বাঁকুড়া, 20 জুন : খড়্গপুরের মাফিয়া শ্রীনু নাইডু হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মোটা রাজা ওরফে সুমন সিংকে সংশোধনাগারের ভিতরে মোবাইল ফোন এবং মাদকদ্রব্য সরবরাহের অভিযোগে ধৃত সংশোধনাগার কর্মী । তাকে আট দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ বাঁকুড়া আদালতের।
গতকাল ভোরে বাঁকুড়া কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে খড়্গপুরের মাফিয়া শ্রীনু নাইডু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত মোটা রাজা ওরফে সুমন সিংকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে সংশোধনাগারকর্মীরা। তাকে তড়িঘড়ি বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করানো হয় । সেখানেই মোটা রাজা ওরফে সুমন চিতিৎসকদের জানায়, সে ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল । এরপরই সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয় । সংশোধনাগারের যে কক্ষে অভিযুক্ত থাকত, সেই কক্ষে তল্লাশি চালাযনো হয়। তল্লাশি চালিয়ে শৌচালয় থেকে বেশকিছু রাংতা, গাঁজা তৈরির উপকরণ এবং অন্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয় । এছাড়াও মোটা সেখান থেকে একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং একটি সাধারণ মোবাইল ফোন পাওয়া যায় ।
আবাসিকদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য বাঁকুড়া কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার বর্তমানে 36 টি CCTV ক্যামেরা সক্রিয় রয়েছে । সংশোধনাগার কর্মীরা CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখেন এবং সেই ফুটেজে দেখা যায়, সংশোধনাগারের কর্মী দেবব্রত ভৌমিক মোটা রাজাকে মাদকদ্রব্য দিচ্ছে। সেই মাদক দ্রব্য সেবন করার পরই অসুস্থ হয়ে পড়ছে মোটা রাজা।
CCTV ফুটেজে এই ছবি ধরা পড়ার পর গতকাল বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ । অভিযুক্ত দেবব্রত ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পাশাপাশি তার আবাসনে গিয়ে তল্লাশি চালায় সংশোধনাগার কর্মীরা । সেখান থেকে নাইট্রোজেন 10 ট্যাবলেট, গাঁজা এবং ব্রাউন সুগার উদ্ধার হয় ।
এই বিষয়ে বাঁকুড়া জেলা পুলিশকে জানানো হয় এবং গতকাল ওই অভিযুক্তকে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধৃতের বিরুদ্ধে 21/1 NDPS ধারা এবং সংশোধন পরিষেবা আইন 1992 এর 81/A ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আজ অভিযুক্তকে বাঁকুড়া জেলা আদালতে তোলা হলে আট দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেয় আদালত ।
অন্যদিকে মোটা রাজা ওরফে সুমন সিং এখনও বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি নজরদারিতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল ।
2017 সালের 11 জানুয়ারি খড়্গপুরে খুন হয় মাফিয়া শ্রীনু নাইডু। ওই বছরই এপ্রিল মাসে খড়্গপুরের আর এক মাফিয়া রামবাবু সমেত 13 জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করা হয় মেদিনীপুর আদালতে। অভিযুক্ত 13 জনের অন্যতম একজন সুমন সিং তথা মোটা রাজা। অভিযুক্ত মোটা রাজাকে এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে বাঁকুড়া সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছিল বলে জানান বাঁকুড়া সংশোধনাগারের আধিকারিক বিশ্বরূপ বিশ্বাস।
বিশ্বরূপ বিশ্বাস বলেন, "বর্তমানে বাঁকুড়া কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে 267 জন আবাসিক রয়েছেন । প্রতিটি আবাসিকের উপর নজরদারি চালানোর জন্য সংশোধনাগারের চারদিকে লাগানো হয়েছে অত্যাধুনিক CCTV । এই মুহূর্তে প্রায় 36 টি CCTV রয়েছে । মোটা রাজা অসুস্থ হওয়ার পরই আমাদের সন্দেহ হয় । আমরা দেরি না করে CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখি। সেই CCTV ফুটেজ থেকেই আমাদের সংশোধনাগারের কর্মী দেবব্রত ভৌমিকের বেআইনি কাজের ঘটনা সামনে উঠে আসে। আমরা বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ADG পীযূষ পান্ডেকে এবং বাঁকুড়া জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাওকে জানাই । বাঁকুড়া সংশোধনাগারে আমরা সর্বক্ষণই তৎপর থাকি, এখানে কেউ কোনওরকম অপকর্ম করলে তা আমাদের নজরে আসবেই।"