কলকাতা, 21 জানুয়ারি : নেতাজিকে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না । প্রথমে নেতাজিকে নিয়ে বাংলার ট্যাবলো বাতিল করে গোটা দেশে নেতাজিপ্রেমীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার । এই বিতর্কের মাঝেই আবার কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, দিল্লিতে যেখানে এতদিন একাত্তরের শহিদদের স্মরণে অমরজ্যোতি জওয়ান রয়েছে, সেখানেই তৈরি হবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গ্রানাইটের মূর্তি। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তও নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে । ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি বসানোর কথা ঘোষণা করেও সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার । বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি বসানো সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেতাজির পরিবারের সদস্য প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু (Sugata Bose questions centres decision on Netaji)।
সুগত এদিন বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি বসানো সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি । একই সঙ্গে এটাও বলব যে, সমস্ত শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো প্রয়োজন । কেন্দ্রের এই অবস্থানকে স্বাগত জানালেও মহাত্মা গান্ধি শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে একটা সুন্দর কথা বলেছিলেন । তাঁকে স্মরণ করেই বলব, মর্মর মূর্তি বা ব্রঞ্জ বা গ্রানাইট মূর্তি বা হলোগ্রাম নয়, মহৎ মানুষের শ্রেষ্ঠ স্মরণস্তম্ভ হল তাঁদের উত্তরাধিকারকে সুশোভিত করা বা প্রসারিত করা ।’’
নেতাজির উত্তরাধিকার কী ? সুগত বসুর ভাষায়, “তা হল সাম্য ও ঐক্যের আদর্শ । তিনি হিন্দু-মুসলমান-শিখ-ক্রিশ্চিয়ান সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছিলেন । আমরা আশা করি, আজকের ভারতবর্ষে সকলকে সমান অধিকার দিয়ে ঐক্যসাধন করতে পারব । তবেই নেতাজিকে সবচেয়ে ভাল স্মরণ করা হবে ।”
নেতাজিকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের যে ট্যাবলো দিল্লির বুকে উপস্থাপন করতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার তাকে না করা নিয়েও সরব হয়েছেন সুগত । বলেন, “বাংলার নেতাজি এবং আজাদ হিন্দ বিষয়ক ট্যাবলো অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রহণ করা উচিত ছিল । এখন তারা নানা রকম অজুহাত দিচ্ছেন, সেগুলি একটাও বিশ্বাসযোগ্য নয় । নেতাজির জন্মের 125 বছর উপলক্ষে এবং স্বাধীনতার 75 বছর উপলক্ষে একে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল । তবে নেতাজির জন্মদিনের আগে বেশি বিতর্কে না জড়িয়ে আমরা শ্রদ্ধা জানাই তাঁকে, তাঁর সাম্য এবং ঐক্যের আদর্শকে সামনে রেখে এগিয়ে চলার শপথ গ্রহণ করে ।”
এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও সমালোচনা করেছেন দমদমের সাংসদ সৌগত রায় । তিনি বলেন, “নেতাজির মূর্তি বসবে, তা তো আনন্দের । দেশপ্রেমিক বাঙালি হিসেবে আমি সমর্থন করব । কিন্তু আমার প্রশ্ন, নেতাজির মূর্তি বসাচ্ছেন, তাহলে নেতাজি সম্পর্কিত বাংলার ট্যাবলো বাতিল করছেন কেন ? নেতাজিকে সমর্থন জানাচ্ছেন, অথচ অমর জওয়ান জ্যোতি নিভিয়ে দিচ্ছেন । পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপ ।”
অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর অভিযোগ, নেতাজির জনপ্রিয়তা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে । তিনি এও বলেন, “বাস্তবে কেন্দ্র যদি নেতাজি সম্পর্কে কিছু করতে চাইত তাহলে কেন বাংলার ট্যাবলোকে অনুমোদন দেওয়া হল না । বরং যখন প্রধানমন্ত্রী দেখছেন গোটা বিষয়টিতে দেশের কাছে তাঁর মুখ পুড়ছে, তড়িঘড়ি তাই এই ঘোষণা করেছেন তিনি ।”
একই মত ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, "মূর্তি তাঁরাই বসাতে পারেন যাঁরা সুভাষচন্দ্রের আদর্শকে মেনে চলেন । যাঁরা তাঁকে দেশপ্রেমিক বলে মনে করেন । যারা সুভাষচন্দ্রের মতবাদের বিরোধী, যারা দেশের সম্পদ বিক্রি করে দিতে চায়, জনগণের ক্ষমতাকে কেড়ে নিতে চায় তাদের কোনও নৈতিক অধিকার নেই সুভাষচন্দ্রের গলায় মালা দেওয়ার বা তাঁর কোনও মূর্তি তৈরি করার ।
আরও পড়ুন : ইন্ডিয়া গেটে বসছে নেতাজির মূর্তি, 23 জানুয়ারি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী