বর্ধমান, 17 অগাস্ট : বর্ধমানের বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত মল্লিক । সঙ্গী বলতে একটা হ্যান্ডিক্যাম । আর তা দিয়েই বানিয়ে ফেলেছেন একের পর এক স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি । দেশ-বিদেশের একাধিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছেন । পুরস্কারও পেয়েছেন অনেক । অধুনা কলকাতা নিবাসী ইরানের ফুটবলার জামশেদ নাসিরিকে নিয়ে সিনেমা তৈরি করেছেন তিনি । অ্যামেরিকার সানফ্রান্সিকোতেও রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে সিনেমাটি ।
একসময় বর্ধমান স্টেশন সংলগ্ন বুকস্টল গুলিতে বসে ফিল্ম ম্যাগাজিন পড়া ছিল কৃষ্ণকান্ত মল্লিকের নেশা । বিভিন্ন পত্রিকা ঘেঁটে নিজের খাতায় লিখে রাখতেন দেশ-বিদেশের সিনেমার নানা তথ্য । বর্ধমান শহরের লোকো কলোনি এলাকায় তাঁর বাড়ি । বাড়িতে আছেন মা চণ্ডীরানি মল্লিক। ছেলের কাজে দিনরাত উৎসাহ দিয়ে চলেছেন তিনি । কৃষ্ণকান্তের ছবিতে ফুটে উঠেছে ছোট্ট শিশুর প্রথম ট্রেন দেখার অনুভূতি থেকে ইরানের ফুটবলার জামসেদ নাসিরির ইরান থেকে কলকাতায় মেলবন্ধন।
একের পর এক শর্ট ফিল্ম তৈরি করে মিলেছে দেশ-বিদেশের অজস্র খেতাব । কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে দু'বার তাঁর ছবি দেখানো হয় । বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে ঢাকায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয় । দিল্লিতে আয়োজিত NFDC-র স্বচ্ছ ভারত শর্ট ফিল্ম প্রতিযোগিতাতেও মিলেছে পুরস্কার ।
ইরানিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতেছেন । কলকাতার রূপকলা কেন্দ্র ও রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর আয়োজিত 14 তম আন্তর্জাতিক সোশাল কমিউনিকেশন সিনেমা কনফারেন্সে বর্ধমান থেকে তাঁর ছবি রাজ্যের সেরা ছবি বলে বিবেচিত হয়েছে । জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সম্মানিত করা হয় ।
এছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে করনুল অ্যাওয়ার্ড, মুম্বইয়ে আয়োজিত "আই অ্যাম দা চেঞ্জ" সোশাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রণ পান তিনি । লখনউতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে দু'বার তাঁর ছবি দেখানো হয় । দিল্লির বায়োস্কোপ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে থেকেও ডাক এসেছে ।
ইরানের ফুটবলার জামশেদ নাসিরিকে নিয়ে সম্প্রতি 14 মিনিটের "টেল অফ নাসিরি" তথ্যচিত্রটি বানিয়েছেন । তুলে ধরেছেন ইরান থেকে এসে কলকাতায় কীভাবে সফল হয়েছেন জামশেদ । সান ফ্রান্সিসকোতে ইরানের বিশেষ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে সেই ছবি ।
ছেলের কাজে খুশি কৃষ্ণকান্তের মা চণ্ডীরাণী মল্লিক। তিনি বলেন, "ছোটো থেকেই কৃষ্ণ ছবি নিয়ে পড়াশোনা করত । নিজের মতো করে লিখত । এখনও রাতের পর রাত জেগে সে কাজ করে চলেছে । তার আরও সাফল্য কামনা করি ।"
কোনও অবাস্তব গল্পকথা নয় । বাস্তবের ছবিটাকেই বেশি করে তুলে ধরেন তিনি । শিশুমনের বিভিন্ন ভাবনাগুলি নিয়েও কাজ করেন । এখন অ্যামেরিকার সানডেন্স ইনস্টিটিউট থেকে অনলাইনে ক্লাস করছেন । স্বপ্ন হলিউডে পা রাখা ।
কৃষ্ণকান্ত মল্লিককে এই বিষয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, "সম্প্রতি হলিউডের কলম্বিয়া কলেজ, লস এঞ্জেলস ও শিকাগো ক্যাম্পাস থেকে ফিল্ম স্টাডিজ় নিয়ে পাস করেছি । এখন নিয়মিত অ্যামেরিকার সানডেন্স ইনস্টিটিউট থেকে অনলাইনে ক্লাস করছি । এর ফলে নিত্যনতুন ভাবনা ভাবতে পারছি ।" এই ভাবনাগুলিকে বাস্তবায়িত করতে এখন তাঁর পাখির চোখ হলিউডে পা রাখা । তাই দিনরাত এক করে চলছে ফিল্ম নিয়ে কাটা-ছেঁড়া ।