কলকাতা, 21 এপ্রিল : অপহরণের একটা গোছানো চিত্রনাট্য । একেবারে সিনেমার মতো । প্রথমে বছর পনেরোর কিশোরের গুম হয়ে যাওয়া । পরে অপহরণকারীর ফোন । দিতে হবে 30 লাখ টাকা । ছেলেকে ফিরে পেতে বাবার তাতেই রাজি হয়ে যাওয়া । পরে পুলিশের পরামর্শে বার্গেনিং । 15 লাখে রফা । তারপর ছেলেকে ফেরত পেতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অপহরণকারীর কথা মতো নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরা । অবশেষে জানা গেল, কীর্তিমান অপহরণকারী আর কেউ নয়, তাঁর নিজের শ্যালক । তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের চোখ চড়কগাছ । প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মামার সঙ্গে মিলে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিল অপহৃত কিশোর । বিষয়টি নিয়ে হতে চলছে জেরা পর্ব । পর্দা ফাঁসের চেষ্টায় লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখা । ঘটনায় আপাতত গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই যুবককে ।
গত রবিবার জোড়াসাঁকো এলাকার 15 বছরের কিশোর হঠাৎই বেপাত্তা হয়ে যায় । তার দিন কয়েক আগেই বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরেছেন বাবা । তিনি কর্মসূত্রে থাকেন কঙ্গোয় । খোঁজ শুরু হয় কিশোরের । দিনভর খোঁজাখুঁজির পর জোড়াসাঁকো থানায় প্রথমে মিসিং ডায়েরি করা হয় । পরে ফোন আসে কিশোরের বাবার মোবাইলে । বলা হয়, অপহরণ করা হয়েছে ওই কিশোরকে । ছেলেকে জীবিত ফেরত পেতে হলে দিতে হবে 30 লাখ টাকা । পুলিশকে খবর দিলে ফল ভালো হবে না । দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পরিবার প্রথমে রাজি হয়ে যায় অপহরণকারীদের কথায় । ছেলেকে ফেরত পেতে 30 লাখ টাকাই দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যান বাবা । পরে সত্যি খতিয়ে দেখে পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় কিশোরের পরিবার । জোড়াসাঁকো থানায় বিষয়টি জানালে দায়ের করা হয় অপহরণের মামলা । পুরো ঘটনার কথা জানানো হয় গোয়েন্দা বিভাগে । কেসের দায়িত্ব নেন গুন্ডা দমন শাখার অফিসার সুব্রত পাল । এর মাঝে আবারও ফোন আসে অপহরণকারীর । ফোনের টাওয়ার লোকেশন বোঝার জন্য পুলিশ শুরু করতে বলে দর কষাকষি । প্রায় তিনদিন দর কষাকষির পর রফা হয় 15 লাখে ।
পুলিশ সূত্রে খবর, অপহরণকারীরা প্রথমে টাকা নিয়ে আসানসোলে যেতে বলে । তৈরি হয় টিম । কিশোরের বাবা-কাকা, সঙ্গে ছদ্মবেশে গুন্ডা দমন শাখার সুব্রত, অন্য পুলিশ অফিসার এবং জোড়াসাঁকো থানার ফোর্স । ট্রেনে আসানসোল যায় পুরো দল । সেখানে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফের ফোন আসে অপহরণকারীর । বলা হয়, আসানসোল নয়, যেতে হবে জোসিডি স্টেশন । ফের অন্য একটি ট্রেনে ঝাড়খণ্ডের জোসিডি স্টেশন হয়ে যায় পুরো দল । ফের ফোন আসে অপহরণকারীর । এবার নির্দেশ আসে যেতে হবে ঝাঁঝা । ঘোরাঘুরিতে কেটে যায় গোটা রাত । আজ ভোরে ঝঞ্ঝা স্টেশনের কাছে রেল লাইনের উপর একটি ফাঁকা জায়গায় রাখতে বলা হয় টাকার ব্যাগ । নির্দেশ মতো তাই করা হয় । আবারও ফোন করে অপহরণকারী। প্রথমে বলা হয়, কিশোরকে কলকাতায় ফেরত দেওয়া হবে । পরে বলা হয়, ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে তখন বলা হবে কিশোরের সঠিক লোকেশন । কিছুক্ষণ পর ঝাঁঝা স্টেশনের কাছে দুই ব্যক্তিকে ওই ব্যাগের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করতে দেখা যায় । ঘিরে ফেলে পুলিশ । কিশোরের বাবা চিনতে পেরে যান এক ব্যক্তিকে । সে আর কেউ নয়, কিশোরের মামা বছর বাইশের মণীশ চৌরাশিয়া । অন্যজন, তার সহযোগী সুমিত দুবে । তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করা হয় তাদের । জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় কিশোর আছে পাটনায় । সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় । জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে পরিকল্পনায় ছিল কিশোর নিজেই । তবে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয় । তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে ।