আসানসোল, 7 ডিসেম্বর : ঘরের মধ্যে ঠুকঠাক আওয়াজ । ছোট্ট একটি বাটালি ও হাতুড়ি নিয়ে একমনে কাজ করে চলেছেন মানুষটা । একখণ্ড কাঠের উপর তাঁর হাতুড়ি-বাটালির খোদাইয়ে ধীরে ধীরে যেন প্রাণ ফুটে উঠছে সেই নির্জীব কাঠে (Craftsman brings life to wood) । আসানসোলের সন্দীপকুমার দত্ত তাঁর খোদাই করা কাঠের টুকরো দিয়ে চমকে দিয়েছেন শিল্পাঞ্চলবাসীদের । ইতিমধ্যেই রাজ্যস্তরে বেশ কয়েকবার হস্তশিল্পের জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি ৷
আসানসোল চেলিডাঙা অঞ্চলের বাসিন্দা সন্দীপ পেশায় বিমা এজেন্ট ছিলেন । কিন্তু ছোট থেকেই কাঠ কেটে কিছু একটা তৈরি করার নেশা ছিল ৷ 2013 সাল থেকে বিমা এজেন্সির কাজ প্রায় ছেড়ে দিয়ে কাঠ খোদাইয়ে মগ্ন হয়ে যান ৷ তারপর থেকেই একের পর এক কাঠের ভাস্কর্য তৈরি করে চলেছেন তিনি । তাঁর কাজে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয় মোশন বা গতি । সেখানে কখনও দেখা যায় ষাঁড়ের লড়াই, মোষের লড়াই, শুকরের দৌড় । আবার অন্যদিকে আর্টের বিভিন্ন ফর্ম ভাঙাও তাঁর কাছে নেশার মতো ।
প্রতিদিন নিজের কাজকে ছাপিয়ে যেতে চান শিল্পী । কোনও প্রথাগত প্রশিক্ষণ তিনি নেননি কখনও । তবে তাতে থেমে থাকে না নতুন নতুন সৃষ্টি ৷ আশ্চর্যের বিষয় হল, কাঠ জোড়া দিয়ে নয়, গোটা কাঠের টুকরো খোদাই করে তাতে প্রাণ দেন সন্দীপ ।
তাঁর হাত দিয়ে এত সুন্দর শিল্পকর্ম সৃষ্টি হলেও এখনও সঠিক সম্মান জোটেনি । সন্দীপ রাজ্যস্তরে হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় 2013 সাল থেকে নিয়মিত পুরস্কার পেয়েছেন । কিন্তু তারপরও খেদ রয়ে গিয়েছে । দেশের মানুষ তাঁকে চিনলেন কই... তাই আগামীতে তাঁর লক্ষ্য জাতীয় পুরস্কার অর্জন করা । আর সেজন্যই তিনি আরও বেশি করে কাজে নিমজ্জিত হতে চাইছেন ।
এই কাজ থেকে তেমন কিছু আয় হয় না । কারণ এই কাজের খরচ এবং পরিশ্রম এতটাই বেশি যে এই কাজ কেনার মতো মানুষ শিল্পাঞ্চলে নেই । কলকাতায় কিছু শিল্প রসিক মানুষ থাকলেও মফঃস্বল থেকে কলকাতায় গিয়ে সেই কাজের প্রদর্শনীও তেমন করতে পারেননি সন্দীপ । তাঁর আশা, আগামী দিনে জাতীয় স্তরে পরিচিতি বাড়লে হয়ত এই কাজ সমাদৃত হবে মানুষের কাছে ।
আরও পড়ুন : Cyclone Jawad : জাওয়াদ আতঙ্কে দ্রুত ধান কাটা শেষ করতে চাইছেন চাষিরা