কলকাতা, 28 ফেব্রুয়ারি : মহিলার মূত্রে তৈরি হচ্ছে অ্যালকোহল! অথচ ওই মহিলা জীবনে এক ফোঁটা অ্যালকোহল ছুঁয়েও দেখেননি । চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই ধরনের ঘটনাকে বলা হয় ‘ব্লাডার ফারমেন্টেশন সিনড্রোম’। এই অস্বাভাবিকতায় কেউ এক ফোঁটা অ্যালকোহল পান না করলেও শরীরে তৈরি হয়ে যাবে অ্যালকোহল ।
পিটসবার্গের 61 বছর বয়সি ওই মহিলা রোগীর মূত্রথলিতে পাওয়া গেছে অ্যালকোহল। এই রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তবে, তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। এই রোগীর লিভার ক্ষতিগ্রস্ত। এবং, তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এই রোগী এসেছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টার প্রেসবাইটেরিয়ান হাসপাতালে। কেন মূত্রথলিতে তৈরি হয় অ্যালকোহল? এই বিষয়ে বলেছেন ঢাকুরিয়ায় অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের ইউরো সার্জেন বাস্তব ঘোষ ।
মূত্রথলিতে অ্যালকোহল?
ডাক্তার বাস্তব ঘোষ : মূত্রথলিতে অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। পিটসবার্গের এই ঘটনা এই অর্থে বিরল যে, এই কেসটি ওখানে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু থিওরিটিকালি, আমার মনে হয় এই ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ডায়াবেটিসের একজন রোগী, যাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, এমন রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকে। যে কারণে ফাংগাল ইনফেকশন বেশ কমন, এটা কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখতে পাই। এই ইস্ট, এটা এক ধরনের ফাংগাস। এটা সাধারণত শরীরে পাওয়া যায়। কিছু প্যাথলজিক ইস্ট-ও আছে ৷ এবং যে সব রোগীর শরীরে ডায়াবেটিস বা অন্য কোনও কারণে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম, সেই ধরনের রোগীর ইউরিনে ইস্ট গ্রো করে। এই ঘটনা অনেক ক্ষেত্রে আমরা পেয়ে থাকি। এই রকম ক্ষেত্রে যাঁরা ডায়াবেটিক, তাঁদের ইউরিনে সুগার আসছে, বেরিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মূত্রথলিতে অ্যালকোহল পাওয়া সম্ভব। কারণ, শর্করাকে বিভাজন করে অ্যালকোহল তৈরি করে ইস্ট। অ্যালকোহল তৈরির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়। ফলে পিটসবার্গের এই ঘটনা যে খুব অস্বাভাবিক, তা আমার মনে হয় না। তবে, এই ঘটনা ক্লিনিকালি কতটা সিগনিফিকেন্ট সেটা আমরা জানি না, ফলে আমরা খুঁজি না । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, এমন রোগীদের ফাংগাল ইনফেকশন থাকলেও, মূত্রথলিতে অ্যালকোহল থাকার বিষয়টিকে আমরা অ্যাক্টিভলি খুঁজি না ।
এই ঘটনা তা হলে বিরল ঘটনা ?
ডাক্তার বাস্তব ঘোষ: আমরা যদি অ্যালকোহল চিহ্নিত করার চেষ্টা করি, তখন আমরা পেতে পারি। সচরাচর এটা করি না । পিটসবার্গের এই ঘটনায় লিভারের অসুখে ভুগছিলেন রোগী । তাঁর ইউরিনের নমুনায় বার বার অ্যালকোহল পাওয়া যাচ্ছিল । ডাক্তারদের কাছে এটা উদ্বেগের কারণ ছিল। কারণ, লিভারের অসুখের এই রোগী যদি অ্যালকোহল কনজ়িউম করতে থাকেন, তাহলে তাঁর আরও ক্ষতি হবে। এক্ষেত্রে এটা সিগনিফিকেন্ট ছিল বলে ওখানে খুঁজতে চাওয়া হয়েছিল। তবে রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা পাওয়া যায়নি। নিঃশ্বাসের সঙ্গেও পাওয়া যায়নি। এদিক থেকে এই ঘটনা রেয়ার বলা যেতে পারে।
শরীরের অন্যত্র এ ভাবে অ্যালকোহল তৈরি হতে পারে?
ডাক্তার বাস্তব ঘোষ: ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে রক্ত থেকে শর্করা ইউরিনে আসার সম্ভাবনা যথেষ্ট থাকে। মূত্রথলি বা ব্লাডারে ইউরিন কিছুক্ষণ জমে থাকে। কিডনি বা ইউরেটারে জমে থাকছে না। মূত্রথলিতে দুই ঘণ্টা , তিন ঘণ্টা বা সারারাত-ও জমে থাকছে। এদিকে মূত্রথলিতে যদি ইস্ট, ফাংগাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ থাকে, তা হলে ইউরিনে যে শর্করা বা গ্লুকোজ রয়েছে, সেটা ভেঙে অ্যালকোহল তৈরি করার জন্য এই ইস্ট সময় পাচ্ছে।
এভাবে অ্যালকোহল তৈরি হওয়ায় অন্য ক্ষতি হতে পারে?
ডাক্তার বাস্তব ঘোষ: রক্তে শর্করা থাকবে ডায়াবেটিসের রোগীর ক্ষেত্রে। তবে রক্তে যদি ইস্টের সংক্রমণ হয়, যাকে বলা হয় ফাঙ্গিমিয়া, সেটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ফলে অ্যালকোহল তৈরি হোক বা না হোক, সেটা ক্লিনিকালি যতটা সিগনিফিকেন্ট, এই ফাঙ্গিমিয়া বা ফাংগাল সেপটিসেমিয়া এটা কিন্তু একটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
সমীক্ষার কি প্রয়োজন ?
ডাক্তার বাস্তব ঘোষ: একটি ঘটনা চিহ্নিত হয়ে সামনে এসেছে। পিটসবার্গ এই ঘটনা থিওরিটিকালি রেয়ার নাও হতে পারে। খুঁজলে আমরা আরও পাব। বড় মাপের একটি সমীক্ষা দরকার, যেটা প্রমাণ করতে পারে, যদি কারও ইউরিনে অ্যালকোহল পাওয়া যায়। তিনি যদি অ্যালকোহলিক না হন। তাহলে সেটা হয়ত সেপটিসেমিয়া বা ফাঙ্গিমিয়ার প্রাথমিক উপসর্গ হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে। ডায়াবেটিস যাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, যাদের ইউরিনে ইস্ট বা ফাংগাস গ্রো করছে, তাদের ইউরিনে যদি অ্যালকোহল পাওয়া যায়, তা হলে সেই রোগীদের উপরে যদি আমরা এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাই, তাহলে বোঝা যেতে পারে এটা সেপটিসেমিয়া বা ফাঙ্গিমিয়ার প্রাথমিক উপসর্গ কি না।
যিনি অ্যালকোহলিক, তাঁর ক্ষেত্রে এমন হতে পারে?
ডাক্তার বাস্তব ঘোষ: এটা অ্যালকোহলিক বা নন-অ্যালকোহলিকের বিষয় নয়। ইউরিনে যাদের সুগার বেড়ে যাচ্ছে, কিডনি ধরে রাখতে পারছে না, এর সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকার কারণে ফাংগাল ইনফেকশন হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকলেই ফাংগাল ইনফেকশন হয় না। দীর্ঘদিন ধরে যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই অথবা ক্যান্সারের কারণে কেমোথেরাপি চলছে, এইডসে আক্রান্ত, অনেকদিন ধরে এই জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক চলছে এসব ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এমন ক্ষেত্রে ইস্ট বা ফাংগাল ইনফেকশন কমন মূত্রথলিতে জমে যাওয়া ।
এই অ্যালকোহলে শরীরের অন্য কোনও অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে?
ডাক্তার বাস্তব ঘোষ: এতটাও অ্যালকোহল তৈরি করবে না যেটা কি না ওখান থেকে রিঅ্যাবজ়রশন হতে পারে। মূত্রথলি এ্যানাটমি বা ফিজ়িওলজি যেরকম, ওখান থেকে রিঅ্যাবজ়রশনের সম্ভাবনা খুব-ই কম ।