কলকাতা/হাওড়া, 25 সেপ্টেম্বর: ফের দুর্নীতি মামলায় চাপ বাড়ল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের । এবার রাজ্যের সমবায় ব্যাংকে নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ালো তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের (Minister of Cooperations Arup Roy) ৷ নাম জড়িয়েছে মন্ত্রীর দফতরের সচিব সত্যব্রত সামন্তেরও ৷ ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিয়ে বিস্ফোরক দাবি জানিয়েছে মামলাকারীরা । তাঁদের অভিযোগ, ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকে অরূপ রায়ের বোন এবং তার ঘনিষ্ঠের বোনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে । এই মামলায় মন্ত্রী অরূপ রায়কে (WB Minister Arup Roy) অভিযুক্ত করে হাইকোর্টে হলফনামা জমা পড়েছে ৷
ইতিমধ্যেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পরেশ অধিকারীর মতো তৃণমূল নেতা, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীদের ৷ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি'র হাতে গ্রেফতারও হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৷ গরুপাচার মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করেছে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ৷ এবার আরেক দুর্নীতি মামলায় নাম উঠে এল মন্ত্রী অরূপ রায়ের ৷ আরও অভিযোগ, সমবায়মন্ত্রীর দফতরের সচিব সত্যব্রত সামন্তের বোন সমবায় দফতরে চাকরি পেয়েছেন । আরও অভিযোগ শূন্য পদের সংখ্যার থেকে দ্বিগুণ লোক নিয়োগ করা হয়েছে সমবায় ব্যাংকে । এছাড়াও অন্যান্য জেলার একাধিক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে ।
আরও পড়ুন: মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ইউনিয়ন রুম দখল, তালা ভাঙার নির্দেশ হাইকোর্টের
অভিযোগকারীদের দাবি, রাজ্যের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র মাইতির ভাইপোকেও চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির মাধ্যমে ৷ ব্যাংকের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সিইও (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) প্রণয় কুমার চক্রবর্তীর ভাইপোও চাকরি পেয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে ওই হলফনামাতে । ব্যাংকের সচিব কৌশিক কুলভির ভাইপো, ব্যাংকের অন্যতম অধিকর্তা নিমাই অধিকারীর মেয়েও চাকরি পেয়েছেন বলেও অভিযোগ । এছাড়াও এই চাকরি প্রাপকদের তালিকায় নাম আছে ব্যাংকের অন্যতম অধিকর্তা তপন কুমার কুলিয়ার ছেলেরও ৷ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি প্রয়াত দেবব্রত দাসের ভাইপোর নামও আছে এই তালিকায় ।
তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় (allegation against minister Arup Roy in Cooperative Banks Recruitment) ৷ সমবায় ব্যাংকের নিয়োগ দুর্নীতির যাবতীয় অভিযোগ খন্ডন করে দিয়েছেন তিনি । তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কোনও ঘনিষ্ঠ ওখানে চাকরি পাননি । যদি তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ চাকরি পেয়ে থাকেন প্রয়োজনে দফতর থেকে তিনি পদত্যাগ করবেন । বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, "রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কেউ কেউ মিথ্যে অভিযোগ করছেন । তবে এ ধরনের আষাঢ়ে গল্পের কোনও ভিত্তি নেই ।" হাইকোর্ট যদি এই নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা তার দফতর অথবা তাঁর কাছ থেকে চায় সেক্ষেত্রে তিনি জবাব দেবেন বলেও জানিয়েছেন অরূপ রায় ৷
আরও পড়ুন: মানিক ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে কি জারি হবে লুক আউট নোটিস, আইনি পরামর্শ নিতে হাইকোর্টে ইডি
তাঁর দাবি, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার আগে অর্থাৎ 2010 সালে কেন্দ্রীয় সরকার, নাবার্ড এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছিল । সেক্ষেত্রে ডিসট্রিক্ট সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক, স্টেট কোঅপারেটিভ ব্যাংক এবং সমবায় গুলিকে অটোনমি দেওয়া হয়েছিল । সেখানে বলা হয়েছিল, ব্যাংক তাদের খুশি মতো নিয়োগ করতে পারে, এর মধ্যে সমবায় দফতরের বা কো-অপারেটিভ সার্ভিস কমিশনের হস্তক্ষেপের কোনো জায়গা ছিল না । কাজেই এই নিয়ে যা বলা হচ্ছে সবকিছু ভিত্তিহীন ।
ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, "আমার বোন একজন স্কুল টিচার । আর এক দিদি মারা গিয়েছেন । এছাড়াও দুই দিদি আছেন । তাদের একজনের বয়স 65 এবং একজনের বয়স 70 বছর । সুতরাং এইসব আষাঢ়ে গল্প কে কোথায় বলছে আমি জানি না । তবে এর কোনও ভিত্তি নেই ।" একইসঙ্গে মন্ত্রী এও জানিয়ে দিয়েছেন, আদালত চাইলে সিবিআই এবং ইডি'র এই বিষয় নিয়ে যেকোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে তিনি প্রস্তুত । তবে এই নিয়োগের সঙ্গে তাঁর বা তাঁর দফতরের কোন যোগ নেই । অতএব সেখানে কি দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়ে তাঁর কোনও বক্তব্যও নেই ।