কলকাতা, ১৩ ফেব্রুয়ারি : বুথ স্তরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখার জন্য একটি অ্যাপ আনতে চলেছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর। শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের একটি সংগঠনের বক্তব্য, ভোটের ডিউটিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা। ভোটের ডিউটি করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলের রক্তচক্ষুর মুখে পড়তে হয় তাঁদের। অনেক সময় অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয় না। তাঁদের অভিযোগ, অনেক সময় সেক্টর অফিসার, রিটার্নিং অফিসাররা যথাযথ ভূমিকা পালন করেন না। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করেই অ্যাপ আনতে চলেছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর। এই অ্যাপের মাধ্যমে বুথ স্তরের ভোটকর্মীরা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরে। দিতে পারবেন রিপোর্ট। জানাতে পারবেন অভিযোগ। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি শুধুমাত্র SMS বেসড ভোট মনিটরিং সিস্টেমের উপর ভরসা রাখতে চাইছে না দপ্তরের কর্তারা। সেটিও অ্যাপ তৈরির অন্যতম কারণ বলে সূত্রের খবর।
উপযুক্ত নিরাপত্তা চেয়েছিলেন ভোটকর্মীরা। দিন কয়েক আগে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরে জমা দেয় একটি স্মারকলিপি। ঐক্য মঞ্চের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রিজ়াইডিং অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে সেক্টর অফিসার, রিটার্নিং অফিসাররা যথাযথ ভূমিকা পালন করেন না। অনেক সময় তাঁরা প্রিজ়াইডিং অফিসারদের অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করেন। স্মারকলিপি জমা দিয়ে এর বিহিত চেয়েছিলেন শিক্ষকরা। সঙ্গে দাবি করেছিলেন উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রিজ়াইডিং অফিসারের ডিউটি করতে গিয়ে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের রতনপুর হাই মাদ্রাসার শিক্ষক রাজকুমার রায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে রেললাইনের ধারে উদ্ধার হয় তাঁর ছিন্নভিন্ন দেহ। দেগঙ্গার মনিরুল হাসান রাজারহাটের ডিউটি করতে এসে গুরুতর আহত হন। এইসব ঘটনার পর ভোটের ডিউটি করতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে দাবি করেছিল ঐক্য মঞ্চ। মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারীর দাবি, রাজ্যের অসংখ্য বুথে শিক্ষকদের উপর শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন চলে। অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে রাজনৈতিক দলগুলির অন্যায় এবং অনৈতিক আচরণের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হন তাঁরা। সেই সূত্রে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরে মোট ৮ দফা দাবি পেশ করে ঐক্য মঞ্চ। সেই দাবির একটি ছিল, কমিশনকে সরাসরি অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রাখা হোক। কিংকরবাবুর দাবি, স্মারকলিপি জমা দেওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে কথা হয় রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক সঞ্জয় বসুর। তিনি তাঁদের নাকি আশ্বস্ত করেছেন। জানিয়েছেন, সরাসরি যোগাযোগ রাখার জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে।
শিক্ষক সংগঠনের দাবি পেশের বহু আগে থেকেই চলছে অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা। মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তর সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে। দপ্তরের এক কর্তা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, SMS বেসড ভোট মনিটরিং সিস্টেম ১০০ শতাংশ কার্যকরী হয় না। ফলে ভোটের শতাংশের হিসেব আসতেও সমস্যা হয়ে যায় অনেক সময়। কারণ নানা সমস্যার কারণে অনেক সময় প্রিজ়াইডিং অফিসারের SMS মুখ্য নির্বাচনী কমিশনের আধিকারিকের দপ্তরে পৌঁছয় না। মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরের কর্তাদের আশা, নির্মীয়মাণ অ্যাপটির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।