দুর্গাপুর, 25 অক্টোবর : স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের ৷ তার জন্য স্কুল ছুটির পর প্রায় পাঁচঘণ্টা স্কুলের মধ্যে আটকে থাকলেন শিক্ষকরা ৷ শেষপর্যন্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ দুর্গাপুরের জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের ঘটনা ৷
ওই স্কুলের শিক্ষক বামাকালী মণ্ডলের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গতকাল স্কুল ছুটির পর বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা ৷ তারা দাবি জানায়, অভিযুক্ত প্রাক্তন টিচার-ইন-চার্জ বামাকালী মণ্ডল ছাত্রদের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন তা ফেরত দিতে হবে । না হলে স্কুলের কোনও শিক্ষক শিক্ষিকাকে বাড়ি যেতে দেওয়া হবে না । এই দাবি নিয়ে এর আগেও স্কুলে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল । সেইসময় বামাকালী মণ্ডল দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন ৷ সেখানে গিয়ে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ওই শিক্ষককে অপমান করে ।
তারপর গতকাল ফের একই দাবিতে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ৷ স্কুল ছুটির পর ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভে কয়েকঘণ্টা আটকে থাকেন জেমুয়া ভাদুবালা স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নুল হক ও অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা । শেষমেশ প্রধান শিক্ষক দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক অনির্বাণ কোলেকে বিষয়টি জানান ৷ শিক্ষক শিক্ষিকাদের স্কুলের মধ্যে আটকে থাকার খবর পেয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের DC পূর্ব অভিষেক গুপ্ত ফোনে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন ৷ অনুরোধ করেন ছাত্রছাত্রীদের বোঝাতে । কিন্তু এতেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে ছাত্রছাত্রীরা । তাদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষককে টাকা এখনই ফেরত দিতে হবে । কারণ বাবা-মায়ের অনেক কষ্টার্জিত টাকা রয়েছে এই তহবিলে যার হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না । ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভে বেশ সমস্যায় পড়ে যান শিক্ষক শিক্ষিকারা ।
দুর্গাপুরের মহকুমা শাসকের নির্দেশে সন্ধে সাতটা নাগাদ জেমুয়া ভাদুবালা স্কুলে আসেন লাউদোহার BDO মৃণালকান্তি বাগচি ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের এই ব্লকের সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় । বোঝানোর চেষ্টা করেন ছাত্রছাত্রীদের । কিন্তু এতেও শান্ত হয়নি ছাত্রছাত্রীরা । তাদের অভিযোগ, এর আগে নিজেই টাকা ফেরত দিয়ে দেবে বলে কাগজে লিখে দিয়েছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষক বামাকালী মণ্ডল ৷ কিন্তু, স্কুল থেকে বেরিয়ে উলটে ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে তাঁকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন ৷ ওই সময় বামাকালী মণ্ডলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল ৷ পালটা ওই শিক্ষক প্রধান শিক্ষক জয়নুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ৷
গতকাল ছাত্রছাত্রীরা বলে, এবারও যে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায় ৷ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে । যা চরমে পৌঁছায় নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ স্কুলে আসার পর । বামাকালী মণ্ডল নিয়ে পুলিশ গাড়িতে ওঠতে গেলে স্কুলের সব গেটে তালা মেরে দেয় পড়ুয়ারা ৷ তারা দাবি জানাতে থাকে, অভিযুক্ত শিক্ষককে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যেতে হবে ৷ পুলিশ তা না করায় বাধা দেয় ছাত্রছাত্রীরা । শুরু হয় স্কুলগেটের সামনে বিক্ষোভ ।
স্কুলের মেইন গেটের সামনে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন লাউদোহার BDO মৃণালকান্তি বাগচি ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুজিত মুখোপাধ্যায় । শেষপর্যন্ত নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ বামাকালী মণ্ডলকে কোনওরকমে স্কুলের বাইরে নিয়ে এসে পুলিশের গাড়িতে তোলে । ছাত্রছাত্রীরা তখন পুলিশের গাড়ির পিছনে ধাওয়া করে । এরপর লাউদোহার BDO, নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দেয় । প্রায় ৫ ঘণ্টা পর ঘেরাও মুক্ত হন জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের শিক্ষক শিক্ষিকারা ।
অভিযুক্ত শিক্ষক বামাকালী মণ্ডল যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অহেতুক হেনস্থা করা হচ্ছে তাঁকে ৷ অন্যদিকে জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জয়নুল হক বলেন, "অনেকবার বলা হয়েছিল বামাকালীবাবুকে সব হিসেব বুঝিয়ে দিতে ৷ কিন্তু কেন উনি তা দেননি সেটার উত্তর উনিই দিতে পারেন ।"
ছাত্রদের বিক্ষোভের মাঝে অন্য একটি প্রশ্ন তুলেছে অভিভাবকদের একাংশ ৷ তাদের বক্তব্য, প্রধান শিক্ষক হওয়া নিয়ে বামাকালীবাবু ও জয়নুল হকের মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই চলছিল ৷ তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনা কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে ৷