কলকাতা, 17 নভেম্বর : দুর্গাপুজোর মধ্যে বামফ্রন্ট উদ্যোগী হয়েছিল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে বৈঠক করতে। এবার ভাইফোঁটা মিটতে না মিটতেই বামফ্রন্টের সঙ্গে আরও এক প্রস্থ আলোচনা সেরে নিতে উদ্যোগী হলো রাজ্য কংগ্রেসও । কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যৌথ আন্দোলন করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বাম কংগ্রেসের বৈঠকে।আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আসন বন্টন নিয়েও সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে ফোন করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। অতি দ্রুত আসন বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামীকাল RSP-র প্রকাশনা বিভাগ ক্রান্তি প্রেসে বৈঠক করতে চলেছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। আজ কিছুক্ষণ আগে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে টেলিফোন করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। এখন তিনি বহরমপুরে রয়েছেন। দিল্লি ফিরে যাওয়ার আগে দ্রুত বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের ঐক্য, আসন বন্টন নিয়ে তৃতীয় দফার বৈঠক সারতে চান দুই রাজনৈতিক দলই। আগামীকালের বৈঠকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, CPI(M) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, CPI , RSP ,ফরওয়ার্ড ব্লক সহ অন্যান্য শরিক দলের প্রতিনিধিরা আগামীকালের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। রাজ্য কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি সহ কংগ্রেসের রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের সময় যত এগোচ্ছে ততই তৎপর হচ্ছে এরাজ্যের বিরোধী বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই বিহারের নির্বাচনের ফল দেখে উজ্জীবিত হয়েছে বামফ্রন্ট। শাসক দলকে পরাস্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বাম কংগ্রেস জোট।
মূলত কর্মসংস্থান এবং শিল্পায়ন, বিনিয়োগকে সামনে রেখেই BJP এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে চায় বাম কংগ্রেস জোট। রাজ্যের সমস্ত জেলা এবং ব্লক স্তরে শাসকদলের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক কর্মসূচি নেবে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস জোট। শেষ বিধানসভা নির্বাচনের আগে আসন বন্টন নিয়ে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল তা যাতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের সময় না হয় তার জন্য সচেষ্ট রয়েছে দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের গড়ে ফের ভাঙ্গন ধরেছে। কংগ্রেসের এক বিধায়ক সহ পঞ্চায়েত প্রধান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছে। বামফ্রন্টের প্রধান শরিক CPI(M)-এর এক বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছে। তিনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকেই CPI(M)-এ যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেস এবং CPI(M) বিধায়কের দলত্যাগের বিষয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি কিংবা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। অধীর চৌধুরি জানিয়েছেন, দল ভাঙানোর ফলে খুব দ্রুত শাসক দল একই পদ্ধতিতে ছত্রখান হয়ে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে দল ভাঙ্গানো। যে সমস্ত জায়গার কংগ্রেস বিধায়ক ইতিমধ্যেই দল ত্যাগ করেছেন, তাঁরা কেউ বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা না দিয়েই দলবদল করেছেন। তাঁদেরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অধীর চৌধুরি বলেন, "হিম্মত থাকলে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিন। আগামী দিনে সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে কংগ্রেস প্রার্থীরাই জয়ী হবেন। কংগ্রেস দলের অস্তিত্ব থাকবে, তৃণমূল কংগ্রেস ইতিহাস হয়ে যাবে।" বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছেন," আগামীকালের বৈঠক ফলপ্রসূ হবে। " দল ভাঙিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বাঁচতে পারবেনা। চলতি বছরেই আসন বন্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের মধ্যে।যে সমস্ত জায়গায় অতীতে বামফ্রন্টের ফল ভালো হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বামফ্রন্টের প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য আলোচনা হবে। কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তবে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের ঐক্যের ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দিতে হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। কংগ্রেসের বামফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য বিরোধী কিছু বিধায়ক ইতিমধ্যেই জোট ভাঙার জন্য তৎপর হয়েছেন বলে সূত্রের খবর।