আল্লুরি (অন্ধ্রপ্রদেশ), 11 এপ্রিল: কথায় বলে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় ! এই প্রবাদবাক্য যে কতটা সত্যি, তা আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন ডোরা জাম্মে ৷ শুধুমাত্র একার চেষ্টায় গোটা গ্রামের জন্য পাকা রাস্তা তৈরির বন্দোবস্ত করেছেন এই তরুণী ৷ ডোরা রাজনীতির কারবারি নন, তিনি কোনও ধনী পরিবারের সন্তানও নন ৷ ডোরা ভারতের একজন সাধারণ নাগরিক ৷ যাকে বলে, একেবারে খাঁটি আমআদমি ! সেই ডোরাই একার কাঁধে তুলে নিয়েছেন প্রশাসনের ভাগের কাজ !
অন্ধ্রপ্রদেশের আল্লুরি সিতারাম রাজু জেলার এক অখ্য়াত গ্রাম হল থোটাগোডিপুট ৷ আদিবাসী এই গ্রামটি জোলাপুট পঞ্চায়েতের অধীনে পড়ে ৷ রুখা, শুখা পাহাড়ি জনপদ ৷ তবে, বসত এলাকা হলেও বসবাসের ন্যূনতম অধিকাংশ পরিকাঠামোই এখানে অমিল ৷ নেই রাজ্যের সেই তালিকায় গ্রামের রাস্তাও রয়েছে ৷ বছরের পর বছর ধরে এবড়ো, খেবড়ো পাহাড়ি ঢাল বেয়ে চলাচল করতেই অভ্যস্থ এখানকার মানুষ ৷ রাস্তা না-থাকায় মুমূর্ষূ রোগীরা হাসপাতাল যেতে পারেন না ৷ বাচ্চাদের স্কুলও বন্ধ ৷
এই রাস্তা পেরিয়েই এতদিন কর্মস্থলে যাতায়াত করেছেন পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী ডোরা জাম্মে ৷ তাঁর সংসার রয়েছে ৷ যে বাড়িতে ডোরার পরিবার থাকে, তার অবস্থা বেহাল ৷ ডোরার ইচ্ছা ছিল, বাড়িটা মেরামত করে একটু বাসযোগ্য করে তুলবেন ৷ এর জন্য গত চারবছর ধরে একটু একটু করে নিজের বেতনের টাকা জমাচ্ছিলেন তিনি ৷ তাঁর 4 বছরের সঞ্চয়, প্রায় 2 লক্ষ টাকা ৷ সেই টাকা দিয়ে বাড়ির কাজ ভালো মতোই হয়ে যেত ৷ কিন্তু, একেবারে শেষ মুহূর্তে নিজের মত বদলান ডোরা ৷ ঠিক করেন, নিজের পরিবারের জন্য বাড়ি নয়, বরং গ্রামের সকলের জন্য রাস্তা তৈরি করবেন তিনি ! যাতে শহরে যাতায়াত করতে কারও আর কোনও সমস্য়া না হয় ৷
সব মিলিয়ে 3 কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে হবে ৷ সেই কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ আদিবাসী গ্রামে হাজির হয়েছে পেল্লায় আর্থমুভার ৷ সেই সচল যন্ত্র দিয়ে পাহাড়ের পাথুরে শরীর খুঁড়ে তৈরি হচ্ছে সমান, পোক্ত রাস্তা ৷ প্রথম 2 কিলোমিটার অংশে সেই কাজ অনেকটাই সারা হয়ে গিয়েছে ৷ বাকি কাজও চলছে জোরকদমে ৷
আরও পড়ুন: আদর্শ জেঠিপুরা ! প্রত্যন্ত গ্রামে পরিস্রুত জল, রয়েছে সিসিটিভি-হাইটেক লাইব্রেরিও
ডোরার এই উদ্যোগে আনন্দের সঙ্গে সামিল হয়েছেন তাঁর স্বামী ৷ তরুণ এই দম্পতির এমন মানসিকতা ও উদ্যোগ মুগ্ধ করেছে এলাকাবাসীকে ৷ তাঁরা দু'জনকেই দু'হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন ৷ এখন প্রশ্ন হল, এসব দেখার পরও কি প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে ? দূরের এই আদিবাসী গ্রামে পৌঁছবে কি জরুরি ও প্রাপ্য সমস্ত সরকারি পরিষেবা ?