মালদা, 14 সেপ্টেম্বর : ধানের জমি থেকে কাঠ ব্যবসায়ীর মুখ থেঁতলানো মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষুদিপুর গ্রামে ৷ মৃত ব্যক্তি এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত ৷ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মাথায় কুড়ুলের কোপ মেরে ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে ৷ আজ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠিয়েছে হবিবপুর থানার পুলিশ ৷ তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পরিবারের তরফে পুলিশে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ৷
মৃত ব্যক্তির নাম সুবোধ প্রামাণিক ৷ বয়স 48 । কাঠের ব্যবসা করতেন ৷ বাড়ি হবিবপুর ব্লকের ঋষিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীতলা গ্রামে ৷ বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে দুই মেয়ে ও এক ছেলে ৷ বাড়ি থেকে প্রায় 7 কিলোমিটার দূরে ক্ষুদিপুর গ্রামে তাঁর কৃষিজমি রয়েছে ৷ প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই জমি দেখতে যেতেন ৷ জমি দেখাশোনার পর কাজ সেরে রাতে বাড়ি ফিরতেন ৷
গতকাল বিকেলেও তিনি জমি দেখতে বেরিয়েছিলেন ৷ কিন্তু রাতে আর বাড়ি ফিরে আসেননি ৷ রাতে বাড়ির লোকজন তাঁর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় যায় ৷ একাধিকবার তাঁকে ফোন করা হয় ৷ কিন্তু প্রতিবারই তাঁর ফোন বেজে যায় ৷ আজ সকালে এলাকারই এক ব্যক্তি বাড়িতে খবর দেন, সুবোধবাবুর মৃতদেহ জমির ধারে পড়ে রয়েছে ৷ খবর পেয়েই ঘটনাস্থানে ছুটে যায় পরিবারের সদস্যরা ৷ খবর যায় হবিবপুর থানায় ৷ পুলিশ ঘটনাস্থানে এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ৷ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, কুড়ুল দিয়ে একাধিকবার সুবোধবাবুর মাথায় আঘাত করা হয়েছে ৷ সেই আঘাতের জেরেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর ৷
সুবোধবাবুর ছেলে রাজ প্রামাণিক বলেন, “গতকাল বিকেল 4টে নাগাদ বাড়ি থেকে জমির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল বাবা ৷ সন্ধের সময় একবার বাবাকে ফোনও করি ৷ তখনও বাবা জমিতেই ছিল ৷ গতকাল জমি থেকে জল ছাড়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু রাতে বাড়িতে না ফেরায় সারা রাত ধরে বাবার মোবাইলে ফোন করেছি ৷ ফোনে রিং হলেও বাবা ফোন তুলছিল না ৷ শেষ পর্যন্ত আজ সকালে আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি বাড়িতে গিয়ে খবর দেয়, জমির পাশে বাবার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে ৷ বাবার সঙ্গে কারোর ঝামেলা ছিল না ৷ কে বা কারা এভাবে বাবাকে খুন করল, বুঝে উঠতে পারছি না৷”
স্থানীয় বাসিন্দা ও হবিবপুর ব্লক যুব তৃণমূলের অন্যতম নেতা সুব্রত সরকার বলেন, “আজ সকালে আমরা খবর পাই, সুবোধ প্রামাণিক খুন হয়েছেন ৷ গতকাল বিকেলে তিনি জমি দেখাশোনার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ৷ ক্ষুদিপুর গ্রামে তাঁর কৃষিজমি ৷ ওই জায়গাটি BJP-র কবজায় ৷ গতরাতে জমির ধারেই তাঁকে নৃশংসভাবে খুন করা হয় ৷ সুবোধবাবুকে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে খুন করা হয়নি ৷ কারণ, তাঁর মানিব্যাগ কিংবা মোটরবাইকে দুষ্কৃতীরা হাত দেয়নি ৷ তাঁর সঙ্গে কারোর কোনও ঝামেলা ছিল না ৷ রাজনৈতিক কারণেই ঠাণ্ডা মাথায় তাঁকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে ৷ এর সঙ্গে BJP জড়িত ৷ আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি ৷"
যদিও তৃণমূলের আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন BJP-র জেলা সাধারণ সম্পাদক অজয় গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনি জানিয়েছেন, “এই ঘটনায় রাজনীতির কোনও বিষয় নেই বলেই আমরা জানতে পেরেছি ৷ BJP-র ভাবমূর্তিতে কালি ছেটাতে তৃণমূল এসব মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে ৷ কীভাবে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হল, কে বা কারা এই ঘটনায় জড়িত, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে ৷ আমরাও চাই, এই ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক ৷"
পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, “হবিবপুরে ধানের জমির পাশ থেকে এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে হবিবপুর থানার পুলিশ ৷ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে ৷ তবে এই ঘটনায় মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ৷