নয়াদিল্লি, 24 সেপ্টেম্বর: সেনা বাহিনী থেকে অবসর নিয়েছি বেশ কয়েক বছর হল। বোমা-বন্দুক থেকে শুরু করে অন্য অস্ত্র এখন আমার অতীত। তবে ইটিভি ভারতের তরফে একে 47 নিয়ে লেখার সুযোগ পেয়ে ফিরে গেলাম সেই অতীতে। গোটা বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় রাইফেল একে 47-র প্রতি আমার ভালোবাসাও আবার ফিরে এল।
কর্মজীবনে এনএসজি এবং স্পেশাল ফোর্সে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছি। একটির সঙ্গে অন্যটির বিস্তর ফারাক। এনএসজিতে কাজ করার সময় হেকলার এবং কোচ এমপি 5 ছিল আমার প্রিয়। ক্লোজ কমব্যাটের ক্ষেত্রে এই ধরনের রাইফেল দারুণ কার্যকর। তবে একে 47-র সঙ্গে আমার পরিচয় স্পেশাল ফোর্সে এসে। কাশ্মীরে বহু বছর এই রাইফেলই ছিল আমার বিশ্বস্ত সঙ্গী।
ইতিহাস
⦁ একে 47-র পোশাকি নাম অ্যাভটোম্যাট কালাসনিকভ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার সৈনিক মিখাইল কালাসনিকভ এই রাইফেলটি তৈরি করেন। তাঁর নাম অনুসারেই রাইফেলের নাম রাখা হয়েছে। জার্মান সেনা বাহিনীর কাছে রাশিয়ার চেয়ে অনেক ভালো অস্ত্র আছে দেখে হতাশ হয়েছিলেন মিখাইল। ঠিক সেই প্রয়োজন থেকেই তিনি একে 47 তৈরি করেন।
⦁ সেনা জওয়ান হিসেবে কর্মজীবনের প্রথম দিকে ট্যাঙ্ক কমান্ডারের ভূমিকা পালন করতেন মিখাইল। একবার যুদ্ধক্ষেত্রে জখম হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন এই নতুন রাইফেল তৈরির কথা মনে হয় তাঁর।
⦁ নিজের অস্ত্রের ভাণ্ডারকে উন্নত করতে সে সময় একটি বিশেষ প্রকল্প চালাত রুশ সেনা বাহিনী। নতুন রাইফেল বা অন্য অস্ত্র কীভাবে তৈরি করা যায় তা জানতে তরুণদের থেকে নকশা নেওয়া হত। সেভাবেই মিখাইল নিজের রাইফেলের নকশা জমা দেন 1947 সালে। বছর দুয়েকের মধ্যে তা অনুমোদন পায়।
পৃথিবীর 106টি দেশ একে 47 রাইফেল ব্যবহার করে। সরকারি হিসেবে সংখ্যাটা অবশ্য 55। এই বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন এর থেকে নির্ভরযোগ্য রাইফেল আর খুব বেশি নেই। তাছাড়া ব্যবহার করাও সুবিধাজনক।
সহজ এবং সরল
⦁ যা ব্যবহার করা সহজ তার জনপ্রিয়তা সবসময়ই বেশি হয়। সেটা অস্ত্রও হতে পারে। আবার অন্য যে কোনও যন্ত্রও হতে পারে। এখানেই একে 47 বাকিদের হারিয়ে দিয়েছে। সহজে ব্যবহার করা যায়। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্রে বসেই এই রাইফেলটিকে সারিয় নেওয়া সম্ভব।
⦁ যে কোনও রাইফেলেরই বিভিন্ন মোড থাকে। 'সেফটি' মোড থেকে 'ফায়ার' মোডে নিয়ে গেলে তবে রাইফেল থেকে গুলি বেরিয়ে আসবে। যখন টানা গুলি চালানোর দরকার তখন 'অটো' মোডে নিয়ে যেতে হবে। এই কাজটা খুব সহজে হয় একে 47-এ। বাইরের আবহাওয়া যে রকমই হোক না কেন এই সিস্টেম ঠিকঠাকই কাজ করতে থাকে। অনেক রাইফেলে এই ব্যবস্থা শীতকালে কার্যত অচল হয়ে যায়।
ব্যবহারের সুবিধা
⦁ 100 থেকে 400 মিটারের মধ্যে থাকা টার্গেটকে নিশানা করা যায় এই রাইফেলের সাহায্যে।
⦁ বরফে ঢাকা পাহাড় হোক কিংবা গভীর অরণ্য-একে 47 ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। শহরের মধ্যে কোনও প্রয়োজন পড়লেও এই রাইফেলের উপর বাজি ধরা যেতে পারে।
স্থায়িত্ব
⦁ স্থায়িত্বের বিচারে একে 47 একটি আশীর্বাদ। যে কোনও আবহাওয়ায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
⦁ কোনও কারণে হাত থেকে পড়ে গেলেও ভেঙে যায় না।
⦁ পরিস্কার না করেও দীর্ঘদিন এই রাইফেল ব্যবহার করা যায়।
নির্ভরতা
⦁ এই রাইফেলে গুলি আছে তবু ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়া কার্যত অসম্ভব।
⦁ একটি গুলি কোনও কারণে আটকে গেলেও তেমন একটা ভাবনার কিছু নেই। সেই পরিস্থিতিতেও পরের গুলিটি সহজেই বেরিয়ে আসে।
তুলনায় সস্তা
এখন গোটা পৃথিবীতে যত রাইফেল তৈরি হয় তার মধ্যে সবচেয়ে সস্তা একে 47। মাত্র 100 মার্কিন ডলার খরচ করলেই কালো বাজারে সহজেই মিলবে একে 47।
আরও পড়ুন: কানাডায় জঙ্গিদের অর্থ জোগান দিচ্ছে পাকিস্তান, কড়া আক্রমণ বিদেশ মন্ত্রকের