নয়াদিল্লি, 3 অক্টোবর: এজেন্ডা - 'বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা'র প্রতিবাদ ৷ দাবি - 100 দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে আটকে রাখা বকেয়া টাকা মেটাক কেন্দ্র ৷ তবে যন্তরমন্তরে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ডাকে তৃণমূলের ধরনা মঞ্চ যেন হয়ে উঠল লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রচার কর্মসূচি ৷ কুণাল ঘোষ থেকে শুরু করে মহুয়া মৈত্র, সায়নী ঘোষ, বীরবাবা হাঁসদা-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব রাজধানীতে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ৷
সোমবার রাজঘাটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের নীরব প্রতিবাদে 'পুলিশি সক্রিয়তা'র বিরুদ্ধে এ দিন তোপ দেগেছে তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ ধরনা মঞ্চ থেকে রাজঘাটের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দিল্লি পুলিশের কাছে ইন্ডিয়া জোটকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান ৷
কুণাল বলেন, "দিল্লি পুলিশ কাল ও আজ যা করেছে সেই নিয়ে বলছি, দেখুন আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনও শত্রুতা নেই ৷ আপনারা আপনাদের ডিউটি করছেন ৷ আপনাদের বাড়িতে যে সমস্যা রয়েছে, সেই নিয়েও এই তৃণমূল কংগ্রেস লড়ছে ৷ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে আপনাদেরও সমস্যা হয় ৷ এগুলির বিরুদ্ধেও লড়াই করছি আমরা ৷ চাকরি বাঁচাতে আপনারা আমাদের লাঠি মারুন ৷ কিন্তু ভোটের বাক্সে ভোটটা ইন্ডিয়া জোটকেই দেবেন ৷ এটাই হবে জবাব ৷"
কুণালের কথায়, "আমরা দিল্লিতে ঘুরতে আসিনি ৷ আমরা হকের পাওনা চাইতে দিল্লিতে এসেছি ৷ আমরা হিংসায় বিশ্বাস করি না ৷ আজ যত পুলিশ এখানে আছেন, ততগুলি ভোটই আমাদের দিকে দিন ৷ আমাদের কথা শুনে বাড়ির লোককে বলুন, এই দল সবার অধিকারের জন্য লড়ছে ৷"
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও আজ দিল্লির দরবারে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের এজেন্ডা স্পষ্ট করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কর্মীদের কাছে ৷ তাঁর অভিযোগ, যন্তরমন্তরে ধরনার অনুমতি থাকা সত্ত্বেও বাংলা থেকে আসা বহু নেতা-কর্মীকে গতকালের মতোই আজও ধরনায় যোগ দিতে দেওয়া হয়নি ৷ যাঁরা ধরনা মঞ্চের কাছে পৌঁছতে পারেননি, তাঁদের উদ্দেশে মহুয়ার আহ্বান, "রাজধানীর সবাইকে আপনারা জানান যে, কেন আমরা এখানে এসেছি ৷"
মহুয়ার কথায়, "আমরা ভিক্ষে করতে দিল্লিতে আসিনি ৷ নিজেদের হকের পাওনা চাইতে এসেছি ৷ যাঁদের পেটে তিন বেলা ভাত জোটে না, তাঁরাই 100 দিনের কাজ করেন ৷ সেই 6 হাজার 500 কোটি টাকা কেন্দ্র আটকে দিয়েছে ৷ মানুষ আগাম চাইছে না ৷ যে কাজ হয়ে গিয়েছে, সেই টাকা বন্ধ কেন রাখা হবে ? আবাস যোজনার সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা আটকে দিয়েছে ৷"
মহুয়া মৈত্র আরও বলেন, বিধবাদের 200 কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র ৷ বাংলার রাস্তার জন্য 700 কোটি টাকা আটকে রেখেছে ৷ মহুয়ার কথায়, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা ভারতকে দেখাচ্ছেন যে, মোদি ও অমিত শাহের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়ার সাহস কারও আছে ৷ অনেকে বলেন, মোদিজি সবকিছু ম্যানেজ করে নেবেন ৷ কিন্তু, আমাদের তো এতদিনেও ম্যানেজ করতে পারলেন না ৷" এ দিন ফের মণিপুরের প্রসঙ্গ টেনে মহুয়া বলেন, মণিপুর এখনও জ্বলছে ৷ হেলদোল নেই কেন্দ্রীয় সরকারের ৷
আরও পড়ুন: 'তদন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন বিচারপতি', হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে অভিষেক
এ দিন যন্তরমন্তরের ধরনা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী সায়নী ঘোষও ৷ তিনি বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন যে শুধু বাংলা নয়, দিল্লিতেও তাঁর ডাকে কাতারে কাতারে মানুষ আসতে পারেন ৷
সায়নী বলেন, "বঙ্গ বিজেপির প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত করেছে বাংলার মানুষ ৷ এটাই ওদের রাগ ৷ কোনও যোজনায় বাংলা কথাটা থাকলেই সেই টাকা আটকে দাও ৷ কারণ বাংলার মানুষ আমাদের ভোট দেয়নি ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিয়েছেন ৷"
সোমবার রাজঘাটে পুলিশ দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের হঠিয়ে দেওয়ার ঘটনার কথা বলতে গিয়ে সায়নী বলেন, "যদি মনে করেন মাথায় বাড়ি মেরে মাথা ফাটিয়ে দেবেন তা করুন, কিন্তু বাংলার ভাগ্য এতে বদলাতে পারবেন না ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের হিম্মত দেন, বাংলার জন্য লড়াই করার কথা বলেন ৷ আমরা কারওকে ভয় পাই না ৷" সায়নীর কথায়, "এটা শুধু ট্রেলার, পিকচার আভি বাকি হ্যায় ৷" এই আন্দোলনকে আরও জোরদার করা হবে বলে দাবি করেন যুব তৃণমূল নেত্রী ৷