কলকাতা, 28 অগাস্ট: কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটের সন্ধান ৷ প্রেমিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা অভিযোগের তদন্তে নেমে সাট্টা চক্রের পরদা ফাঁস করল নিউ আলিপুর থানার পুলিশ ৷ এই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ৷
বারাণসীর পাঁচকোশির বাসিন্দা হেমন্ত কুমার মৌর্যর সঙ্গে বন্ধন ব্যাংকের অফিসার প্রিয়া ধুসিয়ার সম্পর্ক ছিল 2017 সাল থেকে ৷ স্বভাবে নম্র, শিক্ষিত হেমন্ত প্রিয়াকে জানায়, সে কলকাতার নিউ আলিপুরের একটি মেসে থাকে ৷ কয়েকবার হেমন্তর সঙ্গে কলকাতায় দেখাও করতে আসেন প্রিয়া ৷ ব্যবসা ও চাকরির অজুহাতে প্রিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছিল হেমন্ত ৷ দু'টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠাতে বলে হেমন্ত ৷ পরে প্রিয়ার পরিবার হেমন্তকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ৷ কিন্তু তখন হেমন্ত এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে ৷ তখন টাকা ফেরত দিতে হেমন্তকে চাপ দিতে শুরু করে প্রিয়ার পরিবার ৷ কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে উলটে ফোনে হেমন্ত ও তার বন্ধুরা প্রিয়ার পরিবারকে হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ ৷ 18 অগাস্ট কলকাতার নিউ আলিপুর থানায় এসে হেমন্তের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করে প্রিয়া ৷
এবার হেমন্তের ফোনের সমস্ত তথ্য নেওয়া শুরু করেন তদন্তকারীরা ৷ জানা যায়, ওই নম্বরটি নেওয়া হয়েছে চারু মার্কেট থানার দেশপ্রাণ শাসমল রোডের জনৈক সুব্রত মৈত্রর নামে ৷ সেই ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারে 2009 সালে সুব্রতবাবু ফ্ল্যাট বিক্রি করে চলে গেছেন ৷ ওই মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড খতিয়ে তদন্তকারীরা সরশুনার অসীম ঘোষের নাম জানতে পারেন৷ মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী দিন পনেরো আগেই সুব্রত মৈত্র সরশুনায় এসেছিল ৷ অসীমবাবুর বাড়ি গিয়ে ব্যাংক অফিসারের পরিচয় দিয়ে পুলিশ জানতে পারে সুব্রত ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে থাকে ৷
গিরিডির ফোনের টাওয়ার লোকেশন ধরে যে জায়গার খোঁজ পাওয়া যায় সেখানে রয়েছে প্রচুর ধরমশালা ৷ পুলিশ জানতে পারে সেখানেই গত আটদিন ছিল সুব্রত ৷ রাজগাড়িয়া এলাকায় দু'দিন খোঁজ চালানোর পর সুব্রতর খোঁজ পায় পুলিশ ৷ কিন্তু মূল অভিযুক্ত হেমন্ত অধরা থাকে । ধরমশালা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, হেমন্ত ট্রেনে বারাণসী গিয়েছে ৷ এরপর তদন্তকারীরা ধরমশালাতেই আশ্রয় নেয় ৷ পাশাপাশি খবর দেওয়া হয় বারাণসীর টিমকে । তারাই সেখান থেকে হেমন্তকে গ্রেপ্তার করে ৷ পুলিশি জেরায় সুব্রত স্বীকার করে হেমন্ত এবং সে দেশজোড়া অনলাইন সাট্টাচক্রের এজেন্ট ৷ 2017-18 সালে সাট্টার নেশায় জড়িয়ে পড়ে হেমন্ত ৷ পুলিশের সন্দেহ প্রিয়ার থেকে টাকা নিয়ে সাট্টা খেলেছে হেমন্ত ৷ সুব্রত এবং হেমন্তকে কলকাতায় আনার পথে বারবার ভিডিয়ো কলে জেরা করে পুলিশ ৷ সেই সূত্রেই অনলাইন সাট্টা সংস্থার কলকাতার অফিসের ঠিকানার হদিশ পাওয়া যায় ৷ সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ৷ উদ্ধার হয়েছে 30টি মোবাইল, 14টি ক্যালকুলেটর, সাট্টা বুক, প্যাড এবং বেশকিছু গ্যাজেট ৷ ইতিমধ্যেই তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছে পুলিশ ৷ ওই অ্যাকাউন্টগুলোয় প্রায় 12 লাখ টাকা রয়েছে ৷
কলকাতার কোনও থানার তদন্তের সাপেক্ষে এই ঘটনাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা ৷