দুর্গাপুর, 17 অক্টোবর : কথাও নিজের পরিচয় দিত ACP মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চ, কোথাও আবার কেউকেটা ডাকাবুকো IPS অফিসার । বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ভুয়ো পরিচয় দিয়ে বেকার যুবকদের পুলিশের চাকরি করে দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার পুরুলিয়ার যুবক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় । দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে অম্বুজা উপনগরীতে তার ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ভুয়ো ID কার্ড, বেশকয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন বেকার যুবকের চাকরির অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার । আগ্নেয়াস্ত্রগুলি নকল বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ।
বাঁকুড়ার শালতোড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রবীর প্রামানিক নামের এক যুবক গত পরশু দূর্গাপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নামে । অভিযোগ, প্রসেনজিৎ নিজেকে পুলিশ আধিকারিক পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রবীর ও আরও এক মহিলার কাছ থেকে এক লক্ষের বেশি টাকা নেয় । প্রবীরের অভিযোগ, প্রসেনজিৎ মাঝেমধ্যেই আগ্নেয়াস্ত্র বের করে দেখাতেন, তাই চাকরি না পেলেও টাকা ফেরত চাইতে ভয় পেতেন । পরে প্রসেনজিতের পুলিশ আধিকারিকের পরিচয় ভুয়ো জানতে পেরেই দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বাঁকুড়ার যুবক প্রবীর ।
অভিযোগ পেয়ে শুক্রবার রাতে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে অম্বুজা উপনগরীতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ভাড়াতে হানা দেয় পুলিশ । সেখান থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু ভুয়ো ID কার্ড । যেগুলিতে লেখা রয়েছে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের ACP প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় । ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ বিভিন্ন বেকার যুবকদের চাকরির জন্য আবেদন পত্র এবং অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার উদ্ধার হয়েছে । পাশাপাশি 4টি বন্দুক, সিম কার্ড, দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে । যদিও পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলি নকল ।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের DCP (পূর্ব ) অভিষেক গুপ্তা আজ সাংবাদিক বৈঠকে জানান, "একটি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে ধরা হয়েছে । তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশকিছু ভুয়ো ID কার্ড । প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় পুরুলিয়ার বাসিন্দা । নিজেকে সে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের ACP বলে পরিচয় দিত । বিভিন্ন মানুষকে পুলিশের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিত । আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি দেখিয়ে ভয় দেখাত।"
যদিও ধৃত প্রসেনজিতের দাবি," আসানসোলের বাসিন্দা অনিরুদ্ধ বরাট নামের এক ব্যক্তি তাকে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চে চাকরি দেওয়ার নামে এই সমস্ত নথি দিয়েছিল । অনিরুদ্ধ বরাট নামের ওই ব্যক্তি আসানসোলে থাকেন বলে আমি জানি । তিনি বলেছিলেন, একজনের চাকরি করে দিতে পারলে আমার চাকরি পাকা হয়ে যাবে । তাই আমি শালতোড়ার বাসিন্দা প্রবীর পরামানিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছিলাম ।" জানাগিয়েছে, প্রসেনজিৎ দুর্গাপুরের পলাশ ডিয়ার বাসিন্দা এক যুবকের কাছে একটি জাইলো গাড়ি ভাড়া নিয়ে তাতে চড়তেন এবং ওই গাড়ির চালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্গাপুর থানার পুলিশ।
আপাতত প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে গোটা চক্রের সন্ধান পেতে চাইছে দুর্গাপুর পুলিশ । এই চক্রের সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।