আসানসোল, 8 সেপ্টেম্বর: 1800 শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে আসানসোলে (Asansol) ব্রিটিশদের হাত ধরে নগর সভ্যতার পত্তন হয় ৷ একদিকে কয়লা উত্তোলন, অন্যদিকে রেলপথের বিস্তার শুরু করে ব্রিটিশরা ৷ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং তৎকালীন রেল দফতরে চাকরিসূত্রে তখন থেকেই বিদেশি শাসকরা এই শহরের বাসিন্দা হয়ে যান ৷ তাঁদের সঙ্গেই আসানসোলে ঘাঁটি গাড়েন ইউরোপের অন্য়ান্য দেশের নাগরিকরা ৷
পাশাপাশি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও আসানসোল ছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান ঘাঁটি ৷ এই বিদেশি বাসিন্দাদের অধিকাংশই ছিলেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ৷ তাঁদের মৃতদেহ কবর দেওয়ার জন্য প্রায় 160 বছর আগে আসানসোলের প্রথম খ্রিস্টান সমাধিক্ষেত্র (First Christian Cemetery) তৈরি করা হয় ৷ কিন্তু, আজ সেই সমাধিক্ষেত্র আগাছার জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে ৷ চোরের উৎপাতে খোয়া গিয়েছে সমাধিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বহু মূল্যের শ্বেত পাথরের ফলক ৷ অনেক সময়েই পূর্বসূরিদের সমাধিক্ষেত্র চাক্ষুস করতে বিদেশ থেকে এসেছেন বহু মানুষ ৷ তাঁদের ফিরতে হয়েছে হতাশ হয়ে ৷ কারণ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বহু কবরই ইতিমধ্য়ে স্রেফ উধাও হয়ে গিয়েছে !
আসানসোলের গির্জা মোড় থেকে বেথ রোডের উপর দিয়ে কিছুটা এগোলে বুধা গ্রাম এবং সেন্ট প্যাট্রিক্স স্কুল লাগোয়া এলাকায় এই সমাধিক্ষেত্রটি আজও নজর কাড়ে ৷ বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে এটি গড়ে তোলা হয়েছিল ৷ স্থানীয় গবেষকদের একাংশের দাবি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ব্রিটিশ সেনাদের অনেককে এখানে সমাধিস্থ করা হয়েছিল ৷ তথ্য বলছে, 1800 শতকের মাঝামাঝি সময় প্রথম যে সমাধিক্ষেত্রটি গড়ে তোলা হয়েছিল, সেটি আয়তনে খুব একটা বিরাট ছিল না ৷ তাই পর্বর্তীতে 1903 সালে আরও একটি কবরস্থান নির্মাণ করা হয় ৷ সেটি তুলনামূলক অনেকটাই বড় আকারের ছিল ৷
আরও পড়ুন: সৌজন্য, আসানসোলের মেয়রকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারির
আসানসোলের বিশিষ্ট শিক্ষক ও গবেষক বিশ্বনাথ মিত্র জানান, দ্বিতীয় কবরস্থানটিই বর্তমানে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের সর্ববৃহৎ খ্রিস্টান সমাধিক্ষেত্র ৷ তবে, এর উপস্থিতি কখনই প্রথম কবরস্থানটির ঐতিহাসিক গুরুত্বকে লঘু করতে পারে না ৷ তার একটা বড় কারণ হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ সেনাদের অনেকেই ওই প্রথম সমাধিক্ষেত্রে আজও অন্তিম শয্য়ায় শায়িত রয়েছেন ৷
কিন্তু, কালের নিয়মেই আজ কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রথম খ্রিস্টান সমাধিক্ষেত্রটি ৷ অন্যদিকে, আকারে বড় ও সুসজ্জিত দ্বিতীয় সমাধিক্ষেত্রটি একটা সময় মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে ৷ এখনও সেটি দেখভাল করার ব্যবস্থা রয়েছে ৷ অন্যদিকে, পুরনো সমাধিক্ষেত্রটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে ! তবু জমিটি যাতে দখল না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে রেল কর্তৃপক্ষ একটি বোর্ড লাগিয়ে রেখেছে ৷ এইটুকু করেই দায়িত্ব সেরেছে ভারতীয় রেল ৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের আশংকা, অবিলম্বে প্রশাসন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করলে কয়েক বছর পর হয়তো পুরনো সমাধিক্ষেত্রটির কোনও চিহ্নই থাকবে না ৷ আর সেটা হলে, পরবর্তীতে দ্বিতীয় সমাধিক্ষেত্রটির দিকেও চোরেরা হাত বাড়াতে পারে, বলে মনে করছেন আসানসোলের বাসিন্দারা ৷