চণ্ডীগড়, 3 অগস্ট: নুহতে হিংসা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার জন্য কারা দায়ী, তা তদন্ত করছে সরকার । কিন্তু যেভাবে ঘটনাটি এত বড় আকার ধারণ করেছে তাতে সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । প্রশ্ন উঠছে, ব্রজ মণ্ডল যাত্রার নিরাপত্তা নিয়েও ৷ পুলিশ ও প্রশাসনের গাফিলতি, নাকি এরকম ঘটনার আভাস সরকারের পায়নি, সে নিয়েও জল্পনা রাজনৈতিকমহলে ৷
নুহ হিংসা, ষড়যন্ত্র ও রাজনীতি: নুহতে হিংসার ঘটনায় শতাধিক যানবাহন পোড়ানো হয়েছে ৷ মৃত্যু হয়েছে 6 জনের ৷ তাঁদের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ৷ অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৷ পুলিশ প্রশাসন হিংসা ঠেকাতে পারেনি । একপ্রকার নীরব দর্শকে পরিণত হয়েছিল তারা বলে অভিযোগ ৷ এত সহজে কিভাবে হিংসা ছড়াল? পুরো ঘটনাটি যদি দেখা যায়, তাহলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে এই হিংসার ঘটনার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল । তাহলে পুলিশ ও প্রশাসন কেন ব্রজ মণ্ডল যাত্রার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা করেনি? পুলিশ ও প্রশাসন কি বিষয়টি জানত না?
হিংসা ঘটনার দিনে ছুটিতে ছিলেন নুহের এসপি: এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে জেলার এসপিকে নিয়ে ৷ যেদিন অশান্ত হয়ে ওঠে নুহ তিনি সেদিন ছুটিতে ছিলেন । ফলে সেসময় তাঁর অনুপস্থিতিতে পালওয়ালের এসপিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ তথ্য অনুসারে, হিংসার ঘটনার সময় তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না । অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টারের কথায়, নুহের এসপি তাঁর নির্ধারিত সময়সূচী অনুসারে 10, 12 দিন আগে ছুটিতে গিয়েছিলেন । এই সময়ে অশান্তি ছড়ানোর তেমন কোনও সম্ভাবনা ছিল না । তবে প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে, যখন এই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তখন জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে একদিন আগে উভয় পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন । যেখানে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে যাত্রা শান্তিপূর্ণ হবে এবং কোনও ধরণের উত্তেজনা ছড়াবে না । প্রশাসন প্রতিনিয়ত নজর রাখছিল বিষয়টির উপর ৷ কিন্তু হঠাৎ করেই এসব ঘটনা ঘটেছে । এখন তদন্তে যে ধরনের তথ্য বেরিয়ে আসবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ যদি এটা ষড়যন্ত্র হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে ।
আরও পড়ুন: গুরুগ্রামে হিংসার ঘটনায় উদ্বিগ্ন আমেরিকা, শান্তি ফেরাতে আর্জি
যাত্রার নিরাপত্তায় 900 পুলিশকর্মী: ব্রজ মণ্ডল যাত্রার নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিলেন 900 পুলিশ কর্মী । তবে দুষ্কৃতীদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে পুলিশের উপস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে কোনও ভয় ছিল না । যাত্রায় আসা লোকজনও বলছেন, সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা ছিল না । তিনদিক থেকে ঘেরাও করে লোকজন সেখানে হামলা চালায় ।
হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী কী বলছেন? হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী কানওয়ার পাল গুর্জারকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি বিশ্বাস করেন না যে এতে সরকারের সরাসরি ব্যর্থতা রয়েছে? এ বিষয়ে তিনি বলেন, "এই যাত্রার জন্য পুলিশের যা করার সবরকম ব্যবস্থাই করা হয়েছিল । যাত্রার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের কথোপকথন ভিডিয়োতে শুনেছি যে সেখানে 500 পুলিশ মোতায়েন রয়েছে । পুলিশ এত বড় ষড়যন্ত্রের তথ্য আগে থেকে পাইনি বলে মনে করছেন তারা । এর জন্য যদি কোনও কর্মকর্তাও দোষী হন তাহলে অবশ্যই সরকার তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে ।"
নুহ হিংসার ঘটনার জন্য দায়ী কে? মনু মানেসারের সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিয়োটিকেও এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে । মনে করা হচ্ছে, যাত্রায় অংশ নেওয়া নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় মনু মানেসার পোস্ট করা ভিডিয়োর কারণে সেখানে হিংসার ঘটনা ঘটেছে । পাশাপাশি মনু মানেসারও যাত্রায় তাঁর অংশগ্রহণের একটি ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন ৷ যার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল । অর্থাৎ মনু মানেসারকেও অশান্তির জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: মৃত বেড়ে 6, অপরাধীরা রেহাই পাবে না; জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
মনু মানেসার সম্পর্কে হরিয়ানা সরকারের কাছে কোনও তথ্য ছিল না: মনু মানেসার সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, "রাজস্থান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে । আমরা রাজস্থান সরকারকে বলেছি যে তাঁকে খুঁজে পেতে তাদের যে ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন হোক না কেন আমরা তা করতে প্রস্তুত । তারা বলেছে যে রাজস্থান পুলিশ মনু মানেসারকে খুঁজছে ৷ সে কোথায় এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে তাঁর সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই । রাজস্থান পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং আমরা যতটা প্রয়োজন সাহায্য করব ৷"
নুহ হিংসা নিয়ে হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া: মনু মানেসারের সোশাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো পোস্ট করার পরে হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ বলেন, " পুরো ঘটনার পক্ষে যুক্তি দিতে একজন অপরাধী ভিডিয়োটি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল, এটা সঠিক কাজ হয়নি । এর মানে আপনি কারও বাড়ি জ্বালিয়ে দিন, যানবাহন জ্বালিয়ে দিন, এটা কোন বইয়ে লেখা?" এ ঘটনায় মনু মানেসারের কোনও ভূমিকা থাকলে তাঁর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
তদন্তে সাইবার বিভাগের আধিকারিকরা: একই সঙ্গে গোটা ঘটনায় বহিরাগতদেরও হাত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । মানে বাইরের কিছু লোকও এই হিংসার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে । এ প্রসঙ্গে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল বলেন, "আমাদের সাইবার বিভাগের আধিকারিকরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে । সোশাল মিডিয়া এবং টেলিফোনের কথোপকথনের রেকর্ড যাচাই করা হচ্ছে । যার কারণে কে কাকে কতবার ফোন করেছে, তার সব তথ্য সরকার পাওয়া গেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে । সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে । এর মধ্যে তদন্ত শেষে 116 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।"
আরও পড়ুন: নুহের পর অশান্ত গুরুগ্রাম ! একের পর এক দোকানে আগুন
গোয়েন্দা বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন: অন্যদিকে রাজ্য সরকার ক্রমাগত বলছে এই পুরো ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে । কেউ না কেউ এই পুরো ঘটনাটি ঘটিয়েছে । কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ কি এ ব্যাপারে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে? তাদের কাছে কোনও তথ্যা ছিল না ঘটনার ? তাদের ব্যর্থতার কারণে এই পুরো ঘটনাটি ঘটেছে ? কারণ দুষ্কৃতীরা যেভাবে সেখানে পাথর সাজিয়ে অন্য অস্ত্র সংগ্রহ করেছিল । এ থেকে স্পষ্ট যে কোথাও না কোথাও গোয়েন্দা বিভাগ এসব তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে । এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লালের বক্তব্য, তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলেই বিষয়টি নিয়ে সব কথা বলা ঠিক হবে । সে বিষয়ে আজকে কিছু বলতে গেলে ওইসব কথা প্রচার করা হবে ৷ তদন্তের পরই সব তথ্য পাওয়া যাবে ।