কলকাতা, 17 ডিসেম্বর : নামমাত্র সাম্মানিকে বছরের পর বছর ধরে কাজ করে আসছেন স্কুলগুলির পার্টটাইম শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীরা । নেই কাজের কোনও স্থায়িত্ব । যে কোনও সময় কাজ হারানোর ভয় রয়েছে । সরকারের কাছে আগেও একাধিকবার আবেদন করা হয়েছিল । কিন্তু এখনও পর্যন্ত হাল ফেরেনি । মুখ তুলে তাকায়নি কেউ । এই পরিস্থিতিতে আজ ফের একবার পথে নামলেন তাঁরা ।
60 বছরের স্থায়ীত্ব, সুনির্দিষ্ট মাসিক বেতন কাঠামো, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তিকরণ-সহ কয়েক দফা দাবিতে আজ নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল স্কুল পার্টটাইম শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী ঐক্যমঞ্চ । সেই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায় 2 হাজার স্কুলের আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মচারী যোগ দিলেন বিক্ষোভ কর্মসূচিতে । এদিন সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল করে ধর্মতলায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে এসে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা । দুপুর থেকে শুরু হওয়া সেই বিক্ষোভ চলছে এখনও । সরকারের থেকে দাবিদাওয়া নিয়ে জবাব না মেলা পর্যন্ত এই অবস্থান চলবে বলেই জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা ।
![পার্ট টাইম স্কুল শিক্ষকদের মিছিল](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/05:18:55:1608205735_wb-kol-02-agitation-of-part-time-school-teachers-7204411_17122020165955_1712f_02183_344.jpg)
আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে স্কুল পার্টটাইম শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী ঐক্যমঞ্চের সহ-সম্পাদক কার্তিক মারিক বলেন, "আমরা বহু বছর ধরে স্কুলে পার্টটাইম শিক্ষকতা করে আসছি । স্কুলের একজন স্থায়ী শিক্ষককে যা যা কাজকর্ম করতে হয়, আমাদেরও তাই করতে হয় । কিন্তু, আমাদের কোনও নির্দিষ্টতা নেই । যখন খুশি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বা প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা আমাদের বরখাস্ত করে দেন । আমাদের কোনও বেতন কাঠামো থাকে না । কেউ 500 টাকা, কেউ 2 হাজার টাকা সাম্মানিকে কাজ করি । আমাদের সমস্ত কাজ করতে হলেও যথাযোগ্য মর্যাদা পাই না । তাই কলেজের পার্টটাইম শিক্ষকদের মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, আমরা চাই আমাদেরও তিনি সেভাবে স্বীকৃতি দিন । আমরা তাঁদের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব । কিন্তু, আমাদের অস্থায়িত্ব দাগটা যেন ঘোচানো হয় ।"
এদিন মোট ছয় দফা দাবি তোলা হয় আংশিক সময়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ থেকে । 60 বছর স্কুলে কাজ করার স্থায়িত্ব দিতে হবে । মাসিক বেতন কাঠামো করতে হবে । যে সমস্ত আংশিক সময়ের শিক্ষক ও কর্মচারীকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে তাঁদের কাজে পুনর্বহাল করতে হবে । সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দিতে হবে । স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । 60 বছর বয়সে অবসরের সময় অবসরকালীন ভাতা, দুর্গাপুজোর বোনাস-সহ সরকারি চাকরিজীবীরা যা যা সুবিধা পান সেগুলি দিতে হবে।
আরও পড়ুন : কন্ট্র্যাক্টচুয়াল, পার্ট টাইম বা গেস্ট নয়, সকলেই এখন থেকে স্টেট এডেড টিচার !
দুপুর 12টা নাগাদ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে জমায়েত করেন 2 হাজারেরও বেশি স্কুলের আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী । সেখানে জমায়েতের পর নবান্নের উদ্দেশে শুরু হয় মিছিল । “নবান্নে চলো, দিদিকে বলো” স্লোগান ওঠে । এস এন ব্যানার্জি রোড, ডোরিনা ক্রসিং হয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আসতেই পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকে দেয় মিছিল । সেখানেই অবস্থানে বসে যান আন্দোলনকারীরা ।
অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল রওনা দেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দিতে । সরকারের তরফে তাঁদের দাবির উত্তরের অপেক্ষায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে চলতে থাকে অবস্থান-বিক্ষোভ ।
প্রতিনিধিদল শিক্ষামন্ত্রীকে ডেপুটেশন দিয়ে আসার পরও অবস্থান কর্মসূচি না তোলার সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনের নেতৃত্বরা । তাঁদের বক্তব্য, "শিক্ষামন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে বলবেন । তারপরে আমাদের জানানো হবে । একথা আমরা আগেও অনেকবার শুনেছি । তাই এবার সরকারের তরফে কোনও ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের দাবির সপক্ষে সদুত্তর না পাওয়া পর্যন্ত, অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।"