কলকাতা, 9 মে : লকডাউনে মদের দোকান খুলে দেওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, মদ্যপানের জেরে বিপদ কি আরও বেড়ে যাবে? আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে COVID-19-এর সংক্রমণ? কী বলছেন এই বিষয়ে চিকিৎসকরা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, COVID-19-এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না অ্যালকোহল। শুধুমাত্র তাই নয়। অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তেমনই, অ্যালকোহল ব্যবহারের জেরে হিংসাত্মক ঘটনাও বেড়ে যেতে পারে। অ্যালকোহল ব্যবহারের জেরে মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হতে পারে। সব মিলিয়ে COVID-19 প্রতিরোধের লক্ষ্যে লকডাউনের সময় অ্যালকোহলের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে জানিয়েছে WHO । অথচ, লকডাউনের মধ্যেই মদের দোকান খোলার সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকী অনলাইনে মদ সরবরাহের বিষয়টি নিয়েও ভাবনা-চিন্তা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, মদ্যপানের জেরে COVID-19 সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
R G কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন,মদ্যপান করে কখনও COVID-19 প্রতিরোধ করা যায় না। কিছু মানুষের এমন ধারণা রয়েছে, যেহেতু হ্যান্ড স্যানিটাইজার হিসেবে আমরা অ্যালকোহল ব্যবহার করি সুতরাং মদ্যপান করলে COVID-19 প্রতিরোধ সম্ভব। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার হিসেবে যে অ্যালকোহলের ব্যবহার হয়, তাতে অ্যালকোহল পরিমাণ থাকে 65 শতাংশের বেশি এবং পানীয় হিসেবে যে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় সেখানে অ্যালকোহলের পরিমাণ থাকে 40 শতাংশের মতো।
কিছু মানুষের ধারণা হল রক্ত শোধনের কাজ করে অ্যালকোহল। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, মদ্যপানের পরে সেটা পেটে গিয়ে ইন্টেসটাইন অ্যাবজর্পশন হয়, লিভারে গিয়ে মেটাবোলাইজড হয়। এই মেটাবোলাইজড রক্তে আসে অ্যালকোহলের অন্য রূপে। এই পদার্থ কখনই কোনও জীবাণুকে মারতে সক্ষম নয়। অন্যদিকে মদ্যপান করলে মানুষের ইমিউনিটি পাওয়ার কিছুটা কমে যায়। COVID-19 থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ানো। যাঁদের ইমিউনিটি পাওয়ার ভালো রয়েছে, COVID-19-এ আক্রান্ত হলে তাঁদের ক্ষেত্রে খুব বেশি জটিলতা দেখা দেয় না। যাদের ইমিউনিটি পাওয়ার কম , তাঁদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুও হয়।
মদ্যপান করলে মানুষের ইমিউনিটি পাওয়ার কমে যায়। COVID-19 প্রতিরোধ করার শক্তি কমে যায়। এবং আরও বেশি জটিলতা দেখা দেবে। মদ্যপান করলে মাথা একটু হালকা হয়। COVID-19 প্রতিরোধের উপায় হিসেবে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার এবং সোশাল ডিস্ট্যান্স মেনে চলার কথা বলা হয়। মদ্যপান করলে এই তিনটি বিষয় মেনটেন করা সম্ভব নয়। মদ কেনার জন্য যাঁরা বিভিন্ন দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা খুব কঠিন কাজ। এভাবে যদি মদ বিক্রি হতে থাকে, তাতে COVID-19-এর ভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থেকে যায়।
রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক অর্পিত সাহা বলেন মদের সঙ্গে COVID-19-এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। প্রত্যক্ষ সম্পর্ক কী? COVID-19 প্রধানত ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। কারণ, COVID-19-এর যে রিসেপ্টর মানুষের শরীরে রয়েছে তা প্রধানত ফুসফুসেই থাকে। COVID-19-এর স্পাইক প্রোটিন ফিউরিন নামের এনজাইমের মাধ্যমে ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে COVID-19-এর সংক্রমণ ঘটলে শ্বাসকষ্ট হয়।
কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই ফিউরিন আমাদের GIT এবং লিভারেও থাকে। কেস স্টাডি করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র ফুসফুসের উপসর্গ নয়, লিভার ফেলিওর-ও দেখা যাচ্ছে। এটা COVID-19-এর সঙ্গে লিভারের সরাসরি সম্পর্ক। মদ খাওয়া হলে মেটাবলিজম হয় লিভারে। লিভারে গিয়ে অ্যাসিটালডিহাইড তৈরি হয় যেটা খুব টক্সিক। এটা লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছুটা সময় পেলে লিভার এটা ঠিক করে নেয়। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা খুব খারাপ খবর যে, এতদিন জানা ছিল ধূমপানের সঙ্গে হয়তো COVID-19-এর রিলেশন রয়েছে, কিন্তু মদের সঙ্গেও COVID-19-এর রিলেশন পাওয়া যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা মদ্যপান করছেন, অ্যাসিটালডিহাইড লিভারের ক্ষতি করছে, এর ফলে প্রচুর NADPH প্রোডাকশন হয়, যেটায় টক্সিটেটিভ স্ট্রেস হয়। এর ফলে বিভিন্নভাবে কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ এবং অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি প্রধানত লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে রাখছে। এর ফলে ইমিউন সাপ্রেসড অবস্থা তৈরি হয়। মদ মেপে খাওয়া হচ্ছে না। যখন খাওয়া হয় অনেকটাই বেশি হয়ে যায়। পরিমাণের সে রকম কোনও সীমা নেই। যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন বা, বেশ কিছুদিন ধরে করছেন, লিভারের সঙ্গে যদি অ্যাসোসিয়েশন দেখা হয় তাহলে লিভারে ক্ষতি হতে থাকে। হয়তো সকলের সিরোসিস অফ লিভার নয়। কিন্তু যাঁরা মদ্যপান করছেন তাঁদের লিভার ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত এই লিভার মোটেও ভালো নয়। মদ্যপান থেকে যতটা দূরে থাকা সম্ভব হয় ততটাই মঙ্গল।
কোরোনায় মদ আরও বিপদ বাড়াবে ? জানুন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, COVID-19-এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না অ্যালকোহল। শুধুমাত্র তাই নয়। অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তেমনই, অ্যালকোহল ব্যবহারের জেরে হিংসাত্মক ঘটনাও বেড়ে যেতে পারে। অ্যালকোহল ব্যবহারের জেরে মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হতে পারে। সব মিলিয়ে COVID-19 প্রতিরোধের লক্ষ্যে লকডাউনের সময় অ্যালকোহলের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে জানিয়েছে WHO ।
কলকাতা, 9 মে : লকডাউনে মদের দোকান খুলে দেওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, মদ্যপানের জেরে বিপদ কি আরও বেড়ে যাবে? আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে COVID-19-এর সংক্রমণ? কী বলছেন এই বিষয়ে চিকিৎসকরা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, COVID-19-এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না অ্যালকোহল। শুধুমাত্র তাই নয়। অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তেমনই, অ্যালকোহল ব্যবহারের জেরে হিংসাত্মক ঘটনাও বেড়ে যেতে পারে। অ্যালকোহল ব্যবহারের জেরে মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হতে পারে। সব মিলিয়ে COVID-19 প্রতিরোধের লক্ষ্যে লকডাউনের সময় অ্যালকোহলের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে জানিয়েছে WHO । অথচ, লকডাউনের মধ্যেই মদের দোকান খোলার সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকী অনলাইনে মদ সরবরাহের বিষয়টি নিয়েও ভাবনা-চিন্তা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, মদ্যপানের জেরে COVID-19 সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
R G কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন,মদ্যপান করে কখনও COVID-19 প্রতিরোধ করা যায় না। কিছু মানুষের এমন ধারণা রয়েছে, যেহেতু হ্যান্ড স্যানিটাইজার হিসেবে আমরা অ্যালকোহল ব্যবহার করি সুতরাং মদ্যপান করলে COVID-19 প্রতিরোধ সম্ভব। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার হিসেবে যে অ্যালকোহলের ব্যবহার হয়, তাতে অ্যালকোহল পরিমাণ থাকে 65 শতাংশের বেশি এবং পানীয় হিসেবে যে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় সেখানে অ্যালকোহলের পরিমাণ থাকে 40 শতাংশের মতো।
কিছু মানুষের ধারণা হল রক্ত শোধনের কাজ করে অ্যালকোহল। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, মদ্যপানের পরে সেটা পেটে গিয়ে ইন্টেসটাইন অ্যাবজর্পশন হয়, লিভারে গিয়ে মেটাবোলাইজড হয়। এই মেটাবোলাইজড রক্তে আসে অ্যালকোহলের অন্য রূপে। এই পদার্থ কখনই কোনও জীবাণুকে মারতে সক্ষম নয়। অন্যদিকে মদ্যপান করলে মানুষের ইমিউনিটি পাওয়ার কিছুটা কমে যায়। COVID-19 থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ানো। যাঁদের ইমিউনিটি পাওয়ার ভালো রয়েছে, COVID-19-এ আক্রান্ত হলে তাঁদের ক্ষেত্রে খুব বেশি জটিলতা দেখা দেয় না। যাদের ইমিউনিটি পাওয়ার কম , তাঁদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুও হয়।
মদ্যপান করলে মানুষের ইমিউনিটি পাওয়ার কমে যায়। COVID-19 প্রতিরোধ করার শক্তি কমে যায়। এবং আরও বেশি জটিলতা দেখা দেবে। মদ্যপান করলে মাথা একটু হালকা হয়। COVID-19 প্রতিরোধের উপায় হিসেবে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার এবং সোশাল ডিস্ট্যান্স মেনে চলার কথা বলা হয়। মদ্যপান করলে এই তিনটি বিষয় মেনটেন করা সম্ভব নয়। মদ কেনার জন্য যাঁরা বিভিন্ন দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা খুব কঠিন কাজ। এভাবে যদি মদ বিক্রি হতে থাকে, তাতে COVID-19-এর ভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থেকে যায়।
রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক অর্পিত সাহা বলেন মদের সঙ্গে COVID-19-এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। প্রত্যক্ষ সম্পর্ক কী? COVID-19 প্রধানত ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। কারণ, COVID-19-এর যে রিসেপ্টর মানুষের শরীরে রয়েছে তা প্রধানত ফুসফুসেই থাকে। COVID-19-এর স্পাইক প্রোটিন ফিউরিন নামের এনজাইমের মাধ্যমে ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে COVID-19-এর সংক্রমণ ঘটলে শ্বাসকষ্ট হয়।
কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই ফিউরিন আমাদের GIT এবং লিভারেও থাকে। কেস স্টাডি করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র ফুসফুসের উপসর্গ নয়, লিভার ফেলিওর-ও দেখা যাচ্ছে। এটা COVID-19-এর সঙ্গে লিভারের সরাসরি সম্পর্ক। মদ খাওয়া হলে মেটাবলিজম হয় লিভারে। লিভারে গিয়ে অ্যাসিটালডিহাইড তৈরি হয় যেটা খুব টক্সিক। এটা লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছুটা সময় পেলে লিভার এটা ঠিক করে নেয়। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা খুব খারাপ খবর যে, এতদিন জানা ছিল ধূমপানের সঙ্গে হয়তো COVID-19-এর রিলেশন রয়েছে, কিন্তু মদের সঙ্গেও COVID-19-এর রিলেশন পাওয়া যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা মদ্যপান করছেন, অ্যাসিটালডিহাইড লিভারের ক্ষতি করছে, এর ফলে প্রচুর NADPH প্রোডাকশন হয়, যেটায় টক্সিটেটিভ স্ট্রেস হয়। এর ফলে বিভিন্নভাবে কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ এবং অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি প্রধানত লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে রাখছে। এর ফলে ইমিউন সাপ্রেসড অবস্থা তৈরি হয়। মদ মেপে খাওয়া হচ্ছে না। যখন খাওয়া হয় অনেকটাই বেশি হয়ে যায়। পরিমাণের সে রকম কোনও সীমা নেই। যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন বা, বেশ কিছুদিন ধরে করছেন, লিভারের সঙ্গে যদি অ্যাসোসিয়েশন দেখা হয় তাহলে লিভারে ক্ষতি হতে থাকে। হয়তো সকলের সিরোসিস অফ লিভার নয়। কিন্তু যাঁরা মদ্যপান করছেন তাঁদের লিভার ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত এই লিভার মোটেও ভালো নয়। মদ্যপান থেকে যতটা দূরে থাকা সম্ভব হয় ততটাই মঙ্গল।