মুজাফফরনগর, 26 অগস্ট: সাম্প্রদায়িক মন্তব্য এবং সহপাঠীদের দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর এক সংখ্য়ালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রকে চড় মারানোর অভিযোগে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল পুলিশ ৷ মুজাফফরনগর পুলিশ শনিবার জানিয়েছে, দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্র হোমওয়ার্ক না করে আসার জন্য সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেন ওই শিক্ষিকা ৷ শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত শিক্ষিকা এরপর এক ছাত্রকে ওই সংখ্যালঘু সহপাঠীকে চড় মারার নির্দেশ দেন। এখানেই শেষ নয়, পর পর বেশ কয়েকজন সহপাঠী ছাত্রটিকে চড় মারে তৃপ্তি ত্যাগী নামে ওই শিক্ষিকার নির্দেশে । খুব্বাপুর গ্রামের একটি স্কুলের শিক্ষিকার সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরই পদক্ষেপ করেছে পুলিশ ৷ ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও ৷
সমাজবাদী পার্টি এই ঘটনার জন্য বিজেপি এবং আরএসএসের 'ঘৃণার রাজনীতি'কেই মূলত দায়ী করেছে। অন্যদিকে, বিজেপি পালটা একে সস্তার রাজনীতি বলে উড়িয়ে দিয়েছে ৷ একই সঙ্গে, আত্মপক্ষ সমর্থনে শিক্ষিকা তৃপ্তি ত্যাগী জানিয়েছেন, উত্তেজনা বাড়ানোর জন্যই ভিডিয়োটি ছড়ানো হয়েছে। তাঁর অবশ্য দাবি, সহপাঠীদের দিয়ে একজন ছাত্রকে চড় মারা তাঁর ভুল হয়েছিল ৷ তবে তিনি প্রতিবন্ধী হওয়ার জেরে বাধ্য হয়ে তাঁকে এই কাজ করতে হয়েছিল ৷ অভিযুক্ত শিক্ষিকার দাবি, তিনি ঠিক মতো দাঁড়াতে পারেন না বলেই ওই ছাত্রের কাছে পৌঁছতে পারেননি।
ছেলেটির পরিবারের অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ শিক্ষিকা তৃপ্তি ত্যাগীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে ৷ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যে ধারাগুলি আনা হয়েছে তা এখনও প্রকাশ করেনি পুলিশ ৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি শুক্রবার টুইট করে এই ঘটনার নিন্দা করে লিখেছেন, "নিরীহ শিশুদের মনে বৈষম্যের বিষ বপন করা, স্কুলের মতো পবিত্র স্থানকে ঘৃণার বাজারে পরিণত করা, একজন শিক্ষিকা এর চেয়ে খারাপ কিছু করতে পারেন না। এই জিনিস বিজেপি ছড়িয়ে দিয়েছে যা ভারতের প্রতিটি কোণে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। শিশুরা ভারতের ভবিষ্যৎ ৷ আমাদের সকলকে তাদের শেখাতে হবে ঘৃণা নয় ভালবাসা।"
মুজাফফরনগরের প্রাথমিক শিক্ষাধিকারী শুভম শুক্লা শনিবার জানিয়েছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে ৷ তিনি বলেন, "স্কুলে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে ৷ স্কুল ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে ৷" সমাজবাদী পার্টি অভিযোগ করেছিল যে এটি বিজেপি এবং আরএসএসের "ঘৃণার রাজনীতি" যা দেশকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে এসেছে যেখানে একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের ধর্মের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি ছেলেকে চড় মারার জন্য বলতে পারেন। এসপি প্রধান অখিলেশ যাদবও একটি পোস্টে শিক্ষককে অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবি করেছেন ৷ পাশাপাশি তাঁকে "শিক্ষক সমাজের উপর কলঙ্ক" বলেও দেগেছেন অখিলেশ।
অন্যদিকে, পুলিশ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ৷ বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধি টুইটে পোস্ট করে লিখেছেন, "ঘটনাটি লজ্জাজনক। জ্ঞানের মন্দিরে একটি শিশুর প্রতি ঘৃণার অনুভূতি সারা দেশের লজ্জায় মাথা নত করেছে। একজন শিক্ষক হলেন একজন মালি যিনি প্রাথমিক শিক্ষায় জ্ঞানের সার প্রয়োগ করে শুধু ব্যক্তিত্বই গড়ে তোলেন না, একটি জাতিও গড়ে তোলেন।"
আরও পড়ুন: শনি-সকালে বেঙ্গালুরুতে মোদির মেগা শো, বিমানবন্দর টু ইসরো ; দেখুন ভিডিয়ো
তিনি বলেন, "সুতরাং একজন শিক্ষকের কাছ থেকে নোংরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে প্রত্যাশা অনেক বেশি। এটা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ৷" সার্কেল অফিসার রবি শঙ্কর জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে এটি জানা গিয়েছে যে, স্কুলের কাজ না করার জন্য ছাত্রটিকে মারধর করা হয়েছিল এবং এতে আপত্তিকর কিছু ছিল না।