হায়দরাবাদ, 2 ডিসেম্বর: ভোট শেষে এখন ফলের দিকে তাকিয়ে সব পক্ষই ৷ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের মধ্য়ে চার রাজ্যেরই ফল ঘোষণা হয়ে যাবে ৷ আর এই চার রাজ্যের ফলই অনেকাংশে 'ইন্ডিয়া' জোটের ভবিষ্যৎ নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল ৷ একই সঙ্গে, এই চার রাজ্যের ভোটের ফল থেকে বিরোধী জোটে কংগ্রেস নিজের দরও কিছুটা বাড়াতে পারবে ৷ অন্তত রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্য়া, কর্ণাটকের পর বছরের শেষে দক্ষিণ এবং উত্তর ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিন রাজ্যের ভোটে সরাসরি লড়াই হচ্ছে কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে ৷ আর সেই ভোটের ফলের দিকেই এখন কার্যত তাকিয়ে দুই দলই ৷
গত 13 মে কর্ণাটক বিধানসভার ভোটের ফলে চূড়ান্ত ধাক্কা লেগেছিল পদ্মশিবিরে ৷ দক্ষিণের অন্যতম বড় রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে বড় পরীক্ষায় বসেছে বিজেপি ৷ কর্ণাটক নির্বাচনের শতাংশের বিচারে বিজেপি কংগ্রেসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেললেও, আসন সংখ্য়ার নিরীখে অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছিল ৷ আর ফলের কাঁটাছেড়ার পর বিজেপি নেতাদের দাবি, রাজ্য নেতৃত্বের ব্যর্থতার পাশাপাশি লিঙ্গায়েত সমাজ-সহ অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেনির মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ৷ প্রশ্ন উঠছে, সেই ঘটনারই কী পুনরাবৃত্তি হবে এই চার রাজ্যের ভোটেও, নাকি কর্ণাটক থেকে শিক্ষা নিয়েছে বিজেপি ?
অন্যদিকে, কর্ণাটক ভোট থেকেই কার্যত ইস্তেহারে কল্পতরু হতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসকে ৷ তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিশেষ করে মহিলা এবং অনগ্রসর শ্রেনির মানুষকে কাছে টানতেও সক্ষম হয়েছে 'হাত' ৷ রাহুল গান্ধির 'ভারত জোড়ো যাত্রা'-কে সামনে রেখেই এই নির্বাচনেও কংগ্রেস লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিল ঠিকই, কিন্তু রাজনৈতিক মহল অবশ্য বলছে, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় নির্বাচনী ইস্তেহারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে হাত শিবির, আদতে ভোট বাক্সে তারই ফল পেতে চলেছে তারা ৷
রাজনৈতিক মহলের দাবি, চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল বিজেপির থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে কংগ্রেসের কাছে ৷ তার মূল কারণ, বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটের রাশ আদৌ কংগ্রেসের হাতে থাকবে কি না ৷ নির্বাচনী বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, 26 দলের বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মুখ এখনও চূড়ান্ত নয় ৷ অন্যদিকে, বিজেপি যে ফের নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখেই 24-এর ভোট ময়দানে নামবে তা স্পষ্ট ৷ বিরোধী ঐক্যের অন্যতম প্রধান দল কংগ্রেস যদি এই রাজ্যগুলিতে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে স্বাভাবিকভাবেই জোটের মধ্যেও দলের এবং দল নেতার গ্রহণযোগ্যতা কমবে ৷ সে ক্ষেত্রে ইউপিএ 1 বা 2-এর মতো আরও একবার সেই জোট সঙ্গীদের বদান্যতার উপরই ভরসা করে চলতে হবে শতাব্দী প্রাচীন এই দলকে ৷
যদিও কংগ্রেস নেতারা বলছেন, তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম ৷ উলটে কংগ্রেস যথেষ্ট ভালো ফল করবে বলেই আশাবদী কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷ শনিবার কংগ্রেস নেতা বালাসাহেব থোরাট বলেন, "দেশের ধারণা পালটেছে ৷ মানুষ বিজেপির ওপর ক্ষুব্ধ ৷ সুতরাং এই রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের জন্য ভালো ফল আসবে, আর ফলাফল বিজেপির বিরুদ্ধেই হবে আমি নিশ্চিত ৷" কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, "আমরা প্রথম থেকেই এটা জানি যে রাজস্থান-সহ চার রাজ্যেই কংগ্রেস সরকার গঠন করতে চলেছে। মিজোরামে জোট সরকার হবে। আমি নিশ্চিত যে রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার গঠন করবে।"
কংগ্রেসের পালটা জয়ের বিষয়ে 100 শতাংশ নিশ্চিত বিজেপি নেতৃত্বও ৷ এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, "আমি প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি যে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত জনগণ বিজেপিকে আশীর্বাদ করবে ৷ আমরা পূর্ণসংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করব।" অন্যদিকে, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, "সব জায়গাতেই আমাদের খুব ভালো জয় হবে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত ৷"
আরও পড়ুন