কলকাতা, 26 ডিসেম্বর: বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে অধীর চৌধুরিকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করার দাবি তুললেন কংগ্রেস বিধায়করা। বাম কংগ্রেস জোটের সিলমোহর কংগ্রেস হাইকমান্ড দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো টুইটারে দাবি তোলেন, বাম কংগ্রেস জোটের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে অধীর চৌধুরিকে সামনে রাখতে হবে। বিধানসভায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের ডেপুটি লিডার নেপাল মাহাতো টুইটারে লেখেন, "বাম কংগ্রেস জোটের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ অধীররঞ্জন চৌধুরি।" এই টুইট ঘিরে ফের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সমগ্র বাম শিবির এবং কংগ্রেসের একাংশের মধ্যে। বামফ্রন্টের শরিকদলগুলোও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এর আগেও বাম-কংগ্রেস সমঝোতার বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরিকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করা হবে বলে দাবি করেছিলেন কংগ্রেসের এক যুবনেতা ঋজু ঘোষাল। বৈঠক শেষে এমনটাই দাবি করেছিলেন ঋজু ঘোষাল। যদিও বৈঠকে উপস্থিত বামফ্রন্ট নেতৃত্ব ঋজু ঘোষালের মন্তব্যকে অস্বীকার করেছেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বৈঠকে আলোচনা হয়নি যে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস জোটের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ অধীর চৌধুরিকে করা হোক। সমগ্রটাই কংগ্রেসের একাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে চাউর করছে। এর ফলে জোট প্রক্রিয়ায় তিক্ততা তৈরি হবে।
পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। অনেকেই মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পক্ষ থেকেই এমন টুইট করানো হয়েছে। অধীর চৌধুরিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে বিধানসভা নির্বাচন লড়াই করলে কংগ্রেসের ফল অপেক্ষাকৃত ভালো হবে বলে মনে করছে অধীর শিবির।
নেপাল মাহাতোর এই টুইটে কেবলমাত্র বামফ্রন্টের বিড়ম্বনা নয়। অস্বস্তিতে রয়েছে কংগ্রেসের একাংশের শীর্ষ নেতৃত্ব। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, রাজ্য কংগ্রেসের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার টুইট জোট ঘোষণার পর পরেই এমন দাবি করা কার্যত জোটের প্রতিকূলে চলে যাবে। আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে অধীর চৌধুরিকে দাবি করে জোটের আলোচনায় গেলে ভেস্তে যেতে পারে গোটা জোট প্রক্রিয়া। কংগ্রেসের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এহেন আচরণ থেকে নিজেদের বিরত থাকুন, এমনটাই চাইছে আন্তরিকভাবে জোটপন্থী প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্ব।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে ভেঙে গিয়েছিল বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের জোট সমীকরণ। কংগ্রেস বিধায়কদের সিংহভাগ মনে করছেন, এমন মন্তব্যের জেরে এবারও জোট প্রক্রিয়া ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, বিধানসভা নির্বাচনের জোটের সিদ্ধান্ত এআইসিসি নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মুখ কাকে করা হবে, সেই সিদ্ধান্তও এআইএসসির ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক।
আরও পড়ুন: বিধানসভার অধিবেশন বসলেই আস্থা ভোট চাইবে বিরোধীরা
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছেন, কংগ্রেস দলের কোন বিধায়ক, কী টুইট করলেন, তাতে কিছু যায় আসে না। এখনও পর্যন্ত কোনও বৈঠকে এরকম মুখ্যমন্ত্রী প্রজেক্ট করে নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেকের অনেক দাবি থাকে। সেগুলো জোট প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।