ETV Bharat / city

লকডাউন উঠলেই ফের জোড়া "ময়দানে" নামতে চান আইনজীবী-আম্পায়ার - আইনজীবী-আম্পায়ার কল্লোল গুহঠাকুরতা

বর্তমানে দেশের আর পাঁচজন নাগরিকের মতোই ঘরবন্দী তিনি। তবে লকডাউন উঠলেই ফের মাঠে ও হাইকোর্টের জোড়া ময়দানে নেমে পড়তে চান পেশায় আইনজীবী , নেশায় আম্পায়ার কল্লোল গুহঠাকুরতা।

lawyer-umpire Kallol Guhathakurta
কল্লোল গুহঠাকুরতা
author img

By

Published : May 12, 2020, 6:34 PM IST

কলকাতা, 12 মে: "লকডাউনে সকলেই গৃহবন্দী। এই অবস্থায় মাঝেমাঝেই শোকের সাক্ষী হতে হচ্ছে আমাদের। চুনী গোস্বামীর পরলোকগমন এমনই একটি ঘটনা।" বললেন একাধারে আইনজীবী ও আম্পায়ার কল্লোল গুহঠাকুরতা। তাঁর কাছে এখনও উজ্জ্বল প্রিয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের স্মৃতি। বলেন, "শেরিফ থাকাকালীন হাইকোর্টে প্রতিদিন নিজের চেম্বারে আসতেন। কাজের ফাঁকে গল্প করতেন। অত বড় ফুটবলার, জনপ্রিয় মানুষ অথচ অনায়াসে মিশে যেতেন আমাদের সঙ্গে।"

আজ হয়তো লকডাউনে গৃহবন্দী, কিন্তু কল্লোল গুহঠাকুরতা নিজেও তো বৈচিত্রময় এক জীবনের নাম। ক্রিকেট ও আদালত তাঁর চোখে এক হয়ে যায় অনেক সময়েই।যেহেতু পেশায় আইনজীবী মানুষটি ময়দানের গ্রেড 2 আম্পায়ার। তাঁর কথায়, এজলাসে যাঁরা বিচারকের আসনে, বছরের একটা দিন তাঁরাই কিন্তু বাইশগজে বিচারের প্রার্থনায়। ভূমিকা বদলের সেই দিনটাকে উপভোগ করেন কল্লোল গুহঠাকুরতা। বছরের একটি দিন কালো গাউন ছেড়ে, আইনি দস্তাবেজের মোটা বই, মামলার বাদানুবাদ দূরে সরিয়ে আইনজীবীরা ক্রিকেট খেলেন। সেখানে বিচারপতি ও উকিলদের বাইশগজের "মামলার", মানে ম্যাচের আম্পায়ারিং করেন কল্লোলবাবুই।

বর্ষীয়ান কল্লোল গুহঠাকুরতা হাসতে হাসতে বলেন, "সারা বছর মক্কেলের মামলার নিষ্পত্তির জন্য তথ্য প্রমাণ দিয়ে বিচারের আশায় আইনজীবীদের তাকিয়ে থাকতে হয় বিচারপতিদের দিকে। কিন্তু, বছরের একটা দিন, বিচারপতিরা আমার অঙ্গুলি হেলনে আউট, নট আউটের নিষ্পত্তি খোঁজে।"

lawyer-umpire Kallol Guhathakurta
কল্লোল গুহঠাকুরতা, যখন তিনি আইনজীবী।

পেশায় সিভিল ও ক্রিমিনাল লইয়ার তথা কলকাতা ময়দানের গ্রেড টু আম্পায়ার মানুষটির মন ভালো নেই। লকডাউনের বাজারে বন্ধ সব কিছু। ময়দান খা-খা, আদালতেও আপাতত কাজ নেই। তবে, সময় নষ্ট করার লোক তিনি নন। তাই বেহালার নিজের বাড়ির চেম্বারে বসে আইন, আদালত, মামলার ইতিহাস যেমন উল্টে পাল্টে দেখছেন, তেমনই ক্রিকেটের আইন নিয়ে চর্চা করছেন। ডুবে আছেন পঠনপাঠনে। 25 বছর হল কলকাতা ময়দানে আম্পায়ারিং করছেন। এদিকে মামলার কারণে হাইকোর্ট ছাড়াও অন্যান্য কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। প্যাশন এবং প্রফেশনের ভারসাম্য রাখা সহজ নয়। সেই কঠিন কাজ কীভাবে করছেন?

প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেললেন আইনজীবী-আম্পায়ার। বললেন, "শিয়ালদহ কোর্ট, আলিপুর কোর্টে শুনানির দিন আগে থেকে জানানো হয়। সেই মতো পরিকল্পনা করা সম্ভব। জুনিয়রকে পাঠিয়ে তারিখ নেওয়া কিংবা নিজে উপস্থিত হয়ে সওয়াল করে ম্যানেজ দিয়ে থাকি। আগে মামলার দিন জানা থাকলে ওই দিন ম্যাচ না দিতেও বলি CAB-কে। তবে, হাইকোর্টে বিষয়টি সামলানো সহজ হয় না। তখন আম্পায়ারিং-এর নেশাকে সরিয়ে পেশাকে আঁকড়ে ধরতেই হয়।"

lawyer-umpire Kallol Guhathakurta
কল্লোল গুহঠাকুরতা, যখন তিনি আম্পায়ার।

কল্লোলবাবু নিজেই জানান, স্কুল ক্রিকেট ভালো খেললেও ক্রিকেটার হওয়া হয়নি। চাকরির সন্ধান, ওকালতির পড়াশোনার চাপে অনেক কিছুই ছাড়তে হয়েছে। প্রিয় গিটারে হাত পড়ে না অনেকদিন।

এর মধ্যেও 1993 সালে আম্পায়ারিংয়ের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাকে অন্যভাবে আঁকড়ে ধরার তাগিদেই হয়তো! প্রথমবার পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। দ্বিতীয়বার যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। সেদিনের পরীক্ষায় কল্লোল গুহঠাকুরতার সঙ্গে দ্বিতীয় হওয়া অন্য মানুষটি বর্তমানে ভারতীয় বোর্ডের আম্পায়ার।কল্লোলবাবু বলেন আধো আক্ষেপ, "আমি যদি দুই নৌকায় পা না দিয়ে চলতাম তাহলে আমিও হয়তো বোর্ডের আম্পায়ার হতাম।"

চলতি মরশুমে লকডাউনের ঠিক আগে একটি ম্যাচে তিনবার বল উইকেটে লাগলেও বেল পড়েনি। যা নিয়ে ময়দানে বিতর্ক হলেও আউট দেওয়া হয়নি ব্যাটসম্যানকে। ক্রিকেটীয় আইন ঘেঁটে সিদ্ধান্ত দেন, আম্পায়ার কল্লোল গুহঠাকুরতাই।

লকডাউনে ঘরবন্দী। তবে, অবস্থা স্বাভাবিক হলেই ফের মাঠ ও হাইকোর্টের জোড়া ময়দানে নেমে পড়তে চান আইনজীবী-আম্পায়ার।

কলকাতা, 12 মে: "লকডাউনে সকলেই গৃহবন্দী। এই অবস্থায় মাঝেমাঝেই শোকের সাক্ষী হতে হচ্ছে আমাদের। চুনী গোস্বামীর পরলোকগমন এমনই একটি ঘটনা।" বললেন একাধারে আইনজীবী ও আম্পায়ার কল্লোল গুহঠাকুরতা। তাঁর কাছে এখনও উজ্জ্বল প্রিয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের স্মৃতি। বলেন, "শেরিফ থাকাকালীন হাইকোর্টে প্রতিদিন নিজের চেম্বারে আসতেন। কাজের ফাঁকে গল্প করতেন। অত বড় ফুটবলার, জনপ্রিয় মানুষ অথচ অনায়াসে মিশে যেতেন আমাদের সঙ্গে।"

আজ হয়তো লকডাউনে গৃহবন্দী, কিন্তু কল্লোল গুহঠাকুরতা নিজেও তো বৈচিত্রময় এক জীবনের নাম। ক্রিকেট ও আদালত তাঁর চোখে এক হয়ে যায় অনেক সময়েই।যেহেতু পেশায় আইনজীবী মানুষটি ময়দানের গ্রেড 2 আম্পায়ার। তাঁর কথায়, এজলাসে যাঁরা বিচারকের আসনে, বছরের একটা দিন তাঁরাই কিন্তু বাইশগজে বিচারের প্রার্থনায়। ভূমিকা বদলের সেই দিনটাকে উপভোগ করেন কল্লোল গুহঠাকুরতা। বছরের একটি দিন কালো গাউন ছেড়ে, আইনি দস্তাবেজের মোটা বই, মামলার বাদানুবাদ দূরে সরিয়ে আইনজীবীরা ক্রিকেট খেলেন। সেখানে বিচারপতি ও উকিলদের বাইশগজের "মামলার", মানে ম্যাচের আম্পায়ারিং করেন কল্লোলবাবুই।

বর্ষীয়ান কল্লোল গুহঠাকুরতা হাসতে হাসতে বলেন, "সারা বছর মক্কেলের মামলার নিষ্পত্তির জন্য তথ্য প্রমাণ দিয়ে বিচারের আশায় আইনজীবীদের তাকিয়ে থাকতে হয় বিচারপতিদের দিকে। কিন্তু, বছরের একটা দিন, বিচারপতিরা আমার অঙ্গুলি হেলনে আউট, নট আউটের নিষ্পত্তি খোঁজে।"

lawyer-umpire Kallol Guhathakurta
কল্লোল গুহঠাকুরতা, যখন তিনি আইনজীবী।

পেশায় সিভিল ও ক্রিমিনাল লইয়ার তথা কলকাতা ময়দানের গ্রেড টু আম্পায়ার মানুষটির মন ভালো নেই। লকডাউনের বাজারে বন্ধ সব কিছু। ময়দান খা-খা, আদালতেও আপাতত কাজ নেই। তবে, সময় নষ্ট করার লোক তিনি নন। তাই বেহালার নিজের বাড়ির চেম্বারে বসে আইন, আদালত, মামলার ইতিহাস যেমন উল্টে পাল্টে দেখছেন, তেমনই ক্রিকেটের আইন নিয়ে চর্চা করছেন। ডুবে আছেন পঠনপাঠনে। 25 বছর হল কলকাতা ময়দানে আম্পায়ারিং করছেন। এদিকে মামলার কারণে হাইকোর্ট ছাড়াও অন্যান্য কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। প্যাশন এবং প্রফেশনের ভারসাম্য রাখা সহজ নয়। সেই কঠিন কাজ কীভাবে করছেন?

প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেললেন আইনজীবী-আম্পায়ার। বললেন, "শিয়ালদহ কোর্ট, আলিপুর কোর্টে শুনানির দিন আগে থেকে জানানো হয়। সেই মতো পরিকল্পনা করা সম্ভব। জুনিয়রকে পাঠিয়ে তারিখ নেওয়া কিংবা নিজে উপস্থিত হয়ে সওয়াল করে ম্যানেজ দিয়ে থাকি। আগে মামলার দিন জানা থাকলে ওই দিন ম্যাচ না দিতেও বলি CAB-কে। তবে, হাইকোর্টে বিষয়টি সামলানো সহজ হয় না। তখন আম্পায়ারিং-এর নেশাকে সরিয়ে পেশাকে আঁকড়ে ধরতেই হয়।"

lawyer-umpire Kallol Guhathakurta
কল্লোল গুহঠাকুরতা, যখন তিনি আম্পায়ার।

কল্লোলবাবু নিজেই জানান, স্কুল ক্রিকেট ভালো খেললেও ক্রিকেটার হওয়া হয়নি। চাকরির সন্ধান, ওকালতির পড়াশোনার চাপে অনেক কিছুই ছাড়তে হয়েছে। প্রিয় গিটারে হাত পড়ে না অনেকদিন।

এর মধ্যেও 1993 সালে আম্পায়ারিংয়ের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাকে অন্যভাবে আঁকড়ে ধরার তাগিদেই হয়তো! প্রথমবার পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। দ্বিতীয়বার যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। সেদিনের পরীক্ষায় কল্লোল গুহঠাকুরতার সঙ্গে দ্বিতীয় হওয়া অন্য মানুষটি বর্তমানে ভারতীয় বোর্ডের আম্পায়ার।কল্লোলবাবু বলেন আধো আক্ষেপ, "আমি যদি দুই নৌকায় পা না দিয়ে চলতাম তাহলে আমিও হয়তো বোর্ডের আম্পায়ার হতাম।"

চলতি মরশুমে লকডাউনের ঠিক আগে একটি ম্যাচে তিনবার বল উইকেটে লাগলেও বেল পড়েনি। যা নিয়ে ময়দানে বিতর্ক হলেও আউট দেওয়া হয়নি ব্যাটসম্যানকে। ক্রিকেটীয় আইন ঘেঁটে সিদ্ধান্ত দেন, আম্পায়ার কল্লোল গুহঠাকুরতাই।

লকডাউনে ঘরবন্দী। তবে, অবস্থা স্বাভাবিক হলেই ফের মাঠ ও হাইকোর্টের জোড়া ময়দানে নেমে পড়তে চান আইনজীবী-আম্পায়ার।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.