দিল্লি 25 জুন : প্রতিপক্ষকে কোনও সুযোগ না দিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপে নিজেদের জয়ধ্বজা উড়িয়েছিল ভারত। আজ থেকে ঠিক 37 বছর আগে লর্ডসের ক্রিকেট মাঠের দু'বারের বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঘরে তোলে ভারত। বিশ্বকাপ জয়ের মাধুর্যটা এমনই না কি ছিল যে, বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে দেখার পর ড্রেসিংরুমে নিজেদের চিমটি কেটেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা ।
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার 1983 বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য কীর্তি আজাদ একটি প্রথম সারির সংবাদপত্রে বলেন, "আমি আর আনন্দটা কীভাবে ব্যাখ্যা করব ? তুমি সেই অনুভূতিটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবে যে, লর্ডসে হাজার হাজার দর্শকের সামনে তুমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছ ? আমরা ড্রেসিংরুম থেকে সবটা দেখছিলাম ৷ আমি আমার আসনে বসে ছিলাম এবং নিজেকে চিমটি কাটছিলাম । বোঝার চেষ্টা করছিলাম যে আমরা সত্যি সত্যি বিশ্বকাপ জিতেছি না আমি স্বপ্ন দেখছি। তারপর আমরা জয়ের আনন্দে মেতেছিলাম। "
আরও পড়ুন:- BCCI এর কাছে দলের সুরক্ষা ও ভিসার বিষয়ে লিখিত প্রতুশ্রুতি চায় পাকিস্তান
আজাদের মতে, বিশ্বকাপ ঘরে তোলা ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি অন্যতম মুহূর্ত। ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে 43 রানে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতীয় দলকে তখন "কপিল'স ডেভিলস" বলে ডাকা হত।
আজাদ আরও বলেন, " যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন ব্যক্তি দেশের হয়ে সুনাম অর্জন করতে চায় । ওই বিশ্বকাপ জয়টা নিশ্চিতভাবে আমাদের কেরিয়ারের একটি অন্যতম মুহূর্ত । আমি মনে করি, এই আনন্দটা এবং এই গর্বটা আমি আমার মৃত্যুর পরও বহন করব । এটা এমন একটা বিষয় যেন গতকালই হয়েছে । এই বিশ্বকাপ জয়টা ভারতকে ক্রিকেট ম্যাপে জায়গা করে দিয়েছিল । এটা ছিল তরুণ ক্রিকেটারদের প্রথম পদক্ষেপ । এটা একটি এমন বিষয় ছিল যেটা শব্দ দিয়ে ব্যক্ত করা যায় না ।
ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয় ভারত আর বিশ্বকাপ জয়ের মাঝে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ় । সেমিফাইনালে আয়োজক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ছিল তারা। আজাদের মতে সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা দল । তাহলে ভারত কীভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে? এই প্রশ্নের উত্তরে আজাদ তুলে ধরলেন তৎকালীন অধিনায়ক কপিল দেবের একটি কথা। " সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দলটি ছিল অপরাজেয় । বিশ্বকাপের প্রথম দুটি সংস্করণে তারা জেতে। অনেক ক্রিকেটার মনে করেন, ওই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটা ছিল সর্বকালের সেরা । একটা জিনিস যেটা কপিল বলেছিল, চলো আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলি । জেতা বা হারা নিয়ে চিন্তা করো না । আমরা যদি ভালো খেলতে পারি তাহলে দর্শকদের টাকার মূল্য দিতে পারব । আমরা কখনও কোনও সুযোগ দিইনি । টুর্নামেন্টে আটটি দল খেলেছিল । এবং আমরা ছিলাম নিচের দিক থেকে দুই নম্বর দল । আমরা যখন প্রথম ম্যাচটি জিতি, আমরা একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।" আজাদ ব্যাখ্যা করলেন, ড্রেসিংরুমের সেই পরিস্থিতিটা যখন মাত্র 183 রানে এই ভারতকে আটকে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। ক্যারিবিয়ানদের অসাধারণ বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেননি কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যান। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রান কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের 38 ।
কপিলের অসাধারণ ক্যাচ আউট ভিভিয়ান রিচার্ডস আজাদ বলেন, "আমরা সবাই জানতাম যে এই রানটা যথেষ্ট নয় । কিন্তু, কপিল বলল, হয়ত এই রানটা জেতার জন্য যথেষ্ট নয়, কিন্তু চলো আমরা লড়াই করি । এই রানটা লড়াই করার জন্য যথেষ্ট । আমরা এই রান করেছি ওদেরও এই রান করতে হবে । সুতরাং চলো, প্রত্যেকটি রানের জন্য লড়াই করি। এভাবেই এটা হয়েছিল । এবং তারপর কপিলের দুরন্ত ক্যাচে ভিভিয়ান রিচার্ডসের উইকেট, ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট । তারপর উইকেট পড়তে থাকল এবং আমরা ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ বাড়াতে থাকলাম। আমরা জানতাম যদি আমরা চাপটা বজায় রাখতে পারি তাহলে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ব্যাটসম্যান দের জন্য কাজটা সহজ হবে না ।"