শর্ত ৷ কিন্তু মমতার প্রশ্নে ইতিহাসের অধ্যাপিকা অজন্তা কি সেই শর্ত মেনেছেন ? নাকি অনিল বিশ্বাসের কন্যার কাছে তাঁকে হার স্বীকার করতে হয়েছে ? এই বিষয়ে সিপিএমের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি ৷ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকে (Sujan Chakraborty) এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও মুখে কুলুপ আঁটেন তিনি ৷ অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) দাবি, এর মধ্যে রাজনীতির কিছু নেই ৷ পুরোটাই নাকি একজন অধ্য়াপিকার নির্ভেজাল এবং নিরপেক্ষ মূল্যায়ন !

আরও পড়ুন : লক্ষ্য 2024, তৃণমূলের নতুন স্লোগান "আবকি বার দিদি সরকার"

কুণাল মনে করেন, বাংলার রাজনীতিতে অন্যান্য দলের নেত্রীদের মতোই মমতার উত্থান, সাফল্য ও অবদানকে ব্যাখ্যা করেছেন অজন্তা ৷ তিনি কোনও রাজনৈতিক মেরুকরণে যেতে চাননি ৷ সেক্ষেত্রে সিপিএমকে উহ্য রাখায় কোনও সমস্যা নেই ৷ কারণ, সকলেই জানেন মমতা কাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতেছেন ৷ তবে কুণাল যাই বলুন, এক্ষেত্রে কয়েকটি প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায় ৷ প্রথমত, বাংলার রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত মমতার থেকে ওজনদার কোনও নারী চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে কি ? এর উত্তর যদি না হয়, তাহলে তাঁর সম্পর্কে শুধুমাত্র কিছু তথ্য পেশ করেই কি উত্তর সম্পাদকীয় বিভাগে (তাও আবার মমতার হাতে গড়া দল তৃণমূল কংগ্রেসেরই মুখপত্রে !) নিবন্ধ পেশ করা যায় ? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি ৷

কলকাতা, 31 জুলাই : ইতিহাসের অধ্যাপিকা ৷ একইসঙ্গে, সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের আত্মজা ৷ এই দুই পরিচয়ের টানাপোড়েনেই কি বাংলার রাজনীতিতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) মূল্যায়ন করতে গিয়ে খেই হারালেন অজন্তা বিশ্বাস (Ajanta Biswas) ? প্রশ্নটা উঠছেই ৷ কারণ, তৃণমূলের মুখপত্রে তাঁর লেখা ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক নিবন্ধে মমতা ও তাঁর লড়াই সম্পর্কে একের পর এক তথ্য তুলে ধরলেও মমতার প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএম তথা বামেদের নিয়ে কোনও শব্দই খরচ করেননি অজন্তা ৷ তাহলে কি মনে-প্রাণে বামপন্থী হওয়ার সুবাদেই সিপিএমের সমালোচনা এড়িয়েছেন তিনি ? তাই যদি হয়, তাতে কি তাঁর উপস্থাপনা পক্ষপাতদুষ্ট হচ্ছে না ? উত্তর নেই বামেদের মুখে ৷ ঘটনায় অন্যায্য কিছু দেখছে না তৃণমূলও !

বাংলার রাজনীতিতে নারী শক্তির অবদান প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বাম নেত্রী গীতা মুখোপাধ্যায়, অপরিজিতা গোপ্পি থেকে কংগ্রেসের আভা মাইতি, পূরবী মুখোপাধ্যায় হয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের কাছে পৌঁছেছে অজন্তার কলম ৷ লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, অন্যদের সম্পর্কে আলোচনার সময় অজন্তা তাঁদের ‘বিশিষ্ট নেত্রী’ বলে উল্লেখ করেছেন ৷ কিন্তু মমতার পরিচয় দিয়েছেন ‘জননেত্রী’ হিসাবে ৷ তবে অজন্তা নিজে কিন্তু তাঁর লেখায় মমতাকে জননেত্রীর খেতাব দেননি ৷ বরং, মানুষই যে মমতাকে জননেত্রীর স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটাই উল্লেখ করেছেন মাত্র ৷

আরও পড়ুন : BJP Documentary : মমতার ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন’’ বানচাল করতে হিংসার তথ্যচিত্র হাতিয়ার বিজেপির

কালীঘাটের টালির চাল থেকে নবান্নের 14 তলা ৷ মমতার সাফল্যের পিছনে লড়াই প্রশ্নাতীত ৷ কোনও ব্যক্তিবিশেষ মমতার গুণমুগ্ধ বা সমালোচক হতেই পারেন ৷ কিন্তু মমতার অতি বড় বিরোধীও তাঁর লড়াইকে অস্বীকার করবেন না ৷ এহেন মমতার উত্থানের শুরুটাই ছিল সিপিএম তথা বাম-বিরোধিতা দিয়ে ৷ এই বিষয়ে তাঁর নাছোড় মনোভাবই তাঁকে একটা সময় ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে ৷ কাজেই সিপিএম বা বামেদের পরাজয় এড়িয়ে মমতার সাফল্য ব্যাখ্যা করার অর্থ বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূলনেত্রীর জয়যাত্রার কাহিনীকে অসম্পূর্ণ করে রাখা ৷ অথচ, অজন্তার নিবন্ধের শিরোনাম হল ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ ৷ সেক্ষেত্রে সিপিএমকে বাদ দিয়ে মমতাকে শুধুমাত্র জননেত্রী বললে কি নেত্রী মমতার শক্তিকে খাটো করা হয় না ?

মমতার সাফল্যের পথে পিছনে হাঁটলে বেশ কয়েকটা মাইলস্টোন যে কারওরই নজর কাড়বে ৷ 1984 সালে তাঁর জীবনের প্রথম নির্বাচনে সিপিএমের হেভিওয়েট সোমনাথ চট্টোপাধ্য়ায়কে হারিয়েছিলেন তরুণী মমতা ৷ প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন ‘জায়ান্ট কিলার’ ৷ পরবর্তীতে, 1993 সালের একুশে জুলাইয়ের গুলিচালনার ঘটনা নেত্রী মমতার ভিত আরও মজবুত করেছিল ৷ এরপর সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামের আন্দোলন মমতার হাতে সিপিএমকে উপড়ে ফেলার অস্ত্র তুলে দেয় ৷ লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, অজন্তা যে সিঙ্গুর আন্দোলনের কথা বলেননি তা নয়, কিন্তু মমতার সেই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে ছিল, তার উল্লেখ তিনি করেননি ৷ সূক্ষভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন একুশে জুলাইয়ের গুলিচালনার ঘটনাও ৷

সাংবাদিকতা হোক বা ঐতিহাসিক ঘটনার উপস্থাপন, পক্ষপাতহীনতা দু’টোরই অন্য়তম শর্ত ৷ কিন্তু মমতার প্রশ্নে ইতিহাসের অধ্যাপিকা অজন্তা কি সেই শর্ত মেনেছেন ? নাকি অনিল বিশ্বাসের কন্যার কাছে তাঁকে হার স্বীকার করতে হয়েছে ? এই বিষয়ে সিপিএমের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি ৷ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকে (Sujan Chakraborty) এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও মুখে কুলুপ আঁটেন তিনি ৷ অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) দাবি, এর মধ্যে রাজনীতির কিছু নেই ৷ পুরোটাই নাকি একজন অধ্য়াপিকার নির্ভেজাল এবং নিরপেক্ষ মূল্যায়ন !

আরও পড়ুন : লক্ষ্য 2024, তৃণমূলের নতুন স্লোগান "আবকি বার দিদি সরকার"

কুণাল মনে করেন, বাংলার রাজনীতিতে অন্যান্য দলের নেত্রীদের মতোই মমতার উত্থান, সাফল্য ও অবদানকে ব্যাখ্যা করেছেন অজন্তা ৷ তিনি কোনও রাজনৈতিক মেরুকরণে যেতে চাননি ৷ সেক্ষেত্রে সিপিএমকে উহ্য রাখায় কোনও সমস্যা নেই ৷ কারণ, সকলেই জানেন মমতা কাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতেছেন ৷ তবে কুণাল যাই বলুন, এক্ষেত্রে কয়েকটি প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায় ৷ প্রথমত, বাংলার রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত মমতার থেকে ওজনদার কোনও নারী চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে কি ? এর উত্তর যদি না হয়, তাহলে তাঁর সম্পর্কে শুধুমাত্র কিছু তথ্য পেশ করেই কি উত্তর সম্পাদকীয় বিভাগে (তাও আবার মমতার হাতে গড়া দল তৃণমূল কংগ্রেসেরই মুখপত্রে !) নিবন্ধ পেশ করা যায় ? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি ৷

For All Latest Updates

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.