ETV Bharat / bharat

Independence Special : জালিয়ানওয়ালা বাগের মতোই নৃশংস ছিল কেরালার ওয়াগন ট্র্যাজেডি

1921 সালের 20 নভেম্বর কেরালায় ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে ৷ কেরালার উত্তর অংশের মালাবার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের দমনপীড়ন ও গ্রেফতারিও আন্দোলনের গতি কমাতে পারেনি ৷

author img

By

Published : Sep 11, 2021, 6:05 AM IST

Wagon Tragedy as one of the worst massacres like the Jallianwala Bagh
Wagon Tragedy : জালিয়ানবাগের মতোই নৃশংস ছিল কেরলের ওয়াগান ট্রাজেডি

মালাপ্পুরম (কেরালা), 11 সেপ্টেম্বর : উত্তর কেরালার মাপ্পিলা মুসলিমরা ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন আন্দোলন শুরু করেছিলেন ৷ যা ইতিহাসে মালাবার বিদ্রোহ নামে পরিচিত ৷ মহাত্মা গান্ধি ও জাতীয় নেতারা এই বিদ্রোহকে সমর্থন করেন ৷ তার পর অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে এই আন্দোলন যুক্ত হয় ৷ কিছুদিন পরই এই আন্দোলন রক্তক্ষয়ী হয়ে ওঠে ৷ পরে সাম্প্রদায়িকও হয়ে যায় ৷

আরও পড়ুন : Mohan Bhagwat : এদেশে হিন্দু-মুসলমানের পূর্বপুরুষ একই, ব্রিটিশরা এসে ভুল বুঝিয়েছে; দাবি ভাগবতের

ব্রিটিশদের পক্ষে এই আন্দোলন দমন করা একেবারেই সহজ ছিল না ৷ কিন্তু 1921 সালের শেষের দিকে এই আন্দোলন থামাতে তারা সমর্থ হয় ৷ বন্দিদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যখন ব্রিটিশরা নিয়ে যাচ্ছিল, তখন এমন একটি ঘটনা ঘটে, যা এই আন্দোলনে গভীর দাগ ফেলে দেয় ৷ যা ওয়াগন ট্র্যাজেডি নামে পরিচিত ৷ ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয় বিদ্রোহীদের উপর হওয়া সেই নৃশংস অত্যাচারের এটা 100 তম বছর ৷

মালাবার বিদ্রোহের একেবারে শেষের দিকে মালাপ্পুরনম-পালাক্কড় জেলার সীমায় পুলামানটল সেতু সেতু ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগে 100 জন বিদ্রোহীকে আটক করে ব্রিটিশরা ৷ 1921 সালের 20 নভেম্বর মালাপ্পুরমের তিরুর রেল স্টেশন থেকে কর্নাটকের বেলারি কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় বন্ধ ওয়াগনে করে ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : ব্রিটিশদের কঠিন লড়াইয়ে মুখে ফেলেছিলেন আথারগড়ের রাজা এবং জমিদাররা

কোনোলি আহমেদ হাজি, ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন ৷ 1981 সালে তাঁর সেই ভয়ানক স্মৃতির কাহিনি ‘ওয়াগন ট্র্যাজেডি’ হিসেবে প্রকাশিত হয় ৷ সেখানে তিনি জানান, বালিশে তুলো ভরার মতো বন্দিদের ওয়াগনে প্রবেশ করানো হয় ৷ অনেক বন্দি কার্যত এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷ বন্দুক দিয়ে সেনার তরফে বন্দিদের ভিতরে ঠেলে দেওয়া হয় ৷ আর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় ৷ যাত্রা শুরু হওয়ার পরই ওয়াগনের ভিতরটা পুরো গ্যাস চেম্বার হয়ে যায় ৷

এর পর কী হল ? তাও বর্ণনা করেছিলেন আহমেদ হাজি ৷ তিনি জানান, ভিতরে আলো ও বাতাস প্রবেশের কোনও জায়গা ছিল না, তাই দমবন্ধকর পরিস্থিতির জেরে বন্দিরা চিৎকার শুরু করেন ৷ অনেকে তৃষ্ণার্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ অনেকে অসাড়ে মল-মূত্র ত্যাগ করে ফেলেন ৷ এমনকী, তৃষ্ণা মেটাতে তাঁরা ঘাম ও মূত্র পান করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে লড়েছিলেন রামগড়ের রানি অবন্তী বাঈ

শ্বাস নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে তাঁরা একে অপরকে কামড়াতে শুরু করেন ৷ একে অপরের সঙ্গে মারামারিও শুরু করেন ৷ নখ দিয়ে ছোট্ট একটি গর্ত তৈরি করে তাঁরা শ্বাস নিতে শুরু করেন ৷ কিছুক্ষণ পর হাজি অজ্ঞান হয়ে যান ৷ তাঁর যখন জ্ঞান ফেরে, তখন পুরো ওয়াগন মল, মূত্র, রক্ত, বমি ও মৃতদেহে ভরে গিয়েছিল ৷

ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছিল তিরুর থেকে ৷ যদিও পালাক্কাড় জেলার শোরনুর এবং ওলাভাক্কোড়ে ট্রেন থেমেছিল ৷ প্রতিটি রেল স্টেশনেই বন্দিদের চিৎকার শোনা গিয়েছে ৷ কিন্তু ব্রিটিশ সেনা ওয়াগন খুলতে রাজি হয়নি ৷ ট্রেন শেষ পর্যন্ত থামে তামিলনাড়ুর পতান্নুর স্টেশনে ৷ ততক্ষণে 64 জন মারা গিয়েছেন৷ আর বাকিরা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ৷ হাজিও তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ৷

জালিয়ানওয়ালা বাগের মতোই নৃশংস ছিল কেরালার ওয়াগন ট্র্যাজেডি

আরও পড়ুন : Salt Satyagraha : সমুদ্র ক্রমশ এগিয়ে আসছে, ইনচুড়িতে অবলুপ্তির পথে ভারতের দ্বিতীয় ডান্ডি

এই ঘটনার স্মৃতিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘কেউ একজন ওয়াগনে ঠান্ডা জলে ভরে দিয়েছিল ৷ আমার তখন কাঁপুনি শুরু হয়েছে ৷ আমাকে যখন কোয়েম্বাটুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন বুঝলাম যে আমি বেঁচে আছি ৷’’

ইতিহাসবিদরা এই ঘটনাকে জালিয়ানবাগের থেকেও ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড বলে বর্ণনা করেন ৷ কোয়েম্বাটুরের হাসপাতালে চিকিৎসার বাকি বন্দিদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৷ রেল আধিকারিকদের মৃতদেহ-সহ ট্রেন পতান্নুর থেকে তিরুরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয় ৷

আরও পড়ুন : BJP protest : লাহোরে মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে দিল্লিতে বিজেপির বিক্ষোভ

একশো বছর পরও ঘটনার স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় তিরুরে ৷ ওয়াগনে যে মৃতদেহগুলি ফিরিয়ে আনা হয়েছিল পতান্নুর থেকে তার মধ্যে 44টি সমাধিস্থ করা হয় তিরুরের কোরানঘাট জামা মসজিদে ৷ আর 11টি মৃতদেহ কোট জামা মসজিদে সমাধিস্থ করা হয় ৷ তুম্বেরি অলিকুট্টি মৃতদেহ সমাধিস্থ করার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৷

তিরুর পৌরসভা কক্ষ তৈরি করা হয় ওই হত্যাকাণ্ডের স্মরণে ৷ সেখানকার গ্রন্থাগার ও বিদ্যালয় ভবনগুলিও ওয়াগনের মতো করে তৈরি করা হয় ওয়াগন ট্র্যাজেডির কথা মনে করে ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : আজও শহিদ ক্ষুদিরামের স্মৃতিতে বুঁদ মুজফ্ফরপুর

মালাপ্পুরম (কেরালা), 11 সেপ্টেম্বর : উত্তর কেরালার মাপ্পিলা মুসলিমরা ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন আন্দোলন শুরু করেছিলেন ৷ যা ইতিহাসে মালাবার বিদ্রোহ নামে পরিচিত ৷ মহাত্মা গান্ধি ও জাতীয় নেতারা এই বিদ্রোহকে সমর্থন করেন ৷ তার পর অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে এই আন্দোলন যুক্ত হয় ৷ কিছুদিন পরই এই আন্দোলন রক্তক্ষয়ী হয়ে ওঠে ৷ পরে সাম্প্রদায়িকও হয়ে যায় ৷

আরও পড়ুন : Mohan Bhagwat : এদেশে হিন্দু-মুসলমানের পূর্বপুরুষ একই, ব্রিটিশরা এসে ভুল বুঝিয়েছে; দাবি ভাগবতের

ব্রিটিশদের পক্ষে এই আন্দোলন দমন করা একেবারেই সহজ ছিল না ৷ কিন্তু 1921 সালের শেষের দিকে এই আন্দোলন থামাতে তারা সমর্থ হয় ৷ বন্দিদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যখন ব্রিটিশরা নিয়ে যাচ্ছিল, তখন এমন একটি ঘটনা ঘটে, যা এই আন্দোলনে গভীর দাগ ফেলে দেয় ৷ যা ওয়াগন ট্র্যাজেডি নামে পরিচিত ৷ ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয় বিদ্রোহীদের উপর হওয়া সেই নৃশংস অত্যাচারের এটা 100 তম বছর ৷

মালাবার বিদ্রোহের একেবারে শেষের দিকে মালাপ্পুরনম-পালাক্কড় জেলার সীমায় পুলামানটল সেতু সেতু ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগে 100 জন বিদ্রোহীকে আটক করে ব্রিটিশরা ৷ 1921 সালের 20 নভেম্বর মালাপ্পুরমের তিরুর রেল স্টেশন থেকে কর্নাটকের বেলারি কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় বন্ধ ওয়াগনে করে ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : ব্রিটিশদের কঠিন লড়াইয়ে মুখে ফেলেছিলেন আথারগড়ের রাজা এবং জমিদাররা

কোনোলি আহমেদ হাজি, ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন ৷ 1981 সালে তাঁর সেই ভয়ানক স্মৃতির কাহিনি ‘ওয়াগন ট্র্যাজেডি’ হিসেবে প্রকাশিত হয় ৷ সেখানে তিনি জানান, বালিশে তুলো ভরার মতো বন্দিদের ওয়াগনে প্রবেশ করানো হয় ৷ অনেক বন্দি কার্যত এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷ বন্দুক দিয়ে সেনার তরফে বন্দিদের ভিতরে ঠেলে দেওয়া হয় ৷ আর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় ৷ যাত্রা শুরু হওয়ার পরই ওয়াগনের ভিতরটা পুরো গ্যাস চেম্বার হয়ে যায় ৷

এর পর কী হল ? তাও বর্ণনা করেছিলেন আহমেদ হাজি ৷ তিনি জানান, ভিতরে আলো ও বাতাস প্রবেশের কোনও জায়গা ছিল না, তাই দমবন্ধকর পরিস্থিতির জেরে বন্দিরা চিৎকার শুরু করেন ৷ অনেকে তৃষ্ণার্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ অনেকে অসাড়ে মল-মূত্র ত্যাগ করে ফেলেন ৷ এমনকী, তৃষ্ণা মেটাতে তাঁরা ঘাম ও মূত্র পান করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে লড়েছিলেন রামগড়ের রানি অবন্তী বাঈ

শ্বাস নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে তাঁরা একে অপরকে কামড়াতে শুরু করেন ৷ একে অপরের সঙ্গে মারামারিও শুরু করেন ৷ নখ দিয়ে ছোট্ট একটি গর্ত তৈরি করে তাঁরা শ্বাস নিতে শুরু করেন ৷ কিছুক্ষণ পর হাজি অজ্ঞান হয়ে যান ৷ তাঁর যখন জ্ঞান ফেরে, তখন পুরো ওয়াগন মল, মূত্র, রক্ত, বমি ও মৃতদেহে ভরে গিয়েছিল ৷

ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছিল তিরুর থেকে ৷ যদিও পালাক্কাড় জেলার শোরনুর এবং ওলাভাক্কোড়ে ট্রেন থেমেছিল ৷ প্রতিটি রেল স্টেশনেই বন্দিদের চিৎকার শোনা গিয়েছে ৷ কিন্তু ব্রিটিশ সেনা ওয়াগন খুলতে রাজি হয়নি ৷ ট্রেন শেষ পর্যন্ত থামে তামিলনাড়ুর পতান্নুর স্টেশনে ৷ ততক্ষণে 64 জন মারা গিয়েছেন৷ আর বাকিরা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ৷ হাজিও তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ৷

জালিয়ানওয়ালা বাগের মতোই নৃশংস ছিল কেরালার ওয়াগন ট্র্যাজেডি

আরও পড়ুন : Salt Satyagraha : সমুদ্র ক্রমশ এগিয়ে আসছে, ইনচুড়িতে অবলুপ্তির পথে ভারতের দ্বিতীয় ডান্ডি

এই ঘটনার স্মৃতিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘কেউ একজন ওয়াগনে ঠান্ডা জলে ভরে দিয়েছিল ৷ আমার তখন কাঁপুনি শুরু হয়েছে ৷ আমাকে যখন কোয়েম্বাটুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন বুঝলাম যে আমি বেঁচে আছি ৷’’

ইতিহাসবিদরা এই ঘটনাকে জালিয়ানবাগের থেকেও ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড বলে বর্ণনা করেন ৷ কোয়েম্বাটুরের হাসপাতালে চিকিৎসার বাকি বন্দিদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৷ রেল আধিকারিকদের মৃতদেহ-সহ ট্রেন পতান্নুর থেকে তিরুরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয় ৷

আরও পড়ুন : BJP protest : লাহোরে মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে দিল্লিতে বিজেপির বিক্ষোভ

একশো বছর পরও ঘটনার স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় তিরুরে ৷ ওয়াগনে যে মৃতদেহগুলি ফিরিয়ে আনা হয়েছিল পতান্নুর থেকে তার মধ্যে 44টি সমাধিস্থ করা হয় তিরুরের কোরানঘাট জামা মসজিদে ৷ আর 11টি মৃতদেহ কোট জামা মসজিদে সমাধিস্থ করা হয় ৷ তুম্বেরি অলিকুট্টি মৃতদেহ সমাধিস্থ করার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৷

তিরুর পৌরসভা কক্ষ তৈরি করা হয় ওই হত্যাকাণ্ডের স্মরণে ৷ সেখানকার গ্রন্থাগার ও বিদ্যালয় ভবনগুলিও ওয়াগনের মতো করে তৈরি করা হয় ওয়াগন ট্র্যাজেডির কথা মনে করে ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : আজও শহিদ ক্ষুদিরামের স্মৃতিতে বুঁদ মুজফ্ফরপুর

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.