কলকাতা, 8 মে: পরিযায়ী শ্রমিকদের যেভাবে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল তা দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করলেন অধীর চৌধুরি। রেল দপ্তরের কাছে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর আবেদন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ড্রাইভারদের আরও সতর্ক হয়ে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হোক। তিনি বলেন, "ভিনরাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা কতটা মরিয়া, কতটা আতঙ্কিত, কতটা নিরুপায় যে রেলপথ ধরে 60-65 কিলোমিটার পায়ে হেঁটে অবসন্ন হয়ে শেষে রেললাইনেই ঘুমিয়ে পড়েন। অধীর চৌধুরীর মতে গোটাটাই পরিকল্পনাহীন লকডাউনের ফল।"
শুক্রবার মহরাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের কারমাদ স্টেশনের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় 16 জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তাঁরা লকডাউনে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রেল লাইন ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, ভোর রাতে ট্রেন লাইনের উপরে ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর একটি মালবাহী গাড়ি ধাক্কায় মৃত্যু হয় ওই 16 শ্রমিকের।শুক্রবার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অধীর চৌধুরি বলেন, "ট্রেন ধরতে এলে পুলিশের হাতে হেনস্থার শিকার হতে পারেন এই ভেবেই ট্রেন লাইন ধরে আসছিলেন ওই শ্রমিকরা। তাঁদের তরতাজা জীবন কেড়ে নিল পণ্যবাহী ট্রেন। পরিকল্পনাহীন লকডাউন করার এটা বিষ ফল।"
কংগ্রেস নেতার মতে, সঠিক পরিকল্পনা থাকলে শ্রমিকদের আজ এভাবে মৃত্যু হয় না। কেন্দ্রীয় রেল দপ্তরের কাছে অধীর চৌধুরির দাবি, আরও সতর্কতার সঙ্গে ট্রেন চালাবার বিষয়ে রেল চালকদের নির্দেশ দেওয়া হোক। এই বিষয়ে নতুন গাইডলাইন দেওয়া হোক রেল দপ্তরের তরফে। পাশাপাশি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কংগ্রেস নেতার আবেদন, শ্রমিকদের ফেরার বাস ভাড়া রাজ্য সরকার বহন করুক। সরকারের "স্নেহের পরশ" প্রকল্প থেকে সেই ভাড়া বহন করার প্রস্তাব দেন অধীর চৌধুরি।
আজ কংগ্রেস নেতা জানান, দিল্লি ও কর্নাটক সরকার যথাক্রমে শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে 5 হাজার ও 3 হাজার টাকা করে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও শ্রমিকদের ঘরে ফেরার জন্য অর্থ সাহায্য করুক। অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, কর্ণাটক থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের এরাজ্যে ফেরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গে ট্রেন পাঠাতে চেয়েছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
লোকসভার কংগ্রেস সাংসদ দাবি করেন, ভিনরাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিক সহ আটকে পড়া অন্যদের ফেরাতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধীর চৌধুরীর প্রশ্ন, "রাজ্যের মানুষকে ঘরে ফেরাতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কেন দরকার মুখ্যমন্ত্রীর? যেখানে সাতদিন আগে কর্ণাটক থেকে এরাজ্যে ট্রেন পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হল, মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন না!"
অধীর চৌধুরি বলেন, "তামিলনাড়ু, কেরল, মহারাষ্ট্র, পুনে থেকে প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক ঘরে ফিরতে চাইছে। অবিলম্বে লকডাউনে আটকে থাকা মানুষকে এরাজ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হোক। না হলে বারবার ঔরঙ্গাবাদের মতো দুর্ঘটনা ঘটবে।"