বর্ধমান, 5 মে : পুজো থেকে শুরু করে গৃহপ্রবেশ, বিয়ে থেকে অন্নপ্রাশন সবক্ষেত্রেই ফুলের চাহিদা তুঙ্গে ৷ কিন্তু লকডাউনের কারণে বন্ধ বেশিরভাগ ফুলের দোকান ৷ ঘরবন্দী সাধারণ মানুষ ৷ ফলে অন্ধকার নেমে এসেছে এই কাজে ৷ সমস্যায় পড়েছেন বর্ধমানের ফুল চাষিরা । লকডাউনের জন্য বন্ধ পরিবহন ব্যবস্থা ৷ যার জেরে বন্ধ ফুলের রপ্তানিও । ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে সমস্ত ফুল । বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন ফুল চাষিরা ।
পূর্ব বর্ধমান জেলার দক্ষিণ দামোদর এলাকার হিজলনা, রায়নার নন্দনপুর-সহ বিভিন্ন এলাকা সারাবছর জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, টিউলিপ সহ অন্যান্য ফুলের চাষের জন্য পরিচিত । জেলার কৃষি বিভাগ মারফত জানা গেছে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় চারশো বিঘা জমিতে ফুলের চাষ হয় । মূলত গলসির 1 ও 2 নম্বর ব্লক, ভাতার, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলীর এক নম্বর ব্লক, রায়না সহ বেশ কিছু এলাকায় ফুল চাষ হয়ে থাকে । প্রায় 2000 শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ফুল চাষের উপর নির্ভরশীল । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, পদ্ম, টিউলিপ ফুলের চাষ বেশি করা হয়ে । এর মধ্যে 200 বিঘা জমিতে চাষ হয় গাঁদা ও বাকি 200 বিঘা জমিতে পদ্ম চাষ করা হয় ৷ এর পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে গোলাপ , রজনীগন্ধার মত ফুলের চাষও হয়ে থাকে ৷
সাধারণত রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যেমন আসানসোল, বীরভূম বর্ধমান, বোলপুর এর পাশাপাশি কলকাতা, দিল্লি, মুম্বইয়ের মত বিভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি করা হয় ৷ জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা যেহেতু শীতের মরশুমের ফুল তাই গ্রিন হাউজ তৈরি করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সারা বছর ধরে ফুলচাষ করা হয়। এই ফুল চাষের জন্য প্রতিটি খামারে 10-12 জন করে শ্রমিক কাজ করেন ৷ কিন্তু তাঁদের আজ অনেকেই বেকার ৷
ফুলচাষি বাবলু দাস জানান, "লকডাউনে প্রচুর ফুল নষ্ট হচ্ছে ৷ বাজারে পাঠানো যাচ্ছে না ৷ যদি লকডাউন খোলে তাহলে আবার ফুল রপ্তানি করতে পারব তাই এখনও বাগানে পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছি ৷ যে সমস্ত ফুল নষ্ট হচ্ছে ফেলে দিতে হচ্ছে ৷ এছাড়াতো কিছু করার নেই ৷"
রায়নার নন্দনপুরের আরেক ফুলের চাষি গুণধর সাহানা বলেন, "লকডাউনের জেরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে । ফলে ভিন রাজ্যে ফুল রপ্তানি করতে পারছি না । গাছের ফুল গাছেই নষ্ট হচ্ছে । অথচ গাছের পরিচর্যা করতে বাধ্য হচ্ছি ।"
এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে সকল চাষিরা৷ তাঁরা জানিয়েছেন, সরকার যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে ফুল চাষে নিযুক্ত শ্রমিকদের পরিবারগুলি দু-বেলা দু-মুঠো খেয়ে অন্তত বাঁচতে পারে ।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি-কর্মাধ্যক্ষ শেখ মহম্মদ ইসমাইল জানান, "বর্ধমানে খুব বেশি জমিতে ফুলের চাষ না হলেও জেলায় প্রায় চারশো বিঘা জমিতে ফুলের চাষ হয় । লকডাউনের জেরে ফুল বিক্রি না হওয়ায় চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন । বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে কীভাবে ফুল চাষিদের সাহায্য করা যায় সেটা দেখা হচ্ছে ।