কলকাতা ও দিল্লি, 10 সেপ্টেম্বর : এ-যেন বৃত্ত সম্পূর্ণ হল ।
একদিকে লোকসভার দল নেতা । অন্য দিক বছর দুয়েক আগে হাত ছাড়া হওয়া প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মুকুট ফিরে পাওয়া । জাতীয় স্তরের পাশাপাশি রাজ্য কংগ্রেসেও যেন শুরু হল অধীর-যুগ ।
বছর দুয়েক আগে এমনই এক সেপ্টেম্বর । এক ধাক্কায় প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অধীররঞ্জন চৌধুরিকে । ব্যাটন হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, এমন এক জনের হাতে- যাঁকে বেশ কয়েক বছর মাঠে-ময়দানে দেখাই যায়নি । অপ্রত্যাশিত ভাবে সে-দিন সোমেন মিত্র দায়িত্ব পেলেও তেমন বিশেষ কিছুই চমক দেখাতে পারেননি । সোমেন মিত্রের মৃত্যুর পর যখন প্রদেশ সভাপতির নাম নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে, তখনই দায়িত্ব তুলে দেওয়া বহরমপুরের 'নবাবে'র হাতে । সন্দেহ নেই, সোমেন পরবর্তী ব্যাটন অধীরের হাতে যাওয়ার অর্থ ফের তীব্র হতে চলেছে প্রদেশ কংগ্রেসের তৃণমূল বিরোধিতা ।
সোমেন মিত্র দায়িত্ব পাওয়ার পরই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অধীরের মতো কট্টর তৃণমূল বিরোধিতার পথে তিনি হাঁটবেন না । কিন্তু, দ্বিতীয় বার প্রদেশের দায়িত্ব পাওয়া অধীর যে ফের তৃণমূল বিরোধিতায় গতি আনবেন তাতে সন্দেহ নেই ।
আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন । তৃণমূল এবং গেরুয়া শিবিরের আক্রমণের হাতে নিজেদের অস্তিত্ব স্পষ্ট করা এবং সম্মান বজায় রাখার জন্য ইতিমধ্যেই কংগ্রেস এবং বামেরা অলিখিত চুক্তি করে লড়াই চালাচ্ছে । এত দিন তৃণমূল একা থাকলেও বর্তমানে মোদি-শাহরাও নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন । তাই আগামী বছর নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব অধীরের মতো কট্টরপন্থীর হাতে তুলে দেওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে । ফলে কংগ্রেস-বাম জোটে গতি আসবে । তেমনই স্পষ্ট বক্তা অধীরের মমতা-বিরোধিতাকেও কংগ্রেস-বামেরা কাজে লাগাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে । দায়িত্ব পেয়েই সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন অধীর । দলের হাই কমান্ডদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি কেন্দ্র-রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে গতি আনবেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি ।
সোমেন মিত্রের মৃত্যুর পর কে হবেন প্রদেশ সভাপতি তা নিয়ে জল্পনা ক্রমেই বাড়ছিল । অধীরের পাশাপাশি শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছু নাম । তালিকায় ছিল আবদুল মান্নান, মনোজ চক্রবর্তী, দীপা দাশমুন্সি, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরি, নেপাল মাহাতো, শঙ্কর মালাকারের মতো নেতাদের নাম ।
তবে কিছুটা হলেও পাল্লা ভারী ছিল অধীর-প্রদীপ-মান্নানের দিকে । এর মধ্যে রাহুল-সনিয়াদের প্রথম পছন্দ ছিলেন অবশ্যই অধীর । কারণ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে গত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের হাত ধরতে তৎপর হয়েছিলেন অধীর । যদিও তাঁর নিজের জেলা মুর্শিদাবাদ-সহ কিছু জেলায় দু’পক্ষের সমঝোতা মসৃণ হয়নি । আবার গত বছর লোকসভা নির্বাচনে দু’পক্ষের সমঝোতা ভেস্তে গেলেও অধীররের জন্য বহরমপুর লোকসভা আসনে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট । বামফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে RSP ওই আসনে প্রার্থী দিয়ে দিলেও CPI(M) কর্মীরা ভোটের কাজে নেমেছিলেন অধীরের পক্ষে ।
অধীরের হাত আরও শক্ত করেছিল গত সপ্তাহে দিল্লিতে দলের হাইকমান্ডকে লেখা আবদুল মান্নানের চিঠি । অধীর চৌধুরির পক্ষে সওয়াল করে সনিয়াকে চিঠি দিয়েছিলেন মান্নান । প্রথম দফাতেও অধীরকে প্রদেশ সভাপতি করার পিছনে কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছিল মান্নানকে । কিন্তু, সভাপতি হয়ে আসার পরে মত বিরোধের জেরে বিধান ভবনের রাস্তা বয়কট করেছিলেন মান্নান । এ বারে ফের মান্নানের অধীর-প্রস্তাবের পর কংগ্রেস নেতারা বলছেন, দলের স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত । আসলে, নিজের কর্মকাণ্ড মূলত বহরমপুরের মধ্যে আটকে রাখার চেষ্টা করলেও, অধীরের যে একটা জনপ্রিয়তা আছে, তা অনেক কংগ্রেস নেতারই নেই ।
যাই হোক, প্রণব-প্রিয়-সোমেন-গনির পাশে নিজের নাম খোদাই করে ফেললেন অধীর । প্রদেশ সভাপতি হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার জন্য ।