ETV Bharat / city

প্রেমে প্রতারণার তদন্তে নেমে দেশব্যাপী সাট্টাচক্রের পরদা ফাঁস, ধৃত সাত - সাট্টা চক্রের পরদা ফাঁস

প্রেমিকের প্রতারণার তদন্তে নেমে সাট্টা চক্রের পরদা ফাঁস করল নিউ আলিপুর থানর পুলিশ ৷ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৷ উদ্ধার হয়েছে 30টি মোবাইল, 14টি ক্যালকুলেটর, সাট্টা বুক, প্যাড এবং বেশকিছু গ্যাজেট ৷ ইতিমধ্যেই তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছে পুলিশ ৷ ওই অ্যাকাউন্টগুলোয় প্রায় 12 লাখ টাকা রয়েছে ৷

ধৃত দুই ব্যক্তি
author img

By

Published : Aug 28, 2019, 11:16 AM IST

Updated : Aug 28, 2019, 5:10 PM IST

কলকাতা, 28 অগাস্ট: কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটের সন্ধান ৷ প্রেমিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা অভিযোগের তদন্তে নেমে সাট্টা চক্রের পরদা ফাঁস করল নিউ আলিপুর থানার পুলিশ ৷ এই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ৷

বারাণসীর পাঁচকোশির বাসিন্দা হেমন্ত কুমার মৌর্যর সঙ্গে বন্ধন ব্যাংকের অফিসার প্রিয়া ধুসিয়ার সম্পর্ক ছিল 2017 সাল থেকে ৷ স্বভাবে নম্র, শিক্ষিত হেমন্ত প্রিয়াকে জানায়, সে কলকাতার নিউ আলিপুরের একটি মেসে থাকে ৷ কয়েকবার হেমন্তর সঙ্গে কলকাতায় দেখাও করতে আসেন প্রিয়া ৷ ব্যবসা ও চাকরির অজুহাতে প্রিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছিল হেমন্ত ৷ দু'টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠাতে বলে হেমন্ত ৷ পরে প্রিয়ার পরিবার হেমন্তকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ৷ কিন্তু তখন হেমন্ত এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে ৷ তখন টাকা ফেরত দিতে হেমন্তকে চাপ দিতে শুরু করে প্রিয়ার পরিবার ৷ কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে উলটে ফোনে হেমন্ত ও তার বন্ধুরা প্রিয়ার পরিবারকে হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ ৷ 18 অগাস্ট কলকাতার নিউ আলিপুর থানায় এসে হেমন্তের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করে প্রিয়া ৷

image
উদ্ধার হয়েছে 30টি মোবাইল, 14টি ক্যালকুলেটর, সাট্টা বুক, প্যাড এবং বেশকিছু গ্যাজেট
নিউ আলিপুর থানার পুলিশ আধিকারিকরা অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেন ৷ প্রিয়া পুলিশকে হেমন্তর নাম, ফোন নম্বর ও দু'টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর দিয়েছিল ৷ এরপর নিউ আলিপুর থানার পুলিশের একটি দল বারাণসী যায় ৷ সেখানে তাঁরা রাকেশ পণ্ডিতের নাম পায় ৷ পাঁচকোশি এলাকায় হেমন্তের ছবি দেখিয়ে খুঁজে বের করা হয় তার ঠিকানা ৷ সেখানে পৌঁছে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, হেমন্ত কদাচিৎ বাড়িতে আসে ৷ তবে রাকেশ পণ্ডিতের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ বারাণসীর পাশাপাশি কলকাতাতেও চলছিল তদন্ত ৷ দু'টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখা যায় সেগুলো মহম্মদ আক্রম নামে এক ব্যক্তির ৷ সে কৈখালির বাসিন্দা ৷ ওই অ্যাকাউন্ট দু'টি পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেখানে মূলত PAYTM এবং অনলাইন ব্যাঙ্কিং-র মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাকা জমা পড়ে ৷ বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তদন্তকারীরা অ্যাকাউন্টে দেওয়া ঠিকানা পরীক্ষা করে দেখেন তা ভুয়ো ৷ ব্যাংককর্মী সেজে অ্যাকাউন্টে দেওয়া নম্বরে ফোন করে মহম্মদ আক্রমকে দেখা করতে বলেন তদন্তকারীরা ৷ আক্রম দেখা করতে এলেই তাকে গ্রেপ্তার করে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ ৷ অ্যাকাউন্ট দু'টি ফ্রিজ় করে দেওয়া হয় ৷ তাকে জেরা করে হেমন্তের ইউনিয়ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিশ পায় তদন্তকারীরা৷

এবার হেমন্তের ফোনের সমস্ত তথ্য নেওয়া শুরু করেন তদন্তকারীরা ৷ জানা যায়, ওই নম্বরটি নেওয়া হয়েছে চারু মার্কেট থানার দেশপ্রাণ শাসমল রোডের জনৈক সুব্রত মৈত্রর নামে ৷ সেই ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারে 2009 সালে সুব্রতবাবু ফ্ল্যাট বিক্রি করে চলে গেছেন ৷ ওই মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড খতিয়ে তদন্তকারীরা সরশুনার অসীম ঘোষের নাম জানতে পারেন৷ মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী দিন পনেরো আগেই সুব্রত মৈত্র সরশুনায় এসেছিল ৷ অসীমবাবুর বাড়ি গিয়ে ব্যাংক অফিসারের পরিচয় দিয়ে পুলিশ জানতে পারে সুব্রত ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে থাকে ৷

image
নিউ আলিপুর থানর পুলিশ

গিরিডির ফোনের টাওয়ার লোকেশন ধরে যে জায়গার খোঁজ পাওয়া যায় সেখানে রয়েছে প্রচুর ধরমশালা ৷ পুলিশ জানতে পারে সেখানেই গত আটদিন ছিল সুব্রত ৷ রাজগাড়িয়া এলাকায় দু'দিন খোঁজ চালানোর পর সুব্রতর খোঁজ পায় পুলিশ ৷ কিন্তু মূল অভিযুক্ত হেমন্ত অধরা থাকে । ধরমশালা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, হেমন্ত ট্রেনে বারাণসী গিয়েছে ৷ এরপর তদন্তকারীরা ধরমশালাতেই আশ্রয় নেয় ৷ পাশাপাশি খবর দেওয়া হয় বারাণসীর টিমকে । তারাই সেখান থেকে হেমন্তকে গ্রেপ্তার করে ৷ পুলিশি জেরায় সুব্রত স্বীকার করে হেমন্ত এবং সে দেশজোড়া অনলাইন সাট্টাচক্রের এজেন্ট ৷ 2017-18 সালে সাট্টার নেশায় জড়িয়ে পড়ে হেমন্ত ৷ পুলিশের সন্দেহ প্রিয়ার থেকে টাকা নিয়ে সাট্টা খেলেছে হেমন্ত ৷ সুব্রত এবং হেমন্তকে কলকাতায় আনার পথে বারবার ভিডিয়ো কলে জেরা করে পুলিশ ৷ সেই সূত্রেই অনলাইন সাট্টা সংস্থার কলকাতার অফিসের ঠিকানার হদিশ পাওয়া যায় ৷ সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ৷ উদ্ধার হয়েছে 30টি মোবাইল, 14টি ক্যালকুলেটর, সাট্টা বুক, প্যাড এবং বেশকিছু গ্যাজেট ৷ ইতিমধ্যেই তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছে পুলিশ ৷ ওই অ্যাকাউন্টগুলোয় প্রায় 12 লাখ টাকা রয়েছে ৷

কলকাতার কোনও থানার তদন্তের সাপেক্ষে এই ঘটনাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা ৷

কলকাতা, 28 অগাস্ট: কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটের সন্ধান ৷ প্রেমিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা অভিযোগের তদন্তে নেমে সাট্টা চক্রের পরদা ফাঁস করল নিউ আলিপুর থানার পুলিশ ৷ এই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ৷

বারাণসীর পাঁচকোশির বাসিন্দা হেমন্ত কুমার মৌর্যর সঙ্গে বন্ধন ব্যাংকের অফিসার প্রিয়া ধুসিয়ার সম্পর্ক ছিল 2017 সাল থেকে ৷ স্বভাবে নম্র, শিক্ষিত হেমন্ত প্রিয়াকে জানায়, সে কলকাতার নিউ আলিপুরের একটি মেসে থাকে ৷ কয়েকবার হেমন্তর সঙ্গে কলকাতায় দেখাও করতে আসেন প্রিয়া ৷ ব্যবসা ও চাকরির অজুহাতে প্রিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছিল হেমন্ত ৷ দু'টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠাতে বলে হেমন্ত ৷ পরে প্রিয়ার পরিবার হেমন্তকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ৷ কিন্তু তখন হেমন্ত এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে ৷ তখন টাকা ফেরত দিতে হেমন্তকে চাপ দিতে শুরু করে প্রিয়ার পরিবার ৷ কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে উলটে ফোনে হেমন্ত ও তার বন্ধুরা প্রিয়ার পরিবারকে হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ ৷ 18 অগাস্ট কলকাতার নিউ আলিপুর থানায় এসে হেমন্তের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করে প্রিয়া ৷

image
উদ্ধার হয়েছে 30টি মোবাইল, 14টি ক্যালকুলেটর, সাট্টা বুক, প্যাড এবং বেশকিছু গ্যাজেট
নিউ আলিপুর থানার পুলিশ আধিকারিকরা অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেন ৷ প্রিয়া পুলিশকে হেমন্তর নাম, ফোন নম্বর ও দু'টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর দিয়েছিল ৷ এরপর নিউ আলিপুর থানার পুলিশের একটি দল বারাণসী যায় ৷ সেখানে তাঁরা রাকেশ পণ্ডিতের নাম পায় ৷ পাঁচকোশি এলাকায় হেমন্তের ছবি দেখিয়ে খুঁজে বের করা হয় তার ঠিকানা ৷ সেখানে পৌঁছে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, হেমন্ত কদাচিৎ বাড়িতে আসে ৷ তবে রাকেশ পণ্ডিতের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ বারাণসীর পাশাপাশি কলকাতাতেও চলছিল তদন্ত ৷ দু'টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখা যায় সেগুলো মহম্মদ আক্রম নামে এক ব্যক্তির ৷ সে কৈখালির বাসিন্দা ৷ ওই অ্যাকাউন্ট দু'টি পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেখানে মূলত PAYTM এবং অনলাইন ব্যাঙ্কিং-র মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাকা জমা পড়ে ৷ বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তদন্তকারীরা অ্যাকাউন্টে দেওয়া ঠিকানা পরীক্ষা করে দেখেন তা ভুয়ো ৷ ব্যাংককর্মী সেজে অ্যাকাউন্টে দেওয়া নম্বরে ফোন করে মহম্মদ আক্রমকে দেখা করতে বলেন তদন্তকারীরা ৷ আক্রম দেখা করতে এলেই তাকে গ্রেপ্তার করে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ ৷ অ্যাকাউন্ট দু'টি ফ্রিজ় করে দেওয়া হয় ৷ তাকে জেরা করে হেমন্তের ইউনিয়ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিশ পায় তদন্তকারীরা৷

এবার হেমন্তের ফোনের সমস্ত তথ্য নেওয়া শুরু করেন তদন্তকারীরা ৷ জানা যায়, ওই নম্বরটি নেওয়া হয়েছে চারু মার্কেট থানার দেশপ্রাণ শাসমল রোডের জনৈক সুব্রত মৈত্রর নামে ৷ সেই ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারে 2009 সালে সুব্রতবাবু ফ্ল্যাট বিক্রি করে চলে গেছেন ৷ ওই মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড খতিয়ে তদন্তকারীরা সরশুনার অসীম ঘোষের নাম জানতে পারেন৷ মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী দিন পনেরো আগেই সুব্রত মৈত্র সরশুনায় এসেছিল ৷ অসীমবাবুর বাড়ি গিয়ে ব্যাংক অফিসারের পরিচয় দিয়ে পুলিশ জানতে পারে সুব্রত ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে থাকে ৷

image
নিউ আলিপুর থানর পুলিশ

গিরিডির ফোনের টাওয়ার লোকেশন ধরে যে জায়গার খোঁজ পাওয়া যায় সেখানে রয়েছে প্রচুর ধরমশালা ৷ পুলিশ জানতে পারে সেখানেই গত আটদিন ছিল সুব্রত ৷ রাজগাড়িয়া এলাকায় দু'দিন খোঁজ চালানোর পর সুব্রতর খোঁজ পায় পুলিশ ৷ কিন্তু মূল অভিযুক্ত হেমন্ত অধরা থাকে । ধরমশালা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, হেমন্ত ট্রেনে বারাণসী গিয়েছে ৷ এরপর তদন্তকারীরা ধরমশালাতেই আশ্রয় নেয় ৷ পাশাপাশি খবর দেওয়া হয় বারাণসীর টিমকে । তারাই সেখান থেকে হেমন্তকে গ্রেপ্তার করে ৷ পুলিশি জেরায় সুব্রত স্বীকার করে হেমন্ত এবং সে দেশজোড়া অনলাইন সাট্টাচক্রের এজেন্ট ৷ 2017-18 সালে সাট্টার নেশায় জড়িয়ে পড়ে হেমন্ত ৷ পুলিশের সন্দেহ প্রিয়ার থেকে টাকা নিয়ে সাট্টা খেলেছে হেমন্ত ৷ সুব্রত এবং হেমন্তকে কলকাতায় আনার পথে বারবার ভিডিয়ো কলে জেরা করে পুলিশ ৷ সেই সূত্রেই অনলাইন সাট্টা সংস্থার কলকাতার অফিসের ঠিকানার হদিশ পাওয়া যায় ৷ সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ৷ উদ্ধার হয়েছে 30টি মোবাইল, 14টি ক্যালকুলেটর, সাট্টা বুক, প্যাড এবং বেশকিছু গ্যাজেট ৷ ইতিমধ্যেই তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছে পুলিশ ৷ ওই অ্যাকাউন্টগুলোয় প্রায় 12 লাখ টাকা রয়েছে ৷

কলকাতার কোনও থানার তদন্তের সাপেক্ষে এই ঘটনাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা ৷

Intro:কলকাতা, ২৮ অগাস্ট: কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটের সন্ধান। ছিল প্রেমিকের প্রতারণার তদন্ত। কাজে নেমে দেশ জোড়া সাট্টা চক্রের পর্দা ফাঁস করল নিউ আলিপুর থানা। ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ।Body:বিস্তারিত আসছে...Conclusion:
Last Updated : Aug 28, 2019, 5:10 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.