কুরনুল (অন্ধ্রপ্রদেশ), 8 মার্চ: অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ এবং নিরক্ষর মহিলারা ৷ আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রইল সেই কাহিনি ৷ প্রান্তিক শ্রেণির মহিলাদের ব্যতিক্রমী এই গল্প অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনুল জেলার ওরভাকালের ৷ দু'দশক আগেও এলাকায় বেশির ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করত ৷ আর এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দৌলতে ছবিটা অনেকটা বদলেছে ৷
'ডেভেলপমেন্ট অফ উওম্যান অ্যান্ড চিলড্রেন ইন রুরাল এরিয়াস' (Development of Women and Children in Rural Areas, DWCRA) নামের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয় ৷ স্থানীয় খেটে খাওয়া শ্রমিক মহিলারা এই গোষ্ঠীতে যোগ দেন ৷ তাঁরা টাকা সঞ্চয় করতে শুরু করেন ৷ ডিডব্লিউসিআরএ-র মহিলারা তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যত গড়ার উপরে জোর দেন ৷ এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এলাকা থেকে শিশুশ্রম দূর করতে একটি স্কুল গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয় ৷ সেখান থেকে বালা ভারতী স্কুলের সূচনা ৷ 2006 সালে স্কুলের জন্য একটি ভালো বিল্ডিং তৈরিতে সাত একর জমি সংগৃহীত হয় ৷ ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন হয় ৷ কিন্তু টাকার অভাবে স্কুল গড়ার কাজ বন্ধ হয়ে যায় ৷
সব মহিলারা মিছিল করে তহবিল জোগাড় করেন ৷ প্রচুর পরিশ্রম করে প্রায় 7 কোটি টাকা খরচে একটি দারুণ ভবন তৈরি হয় 2017 সালে ৷ তখন অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু সরকারের জমানা ৷ স্কুলটি চালু হয় ৷ ওরভাকাল্লু মণ্ডলে হাজারখানেক ডিডব্লিউসিআরএ সেভিংস সোসাইটি আছে ৷ 10 হাজার মহিলা এবং তাঁদের পরিবারের সঞ্চয় দিয়ে তিলে তিলে এই ভবনটি গড়ে ওঠে ৷
চারতলা ওই ভবনটিতে এখন প্রায় 700 বাচ্চা পড়াশোনা করে ৷ ইংরেজি মাধ্যমে উন্নত মানের লেখাপড়া হয় মহিলা শ্রমিকের অর্থে তৈরি স্কুলটিতে ৷ আর দশটা কর্পোরেট স্কুলের মতোই ৷ প্রায় 31 জন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ৷ 10 জনেরও বেশি অশিক্ষক কর্মী ৷ খুব কম খরচে বাচ্চারা এখানে পড়তে পারে ৷ অনাথদের বিনামূল্যে পড়ানো হয় ৷ ডিডব্লিউসিআরএ-র এই স্কুলে একশোরও বেশি শিশু বিনা খরচে ভরতি হয়েছে ৷ এলাকার 27টি গ্রাম থেকে শিশুদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া এবং বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য 9টি বাস আছে ৷ প্রতি বছর দশম শ্রেণির পরীক্ষায় 100 শতাংশ পড়ুয়া পাশ করে ৷ খেলাধুলোর ক্ষেত্রেও এখানকার পড়ুয়ারা মেধার পরিচয় দেখিয়েছে ৷
এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য বিজয়ালক্ষ্মী স্মৃতিচারণ করে বলেন, "আমরা প্রথম শিশু শ্রমিকদের জন্য স্কুল তৈরি করেছিলাম ৷ তাতে বেশ সাফল্য মেলে ৷ দ্রুত আমরা চিন্তাভাবনা করে স্কুলের পরিধি বাড়াই ৷ আমি এই স্কুলের অংশ হিসেবে গর্ব বোধ করছি ৷ এটা যেন স্কুলের থেকেও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় বলে মনে হচ্ছে ৷ আমার বিশ্বাস, আগামী দিনে এটা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে ৷"
আরও পড়ুন: নারী দিবসে 10 হাজার মহিলার বাড়িতে পৌঁছানোই লক্ষ্য তৃণমূলের