নিউ দিল্লি, 19 এপ্রিল: রবিবার দেশের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লেখেন ইউপিএ জমানার প্রধানমন্ত্রী ৷ রোজের রাজনীতিতে খুব একটা দেখা যায় না তাঁকে, কিন্তু দেশের পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পাঁচটি উপদেশ দিয়ে চিঠি দিতে বাধ্য় হন বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা ৷
আজ তাঁর চিঠির উত্তরে পাল্টা চিঠি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ৷ আর সেই চিঠি তাঁর টুইটে পোস্ট করে প্রাক্তন কংগ্রেসের বর্তমান অবস্থাকে কটাক্ষ করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে জবাব দেন ৷
এই টুইটে তিনি বলেন, "ডক্টর মনমোহন সিংজি, আপনার এই গঠনমূলক সহযোগিতা আর বহুমূল্য পরামর্শ যদি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা মেনে চলতেন সেই সব বিশেষ সময়ে, তাহলে ইতিহাস আপনার প্রতি সদয় হত ৷"
হর্ষ বর্ধন তাঁর চিঠিতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন ৷ তিনি লিখেছেন, "আপনি ভ্য়াকসিনের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন ৷... আপনার দলের, এমনকি রাজ্যে সরকার গঠনে দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা কংগ্রেস নেতারা কিন্তু আপনার মতাদর্শ মেনে চলেছে বলে মনে হয় না ৷" তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই করোনা পরিস্থিতি সামলানোর জরুরি ব্যবস্থাগুলি নিয়েছে, তাই মনমোহন সিংয়ের এই চিঠি পুরোপুরি ভ্রান্ত তথ্যে পরিপূর্ণ ৷
আরও পড়ুন: কোভিড রুখতে রাজস্থানে 3 মে পর্যন্ত কড়া লকডাউন
দেশের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি (সিডব্লিউসি)-র একটি বৈঠকের পর মনমোহন এই চিঠি লেখেন ৷ দেশের করোনা সংক্রমণ নিয়ে বৈঠক করার বদলে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে ব্য়স্ত এই অভিযোগ করে মোদি সরকারের কোভিড স্ট্র্যাটেজিকে "বিশাল অব্যবস্থা" চলছে বলে ঘোষণা করে কংগ্রেস ৷
মনমোহন তাঁর চিঠিতে অক্সিজেন আর ভ্য়াকসিনের অভাবের কথা উল্লখে করে পরামর্শ দেন, কোভিড-19-এর বিরুদ্ধে লড়তে মূল পদক্ষেপ হওয়া উচিত ভ্যাকসিনেশনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ানো ৷
ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কাছে সংখ্যাতত্ত্ব বড় হয়ে উঠছে, এই প্রসঙ্গে নরসীমা জমানার অর্থমন্ত্রী চিঠিতে লেখেন, "প্রতিদিন কত সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, সেই সর্বমোট সংখ্যার দিকে তাকানোর প্রবণতার থেকে জনসংখ্যার কত শতাংশ ভ্যাকসিন পেল, সে দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত ৷"
বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার পাণ্ডিত্য সর্বজনবিদিত ৷ তাই তিনি বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ছ'মাসে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলিকে কত সংখ্যক ভ্যাকসিনের অর্ডার দেওয়া হবে তা প্রকাশ করার কথা জানান ৷ আর রাজ্যকে আগে থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দিলে রাজ্যগুলিও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে পরামর্শ দেন মোদিকে ৷ আর এই ভ্যাকসিন সংক্রান্ত আদানপ্রদানে সরকারকে স্বচ্ছ হওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন তিনি ৷ ভ্যাকসিন উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেশের আইনে প্রয়োজনীয় বদল ঘটিয়ে আরও বেশি কোম্পানিগুলিকে ভ্যাকসিন উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়া প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন চিঠিতে ৷
এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে কেন্দ্রের কাছে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ভ্যাকসিনে চেয়ে পাঠানোর খবর আসছিল ৷ কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার সমালোচনা করে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলিকেই পরিস্থিতি সামলাতে না-পারার জন্য দুষছিলেন ৷ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে চলছে মোদি-শাহ-মমতার রোড শো আর ঘন ঘন জনসভা ৷ কেন্দ্রের তরফে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মানা হচ্ছে না প্রচারে ৷ হাজারে হাজারে মানুষ শারীরিক দূরত্ব না-মেনে, মাস্কবিহীন অবস্থায় ভিড় জমিয়েছেন নেতাদের দেখতে, তাঁদের কথা শুনতে ৷ কুম্ভ মেলার ক্ষেত্রেও শুরু হওয়ার অনেক পরে প্রধানমন্ত্রী মোদি আবেদন জানান প্রতীকী কুম্ভ পালন করার ৷ রাজ্য জয়ের খেয়ালে নেতারা ভুলে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের জীবনের দাম ৷ ভুলেছেন কোভিড প্যানডেমিকে পরিণত হয়েছে, সুপার স্প্রেডার ৷
ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সদর্থক পরামর্শগুলি মোদি আর স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অযোগ্য ভূমিকার দিকটিই স্পষ্ট করেছে ৷ ফলে চটেছেন মোদি, আর তাঁর হয়ে উত্তর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৷