গোরখপুর, 27 সেপ্টেম্বর : সে দিনের গদ্দার আজ নির্দোষ ৷ চিকিৎসক কাফিল খান এখন সম্পূর্ণ মুক্ত, নিরাপরাধ ৷
লঘু দোষে গুরু দণ্ড ! লঘু বললেও ভুল হবে । সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে, তিনি নির্দোষ । এদিকে, তাঁকেই কি না খাটতে হয়েছে জেল । সাসপেন্ডও হয়েছিলেন । লোকমুখে ছড়িয়ে গেছিল, 'কাফিল খান গদ্দার ।' এবার প্রমাণিত হল, 'কাফিল খান নির্দোষ ।'
চিকিৎসক হিসেবে তাঁর নামডাক ছিল রাজ্যজুড়ে । BRD মেডিকেল কলেজের শিশু চিকিৎসক হিসেবে তাঁকেই খুঁজত রোগীর পরিবার । নিজের চেম্বারও ছিল । সেখানে অত্যন্ত কম মূল্যে চিকিৎসা করতেন । এক কথায়, তাঁকে মাসিহা বলেই জানত রোগীর পরিবার পরিজন । কিন্তু, এই মাসিহাকে যে একদিন পরিবেশ, পরিস্থিতি 'শয়তান' তকমা দেবে কে জানত ?
2017 সালের 10 ও 11 অগাস্ট অর্থাৎ মাত্র দু'দিনে মৃত্যু হয় 63 শিশুর । অভিযোগ উঠল, হাসপাতালের CCU (ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে)-তে অক্সিজেন সাপ্লাই না হওয়ায় এত শিশুর মৃত্যু হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে কাফিল খান নিজের চেম্বার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন । সেটাই কাল হল । প্রশাসনের 'নজরে' পড়লেন তিনি । এত সিলিন্ডার এল কোথা থেকে ? তদন্ত শুরু করল যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন । প্রথমেই সাসপেন্ড করা হল তাঁকে । এরপর জেল । অভিযোগ উঠল, অক্সিজেন সিলিন্ডার কম থাকার কথা জেনেও তিনি ব্যবস্থা নেননি । এমন কী, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানাননি । সরকার দাবি করে, এনসেফ্যালাইটিস ওয়ার্ডের নোডাল মেডিকেল অফিসার ইন চার্জও ছিলেন কাফিল । তিনি জানতেন ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা । কারণ, প্রতি বছর গোরখপুর হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে 1000 শিশু ভরতি হয় ।
হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর তদন্ত শেষে FIR হয় 9 জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে । এর মধ্যে নাম ছিল কাফিল খানের । 2017 সালের 2 সেপ্টেম্বর কাফিলকে গ্রেপ্তার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ । তাঁকে জেল হেপাজতে পাঠানো হয় । আট মাস পর ছাড়া পান তিনি । 2018-র এপ্রিলে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তাঁকে জামিনে মুক্ত করে । জানিয়ে দেয়, কাফিলের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার কোনও প্রামাণ্য অভিযোগ নেই ।
সেই দাবি মেনে নেয় সরকার গঠিত তদন্ত কমিটিও । এই তদন্ত কমিটির প্রধান, IAS অফিসার হিমাংশু কুমার । তিনি এপ্রিল মাসে 15 পাতার রিপোর্টে জানান, চিকিৎসায় অবহেলা করেননি কাফিল । নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর খুশিতে আত্মহারা কাফিল । তিনি বলেন, "আসল দোষীকে সরকার ধরতে পারেনি । আমাকে বলিরপাঁঠা করা হয়েছে । এতদিন ধরে রিপোর্ট আমাকে পাঠানো হয়নি । গতকাল তা হাতে পেলাম ।" তিনি আরও বলেন, "সরকারের উচিত ক্ষমা চেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে । সেই সঙ্গে এই ঘটনার CBI তদন্ত করা উচিত ।"
সে দিনের ঘটনা সম্পর্কে কী বলছেন কাফিল ? তাঁর কথায়, "আমি জানতাম কোনও ভুল করিনি । একজন চিকিৎসক, বাবা ও দেশবাসী হিসেবে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি । শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম । তাই, জেলে পাঠানো হল । পরিবারকেও হেনস্থা করা হয় । কাজ থেকেও বসিয়ে দেওয়া হল । এবার চিকিৎসায় মন দিতে পারব ।"