কলকাতা, 6 জুলাই: 2 সপ্তাহের মধ্যে কলকাতায় তিনটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা পৌরনিগম এবং সিইএসসি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নজরদারির অভাবের অভিযোগ উঠেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে এ বার কলকাতা পৌরনিগমের আলোক বিভাগের মেয়র পারিষদের কাছে প্রতিটি ওয়ার্ডে নজরদারি কমিটি গঠনের দাবি জানাল অ্যাবেকা বা অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন (ABECA) ৷ এ নিয়ে আলোক বিভাগের মেয়র পারিষদ সন্দীপরঞ্জন বক্সি এবং সিইএসসি’র কাছে ডেপুটেশন জমা দিয়েছে (ABECA Demands Surveillance in Electricity Hooking Case KMC Files GD) ৷ অন্যদিকে, রাজাবাজারে বিদ্যৎস্পৃষ্ট হয়ে বালকের মৃত্যুর ঘটনায় হুকিংয়ের অভিযোগে একটি জেনারেল ডায়রি করেছে পৌরনিগমে আলোক বিভাগ ৷
শহরে একের পর এক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা পৌরনিগম এবং সিইএসসি-র একে অপরের উপর দায় চাপানোর পালা জারি রয়েছে ৷ এ সব দায় ঠেলা বন্ধ করে নজরদারি চালানোর দাবিতে কলকাতা পৌরনিগমের আলোক বিভাগের মেয়র পারিষদ সন্দীপরঞ্জন বক্সির কাছে একটি ডেপুটেশন জমা দিল অ্যাবেকা বা অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন ৷ যেখানে কলকাতার বিদ্যুতের খুঁটিগুলিতে হুকিং ও তারের জঞ্জাল সরানো সহ একাধিক দাবি জানিয়েছে অ্যাবেকা ৷
অ্যাবেকার দাবিগুলি হল-
- প্রতিটি বাতিস্তম্ভে আর্থ-ইন করতে হবে ৷
- যত্রতত্র বাতিস্তম্ভের উপর দিয়ে যাওয়া তারের জঞ্জাল পরিষ্কার করতে হবে ৷
- পৌরনিগমের প্রতিটি ওয়ার্ডে নজরদারি বাড়াতে হবে ৷
- প্রয়োজনে এর জন্য ওয়ার্ডগুলিতে নজরদারি কমিটি গঠন করা হোক ৷
- পাশাপাশি এই ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পৌরনিগম ভবিষ্যতে কী কী পদক্ষেপ নেবে, তা জনগণকে জানাতে হবে ৷
এ নিয়ে অ্যাবেকার সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাস কলকাতা পৌরনিগম এবং সিইএসসি, দু’পক্ষকেই দায়ী করেছেন ৷ তিনি জানান, মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা পৌরনিগম নিজেদের দায় এড়াতে পারে না ৷ আর সিইএসসি কর্তৃপক্ষেরও স্পষ্ট গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি ৷
অন্যদিকে, পরপর হরিদেবপুর, রাজাবাজার এবং ট্যাংরায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় এখনও দায় এড়ানোর একটা চেষ্টা কলকাতা পৌরনিগমের আলোক বিভাগ করে চলেছে বলে অভিযোগ ৷ যেখানে বিভাগের মেয়র পারিষদ সন্দীপরঞ্জন বক্সি রাজাবাজার ও ট্যাংরার ঘটনায় হুকিংয়ের অভিযোগ করেছেন ৷ রাজাবাজারের ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশে একটি জেনারেল ডায়রি করা হয়েছে ৷ ট্যাংরায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুতেও তেমনই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন বিভাগের মেয়র পারিষদ ৷
এ নিয়ে সন্দীপরঞ্জন বক্সি বলেন, ‘‘এখানেও হুকিং করতে গিয়েছিল বলে মনে হচ্ছে ৷ ল্যাম্প পোস্টে আমাদের টাইমার থাকে ৷ যে সময় ঘটনা ঘটেছে আমাদের পোলে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকার কথা নয় ৷ কিন্তু, যেখানে টাইমার লাগানো, সেখানে ওই ব্যক্তি তার গুঁজে কী করছিলেন ? কার অনুমতিতে ল্যাম্পপোস্ট ঘিরে দোকান লাগিয়ে ছিলেন ? এ ক্ষেত্রেও আমরা থানায় অভিযোগ করব ৷’’
আরও পড়ুন: Death in Tangra: হরিদেবপুর-রাজাবাজারের পর ট্যাংরা, এবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত যুবক
কিন্তু, মেয়র পারিষদের এই বক্তব্যের সঙ্গে ট্যাংরার ঘটনার কোনও মিল নেই বলে জানা গিয়েছে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ব্যক্তির দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগে ৷ মৃত ভোলা দাসের শরীরেও আগুন লেগে যায় ৷ তিনি বাঁচার জন্য দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন ৷ সেই সময় বাইরে থাকা বিদ্যুতের তারে হাত লাগতেই তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন ৷ ফলে এক্ষেত্রে কার দাবি সত্যি ? সেই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷
যদিও, সবক’টি ঘটনায় কলকাতা পৌরনিগমের পিএসি-র চেয়ারপার্সন মধুছন্দা দেব কেএমসি ও সিইএসসি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ৷ দু’তরফেই গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ৷ আর এ ক্ষেত্রে ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদেরও নজরদারি চালাতে হবে বলে জানান তিনি ৷ আর সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে হুকিং বন্ধ করতে নজরদারি বাড়াতে হবে বলেও জানান কলকাতা পৌরনিগমের পিএসি চেয়ারপার্সন ৷