হায়দরাবাদ, 31 জানুয়ারি: সংসদে (Budget 2023) তাঁর প্রথম ভাষণে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (Droupadi Murmu) মুখে শোনা গিয়েছে কুন্তলা কুমারী সাবতের নাম (Kuntala Kumari Sabat)৷ কে এই কুন্তলা কুমারী ? দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় হাতে গোনা যে কয়েকজন মহিলা কবির কলম গর্জে উঠেছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই মহিলা ৷ দেশে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কতটা ব্যাপকভাবে কাজ করেছে তা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মুর্মু মঙ্গলবার সাবতের একটি কবিতা স্মরণ করেছেন (President Murmu recited during maiden speech)৷ ভারতীয় মহিলারা বিশ্বের অন্যান্য মহিলাদের থেকে দুর্বল বা নিকৃষ্ট নয়, এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি ।
সাবতের লেখায় স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং নারীর ক্ষমতায়ন: বাজেট অধিবেশন 2023-এর সূচনায় সংসদের যৌথ অধিবেশনে আজ বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু ৷ তখনই তিনি মনে করিয়ে কুন্তলা কুমারী সাবতের কথা ৷ ওড়িয়া কবি হিসেবে জনপ্রিয় সাবতের লেখা অধিকাংশ কবিতার মূল বিষয়বস্তু হল স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং নারীর ক্ষমতায়ন ৷ যখন ভারতীয় সমাজে পুরুষদের থেকে নারীদের অনেকটা পিছিয়ে রাখা হত, সেই সময় দাঁড়িয়ে নিজের কলমে শান দিয়েছিলেন সাবত ৷
অসাধারণ প্রতিভাবান সাবত: স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তাঁর লেখনীর দ্বারা নিজস্ব একটি পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন তিনি ৷ ব্রিটিশদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য জাতিকে ভাবিয়ে তোলে তাঁর দৃপ্ত কলম ৷ সব কিছুতেই অসাধারণ প্রতিভাবান সাবত ৷ তিনি শুধু একজন কবি নন, তিনি একাধারে ছিলেন চিকিৎসক, লেখক, সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেত্রী এবং সমাজসেবক ৷ খুব অল্প বয়সে 1925 সালে উৎকল ভারতীতে সম্মানিত হন ।
লাখো নারী ও তরুণের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন সাবত: তাঁর কবিতা ও লেখনী দিয়ে সাবত হয়ে ওঠেন লাখো নারী ও তরুণের কণ্ঠস্বর । স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি আরও বেশি করে তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার জন্য তাঁর লেখাগুলি চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল । সাবতের কবিতাগুলি বেশিরভাগই মহাত্মা গান্ধি এবং জওহরলাল নেহরুর মতো জাতীয় নেতাদের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ছিল ৷ তবে তাঁর সঙ্গেই যুক্ত ছিল কট্টর নারীবাদ ৷
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় পর্বে মোদি সরকারের কাজের প্রশংসা রাষ্ট্রপতির বাজেট ভাষণে
নারীদের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদানের আহ্বানছ তাঁর কবিতার মাধ্যমে সাবত ওড়িশার নারীদের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন । তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে দরিদ্র এবং সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত অংশের জন্য তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেন । সমাজে ছড়িয়ে থাকা কুসংস্কার ও অসাম্য মোকাবিলার প্রচেষ্টাও তাঁর লেখায় প্রকাশ পেয়েছে ।
ছত্তীসগড়ের জগদলপুরে জন্ম: কুন্তলা কুমারী সাবত 1901 সালের 8 ফেব্রুয়ারি ছত্তীসগড়ের জগদলপুরে জন্মগ্রহণ করেন ৷ তাঁর বাবা ড্যানিয়েল ছিলেন একজন চিকিত্সক । তাঁর পরিবার কিছু সময়ের জন্য মায়ানমারে চলে গিয়েছিল, কিন্তু কিছু পারিবারিক সমস্যার কারণে, কুন্তলা তাঁর মা মনিকাকে নিয়ে ওড়িশায় ফিরে আসেন ৷
সাবতের পড়াশোনা, লেখালেখি: তিনি পড়াশোনা করেন খুরদাতে ও পরে কটকে ৷ ব়্যাভেনশ গার্লস স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি কটকে মেডিক্যালের শিক্ষা গ্রহণ করেন । এরপর তিনি একজন মহিলা চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন । কিন্তু লেখালেখির প্রতি তাঁর আবেগকে তিনি কমতে দেননি । গোপবন্ধু দাসের দ্বারা অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হয়ে সাবত ওড়িয়ার পাশাপাশি ইংরেজি, বাংলা এবং হিন্দিতেও কবিতা রচনা শুরু করেন ।
1938 সালে 37 বছর বয়সে জীবনাবসান হয় সাবতের । যদিও তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি ৷ তবে তাঁর লেখায় দেশপ্রেমের একটি দৃঢ় অনুভূতি প্রতিফলিত হয় যা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের কয়েক দশক পর আজও অনেককে অনুপ্রাণিত করে ৷