ETV Bharat / city

ব্রিটেনে প্রতারণার পর্দা ফাঁস, জাতীয় স্তরে সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চের জয়জয়কার - স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

রাজ্যের সাত পুলিশ আধিকারিককে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বিশেষ সম্মান জানানো হচ্ছে এবছর । তার মধ্যে দুই আধিকারিক কলকাতা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চে কর্মরত । তার মধ্যে এক আধিকারিকের কাজের প্রশংসা করেছে খোদ লন্ডন পুলিশ ।

kolkata police
কলকাতা পুলিশ
author img

By

Published : Aug 13, 2020, 2:19 PM IST

Updated : Aug 13, 2020, 3:00 PM IST

কলকাতা, 13 অগাস্ট : কলকাতায় বসে লন্ডন সিটি পুলিশের কাছে জমা পড়া অভিযোগের সমাধান করেছিলেন এক পুলিশ আধিকারক । যার জন্য লন্ডন পুলিশ কলকাতা পুলিশকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছিল । আর সেই কাজের জন্য এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে পদক পাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডেনিস অনুপ লাকড়া । তাঁর সঙ্গে আরও ছয়জন পুলিশ আধিকারিক এই সম্মান পাচ্ছেন ।

এ রাজ্য থেকে এবার যে সাতজন পদক পেতে চলেছেন, তার মধ্যে রয়েছেন-

1. সুবীর কর্মকার (ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

2.শুক্লা সিংহ রায় (ইন্সপেক্টর, কলকাতা পুলিশ)

3.ডেনিস অনুপ লাকড়া (ইন্সপেক্টর, কলকাতা পুলিশ)

4.বিজয় কুমার যাদব (ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

5.সুপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় (সাব ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

6.প্রদীপ পাল (সাব ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

7.বর্ণালী সরকার (সাব ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

কলকাতা পুলিশের দুই ইন্সপেক্টর ডেনিস অনুপ লাকড়া এবং শুক্লা সিংহ রায়, দুজনেই সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে কর্মরত । গতবছর দুটি পৃথক মামলায় তাঁরা রীতিমতো কৃতিত্ব দেখিয়েছেন । তার মধ্যে একটি মামলা পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি । খোদ লন্ডনের পুলিশ কমিশনার কলকাতা পুলিশের কাজের জন্য নগরপাল অনুজ শর্মাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ফোন করেন । কলকাতা পুলিশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে চিঠি পর্যন্ত দেন তিনি ।

কী ছিল সেই মামলা?

গত বছর অক্টোবর মাসে দিল্লিবাসী ভূপিন্দর সিং অভিযোগ দায়ের করেন কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানায় । তিনি মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের অ্যাটর্নি । দিল্লির বারাখাম্বা রোডে তাঁর অফিস । তিনি অভিযোগ করেন, ভারত থেকে টেকনিকাল সাপোর্টের নামে লন্ডন এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশের সংস্থা এবং সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে একদল যুবক । পুরোটা করা হচ্ছে মাইক্রোসফট-এর নামে । শুধুমাত্র লন্ডনে এই চক্রটি 23 হাজার ব্যক্তি এবং সংস্থার সঙ্গে প্রতারণা করে । মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পদ্ধতিতে তদন্ত চালিয়ে বুঝতে পেরেছে এই অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে কলকাতা থেকে । অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ । তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডেনিস অনুপ লাকড়াকে । তদন্তে নেমে তিনি জানতে পারেন উইজার্ট ই-মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থার কথা । গত 18 অক্টোবর সেখানে হানা দেন ডেনিস এবং তাঁর দল । তোপসিয়ার উইজ়ার্ড হাউজ়ে রীতিমতো সাজানো-গোছানো অফিস । সেখান থেকেই চালানো হচ্ছিল বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণা চক্র । মূলত ম্যালওয়্যার পাঠানোর মাধ্যমে প্রতারণার চালাচ্ছিল ওই সংস্থা । উইজ়ার্ড ই-মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার ছিলেন সিদ্ধার্থ বাথানিয়া । তার সঙ্গী ছিল ইশফাক আহমেদ এবং রিজ়ওয়ান আলি । সেখান থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং হার্ডওয়্যার । তিনজনকেই গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ । পরে জানা যায় শুধুমাত্র এই একটি সংস্থা নয় । প্রতারণা চক্রে জড়িত রয়েছে আরও একটি সংস্থা । নাম ভিশন কল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড । এই প্রতারণা সংস্থাটি অফিস ফেঁদেছিল রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডে । বাটা মোড়ের কাছে সেই অফিসে তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশ । সেখানে একটি কল সেন্টার ছিল । সেখানকার টেলিকলাররা নিজেদের মাইক্রোসফট-এর টেকনিকাল সাপোর্ট দলের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা চক্র চালাত । সেখান থেকে উদ্ধার হয় একটি ম্যাকবুক, একটি ল্যাপটপ, চারটে হার্ডডিস্ক, দু'টি মোবাইল ফোন, ATM কার্ড, এবং প্রচুর ডাটা ব্যাঙ্ক । প্রতারণা চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় মাসুদুর মহম্মদ, জোয়েব তালাত, খালিদ সুলতান, এবং সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে । কলকাতা পুলিশের এই তৎপরতায় রীতিমতো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে লন্ডন সিটি পুলিশ ।

লন্ডন সিটি পুলিশের কমিশনার কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মাকে চিঠি লেখেন । তিনি লেখেন, “ভারত এবং ব্রিটেনের তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নতি অপরাধীদের সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে । আমি বিশ্বাস করতাম এদের বিরুদ্ধে কিছুই করা যাবে না । আমি ভুল ছিলাম । কলকাতা পুলিশ যে কাজ করেছে তাতে আমার সেই ভুল ভেঙেছে । আমার কাছে পরিস্কার যে, আপনারা কলকাতায় এধরনের অপরাধ চক্র বরদাস্ত করবেন না । আমরা আপনাদের ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি । আশা করি ভবিষ্যতেও আমরা একসঙ্গে কাজ করব ।" এই মামলার তদন্ত এবং চার্জশিট তৈরি খুব সহজ ছিল না । আইনগত প্রক্রিয়াও ছিল যথেষ্ট জটিল । বহু কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেচিল । পাশাপাশি এই মামলায় প্রতারিতরা সবাই বিদেশি নাগরিক । প্রতারিতদের বক্তব্য এই মামলার অন্যতম চাবি-কাঠি ছিল । নিয়ম অনুযায়ী MLAT ( মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রিটি)-র মাধ্যমে আসে । এটি সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয় । আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্ষেত্রে MLAT-এর গুরুত্ব অপরিসীম । ভারতের তরফে MLAT-এর নোডাল এজেন্সি CBI । এই মামলার ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশকে চূড়ান্ত সহযোগিতা করে CBI । এসব ক্ষেত্রে সাধারণত তথ্য আসতে সময় লাগে ছয় থেকে নয় মাস । কিন্তু কলকাতা পুলিশের সক্রিয়তা ও CBI এবং লন্ডন পুলিশের সহযোগিতায় তথ্য চলে আসে মাত্র সাত দিনে ।

অন্যদিকে গত 5 নভেম্বর কলকাতা পুলিশের হাতে আসে আরও একটি জটিল মামলা । এক যুবতি এবং তাঁর মায়ের নগ্ন ছবি পাঠানো হয় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে । সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় । বলা হয়, এর থেকে মুক্তি পেতে দিতে হবে 10 লাখ টাকা । কলকাতা পুলিশে অভিযোগ জানান ওই যুবতি । এই মামলার তদন্তভার পান শুক্লা সিংহ রায় । মামলার তদন্তে নেমে রীতিমতো অন্ধকারে হাতড়াতে হয় কলকাতা পুলিশকে । সূত্র বলতে ছিল শুধুমাত্র একটি ফোন নম্বর । কিন্তু সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয় । বেশ কিছুদিন পরে সেই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে আর একটি নম্বরের সন্ধান পাওয়া যায় । পুলিশ সূত্রে খবর, সেটি ব্যবহার করা হচ্ছিল প্রথমে ঝাড়খণ্ডের দেওঘর, পরে বিহারের বাঙ্কা, তারপর মধ্যপ্রদেশের রাওয়ায় । কলকাতা পুলিশ সেটিকে ট্র্যাক করতে গেলেই ডি-অ্যাকটিভেট করে দেওয়া হচ্ছিল । কিন্তু হাল ছাড়েননি তদন্তকারীরা । এবছর জানুয়ারিতে ওই ফোনের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় সল্টলেক সিটি সেন্টারের কাছে । এক মুহূর্তও দেরি করেননি শুক্লা সিংহ রায় । সিটি সেন্টারের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক যুবককে । পরে এই ঘটনায় জড়িত আরও দুই যুবকের সন্ধান পাওয়া যায় । তাদের গ্রেপ্তার করা হয় । ধৃতদের কাছে উদ্ধার হয় বহু যুবতি ও কিশোরীর নগ্ন ছবি এবং ভিডিয়ো । সেই মামলার তদন্তের স্বীকৃতি হিসেবে শুক্লাও এবার পাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পদক ।

কলকাতা, 13 অগাস্ট : কলকাতায় বসে লন্ডন সিটি পুলিশের কাছে জমা পড়া অভিযোগের সমাধান করেছিলেন এক পুলিশ আধিকারক । যার জন্য লন্ডন পুলিশ কলকাতা পুলিশকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছিল । আর সেই কাজের জন্য এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে পদক পাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডেনিস অনুপ লাকড়া । তাঁর সঙ্গে আরও ছয়জন পুলিশ আধিকারিক এই সম্মান পাচ্ছেন ।

এ রাজ্য থেকে এবার যে সাতজন পদক পেতে চলেছেন, তার মধ্যে রয়েছেন-

1. সুবীর কর্মকার (ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

2.শুক্লা সিংহ রায় (ইন্সপেক্টর, কলকাতা পুলিশ)

3.ডেনিস অনুপ লাকড়া (ইন্সপেক্টর, কলকাতা পুলিশ)

4.বিজয় কুমার যাদব (ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

5.সুপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় (সাব ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

6.প্রদীপ পাল (সাব ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

7.বর্ণালী সরকার (সাব ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ)

কলকাতা পুলিশের দুই ইন্সপেক্টর ডেনিস অনুপ লাকড়া এবং শুক্লা সিংহ রায়, দুজনেই সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে কর্মরত । গতবছর দুটি পৃথক মামলায় তাঁরা রীতিমতো কৃতিত্ব দেখিয়েছেন । তার মধ্যে একটি মামলা পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি । খোদ লন্ডনের পুলিশ কমিশনার কলকাতা পুলিশের কাজের জন্য নগরপাল অনুজ শর্মাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ফোন করেন । কলকাতা পুলিশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে চিঠি পর্যন্ত দেন তিনি ।

কী ছিল সেই মামলা?

গত বছর অক্টোবর মাসে দিল্লিবাসী ভূপিন্দর সিং অভিযোগ দায়ের করেন কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানায় । তিনি মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের অ্যাটর্নি । দিল্লির বারাখাম্বা রোডে তাঁর অফিস । তিনি অভিযোগ করেন, ভারত থেকে টেকনিকাল সাপোর্টের নামে লন্ডন এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশের সংস্থা এবং সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে একদল যুবক । পুরোটা করা হচ্ছে মাইক্রোসফট-এর নামে । শুধুমাত্র লন্ডনে এই চক্রটি 23 হাজার ব্যক্তি এবং সংস্থার সঙ্গে প্রতারণা করে । মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পদ্ধতিতে তদন্ত চালিয়ে বুঝতে পেরেছে এই অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে কলকাতা থেকে । অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ । তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডেনিস অনুপ লাকড়াকে । তদন্তে নেমে তিনি জানতে পারেন উইজার্ট ই-মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থার কথা । গত 18 অক্টোবর সেখানে হানা দেন ডেনিস এবং তাঁর দল । তোপসিয়ার উইজ়ার্ড হাউজ়ে রীতিমতো সাজানো-গোছানো অফিস । সেখান থেকেই চালানো হচ্ছিল বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণা চক্র । মূলত ম্যালওয়্যার পাঠানোর মাধ্যমে প্রতারণার চালাচ্ছিল ওই সংস্থা । উইজ়ার্ড ই-মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার ছিলেন সিদ্ধার্থ বাথানিয়া । তার সঙ্গী ছিল ইশফাক আহমেদ এবং রিজ়ওয়ান আলি । সেখান থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং হার্ডওয়্যার । তিনজনকেই গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ । পরে জানা যায় শুধুমাত্র এই একটি সংস্থা নয় । প্রতারণা চক্রে জড়িত রয়েছে আরও একটি সংস্থা । নাম ভিশন কল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড । এই প্রতারণা সংস্থাটি অফিস ফেঁদেছিল রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডে । বাটা মোড়ের কাছে সেই অফিসে তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশ । সেখানে একটি কল সেন্টার ছিল । সেখানকার টেলিকলাররা নিজেদের মাইক্রোসফট-এর টেকনিকাল সাপোর্ট দলের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা চক্র চালাত । সেখান থেকে উদ্ধার হয় একটি ম্যাকবুক, একটি ল্যাপটপ, চারটে হার্ডডিস্ক, দু'টি মোবাইল ফোন, ATM কার্ড, এবং প্রচুর ডাটা ব্যাঙ্ক । প্রতারণা চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় মাসুদুর মহম্মদ, জোয়েব তালাত, খালিদ সুলতান, এবং সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে । কলকাতা পুলিশের এই তৎপরতায় রীতিমতো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে লন্ডন সিটি পুলিশ ।

লন্ডন সিটি পুলিশের কমিশনার কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মাকে চিঠি লেখেন । তিনি লেখেন, “ভারত এবং ব্রিটেনের তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নতি অপরাধীদের সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে । আমি বিশ্বাস করতাম এদের বিরুদ্ধে কিছুই করা যাবে না । আমি ভুল ছিলাম । কলকাতা পুলিশ যে কাজ করেছে তাতে আমার সেই ভুল ভেঙেছে । আমার কাছে পরিস্কার যে, আপনারা কলকাতায় এধরনের অপরাধ চক্র বরদাস্ত করবেন না । আমরা আপনাদের ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি । আশা করি ভবিষ্যতেও আমরা একসঙ্গে কাজ করব ।" এই মামলার তদন্ত এবং চার্জশিট তৈরি খুব সহজ ছিল না । আইনগত প্রক্রিয়াও ছিল যথেষ্ট জটিল । বহু কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেচিল । পাশাপাশি এই মামলায় প্রতারিতরা সবাই বিদেশি নাগরিক । প্রতারিতদের বক্তব্য এই মামলার অন্যতম চাবি-কাঠি ছিল । নিয়ম অনুযায়ী MLAT ( মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রিটি)-র মাধ্যমে আসে । এটি সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয় । আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্ষেত্রে MLAT-এর গুরুত্ব অপরিসীম । ভারতের তরফে MLAT-এর নোডাল এজেন্সি CBI । এই মামলার ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশকে চূড়ান্ত সহযোগিতা করে CBI । এসব ক্ষেত্রে সাধারণত তথ্য আসতে সময় লাগে ছয় থেকে নয় মাস । কিন্তু কলকাতা পুলিশের সক্রিয়তা ও CBI এবং লন্ডন পুলিশের সহযোগিতায় তথ্য চলে আসে মাত্র সাত দিনে ।

অন্যদিকে গত 5 নভেম্বর কলকাতা পুলিশের হাতে আসে আরও একটি জটিল মামলা । এক যুবতি এবং তাঁর মায়ের নগ্ন ছবি পাঠানো হয় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে । সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় । বলা হয়, এর থেকে মুক্তি পেতে দিতে হবে 10 লাখ টাকা । কলকাতা পুলিশে অভিযোগ জানান ওই যুবতি । এই মামলার তদন্তভার পান শুক্লা সিংহ রায় । মামলার তদন্তে নেমে রীতিমতো অন্ধকারে হাতড়াতে হয় কলকাতা পুলিশকে । সূত্র বলতে ছিল শুধুমাত্র একটি ফোন নম্বর । কিন্তু সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয় । বেশ কিছুদিন পরে সেই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে আর একটি নম্বরের সন্ধান পাওয়া যায় । পুলিশ সূত্রে খবর, সেটি ব্যবহার করা হচ্ছিল প্রথমে ঝাড়খণ্ডের দেওঘর, পরে বিহারের বাঙ্কা, তারপর মধ্যপ্রদেশের রাওয়ায় । কলকাতা পুলিশ সেটিকে ট্র্যাক করতে গেলেই ডি-অ্যাকটিভেট করে দেওয়া হচ্ছিল । কিন্তু হাল ছাড়েননি তদন্তকারীরা । এবছর জানুয়ারিতে ওই ফোনের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় সল্টলেক সিটি সেন্টারের কাছে । এক মুহূর্তও দেরি করেননি শুক্লা সিংহ রায় । সিটি সেন্টারের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক যুবককে । পরে এই ঘটনায় জড়িত আরও দুই যুবকের সন্ধান পাওয়া যায় । তাদের গ্রেপ্তার করা হয় । ধৃতদের কাছে উদ্ধার হয় বহু যুবতি ও কিশোরীর নগ্ন ছবি এবং ভিডিয়ো । সেই মামলার তদন্তের স্বীকৃতি হিসেবে শুক্লাও এবার পাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পদক ।

Last Updated : Aug 13, 2020, 3:00 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.